নতুন করে শুরু করা দুটি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে বিপাকে পড়েছে কর্তৃপক্ষ।দুই প্রতিষ্ঠানে ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। এখন ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হবে। কিন্তু নিজস্ব ভবন তৈরি না হওয়ায় শিক্ষা কার্যক্রম শুরু নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
নগরের রূপাতলী হাউজিং এলাকা ও কাউনিয়া বিসিক শিল্প এলাকায় দুটি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ইতিমধ্যে বিদ্যালয় দুটির ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে।
বিদ্যালয় দুটির ভর্তি পরীক্ষার ফল গত মঙ্গলবার প্রকাশিত হয়েছে। কাল রোববার থেকে ভর্তি কার্যক্রম শুরু। ২৪০ জন করে মোট ৪৮০ জনকে ভর্তি করা হবে বিদ্যালয় দুটিতে।
বরিশাল শিক্ষা বিভাগ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, নতুন বিদ্যালয় দুটির শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. মাহবুবুর রহমান স্বাক্ষরিত একটি চিঠি গত ৯ ডিসেম্বর বরিশাল জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কাছে পৌঁছেছে। ওই চিঠিতে জিলা স্কুলের কলেজ ভবনে বিদ্যালয় দুটির শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ওই ভবন বর্তমানে ব্যবহার করছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। ফলে নতুন দুই বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম সেখানে শুরু করা যাচ্ছে না।
২০১০ সালে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর জন্য অস্থায়ীভাবে জিলা স্কুলের কলেজ ভবনগুলো বরাদ্দ দেওয়া হয়। সেই থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম এখানে চলে আসছে। বর্তমানে কর্ণকাঠি এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস হয়েছে। তবে সেখানে ভবন নির্মাণাধীন থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি বিভাগের শিক্ষা কার্যক্রম এখনো জিলা স্কুল ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করার জন্য জিলা স্কুলের তিনটি ভবন ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম চললেও জিলা স্কুলের ভবনগুলো এখনো খালি করা হয়নি।
সাবিনা ইয়াসমিন জানান, সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দুটি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে। প্রতিষ্ঠান দুটির নিজস্ব ভবন নির্মাণের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত জিলা স্কুলের ভবনে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ওই নির্দেশনার পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জিলা স্কুলের ভবন ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে ১৫ ও ২৭ ডিসেম্বর দুটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এখনো তার কোনো উত্তর দেয়নি। এ অবস্থায় নতুন দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছে।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এস এম ইমামুল হক বলেন, ‘জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়াই ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ভবন ছেড়ে দেওয়ার জন্য চিঠি দিয়েছেন। হুট করে ভবন ছেড়ে দিতে বলায় আমরা বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছি। মূল ক্যাম্পাসের দুটি একাডেমিক ভবনের মধ্যে একটিতে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বাকি ভবন এখনো নির্মাণাধীন। এই মুহূর্তে এই ক্যাম্পাস ছেড়ে দিলে চারটি বিভাগের শিক্ষার্থীরা কোথায় ক্লাস করবে? তা ছাড়া এ ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও কোনো নির্দেশনা দেয়নি।’
উপাচার্য বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ও বিদ্যালয় দুটিই বরিশালের শিক্ষার বিষয়। শিক্ষার্থীদের অনিশ্চয়তা নয়, এ ব্যাপারে আলোচনা করে অবশ্যই সমাধানের পথ বের করতে হবে।
যোগাযোগ করা হলে বরিশালের জেলা প্রশাসক ও সরকারি বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি গাজী সাইফুজ্জামান বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু জিলা স্কুলের ভবন ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশনা মানছে না বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এতে বিব্রতকর একটা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।