স্বামী-স্ত্রী-শ্যালিকা-কন্যা চালিত শিক্ষার্থীবিহীন এমপিওভুক্ত এক বিদ্যালয়ের গল্প - দৈনিকশিক্ষা

স্বামী-স্ত্রী-শ্যালিকা-কন্যা চালিত শিক্ষার্থীবিহীন এমপিওভুক্ত এক বিদ্যালয়ের গল্প

অলোক সাহা, ঝালকাঠি প্রতিনিধি |

জন্মের পর থেকে অদ্যাবধি বিদ্যালয়টিতে কোনও শিক্ষার্থী ছিল না। অথচ নিয়মিত এমপিওর টাকা তুলছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। স্কুলটির প্রতিষ্ঠাতা নিজেই একজন সহকারী শিক্ষক। আর তার স্ত্রী-শ্যালিকা ও কন্যার রয়েছেন স্কুলটিতে। দৈনিক শিক্ষার অনুসসন্ধানে এ তথ্য উঠে এসেছে।  

অনুসন্ধানে জানা যায়, ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার শিক্ষার্থীবিহীন এই এমপিওভুক্ত বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নিয়মিত এমপিওর টাকা উত্তোলন করছেন। উপজেলার মঠবাড়ি ইউনিয়নের পশ্চিম বাদুরতলা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়টিতে শিক্ষক ও কর্মচারী রয়েছেন আটজন। তাদের পেছনে সরকারের প্রতি বছর বেতন-ভাতা বাবদ প্রায় দেড়লাখ টাকা। 

অভিযোগ রয়েছে, বিদ্যালয়টিতে পাঠদান কার্যক্রম না থাকলেও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের ইএমআইএস সেলের কয়েকজনকে ম্যানেজ করে বছরের পর বছর চলছে বেতন-ভাতা উত্তোলন ও তা ভাগ বাটোয়ারা। শুধু তাই নয়, বিদ্যালয়টি অন্যের জায়গা দখল করে তৈরি করা হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।  

স্থানীয়রা জানায়, ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে নিজ বাড়ির আঙ্গিনায় বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন আবু বকর নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি। এরপর ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দে বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত হয়। স্থানীয়রা বিদ্যালয়টিকে ‘আবুর স্কুল’ নামেই চেনেন। আবু বকর বর্তমানে ওই বিদ্যালয়ে একজন সহকারী শিক্ষক। তার মেয়ে মুনমুন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, স্ত্রী নার্গিস বেগম অফিস সহকারী ও শ্যালিকা জাহানারা বেগম দপ্তরি। প্রতিষ্ঠার ৩৩ বছর পেরিয়ে গেলেও কোনদিন এই বিদ্যালয়ে পাঠদান করানো হয়নি। তবে কাগজে কলমে ভুয়া নাম দিয়ে ছাত্র ছাত্রী দেখানো হয়। আর  কর্মকর্তারা পরিদর্শনে আসলে, বছরে এক অথবা দুই দিন বিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি দেখা যায়। এ ছাড়া সারা বছরই বিদ্যালয়টি তালাবদ্ধ থাকে। 

সরেজমিনে গিয়ে রোববার (১৭ নভেম্বর) বেলা ১১টায় বিদ্যালয়টির অফিস ও শ্রেণিকক্ষে তালা ঝুলতে দেখা যায়। জাতীয় পতাকাটি অফিস কক্ষের বারান্দায় হেলানো অবস্থায় ছিলো। শ্রেণিকক্ষ গুলোতে ধুলাময় চেয়ার-টেবিল ও কিছু বেঞ্চ থাকলেও তা অনেকদিনে ব্যবহার করা হয়নি। 

স্থানীয় বাবলু হাওলাদার জানান, ‘আমার জন্মের পর থেকেই বিদ্যালয়টি দেখছি। তবে কোনদিন এখানে পাঠদান হতে দেখিনি। এ অনিয়মের বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে স্থানীয় মানুষ প্রতিবাদ করেছিল। কিন্তু প্রতিবাদ করা প্রত্যেকেই আবু ও তার ছেলেদের হামলার শিকার হয়েছেন। তাদের জড়ানো হয়েছে একাধিক মিথ্যা মামলায়। তাই এখন কেউ এ বিষয়ে কথা বলতে চান না অনেকেই।’  

বাবলুর সাথে কথা বলতে বলতেই বিদ্যালয়ের পেছনে থাকা বাড়ির ভেতর থেকে খালি পায়ে এলোমেলো অবস্থায় এসে হাজির হন আবু বকরের স্ত্রী অফিস সহকারি নার্গিস বেগম। এরপরেই আসেন বিদ্যালয়ে উপস্থিত হওয়া একমাত্র শিক্ষক অরুণা মৈত্র। তিনি কৃষি শিক্ষার শিক্ষক। বিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা কেউ আসেনি। আর অন্য শিক্ষকরা রাজাপুরে আছেন।’ 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক আখতারুজ্জামান বাচ্চু বলেন, ‘বিদ্যালয়টি থেকে অন্যত্র চলে যাওয়ার চেষ্টা করছি। স্থানীয় মানুষের সাথে বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতার দূরত্বের কারণেই শিক্ষার্থী পাওয়া যায় না।’ 

এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এমডি আবুল বাসার তালুকদার দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, ‘বিদ্যালয়টি আমি পরিদর্শন করেছি। চিঠি দিয়ে যাওয়ার পরেও মাত্র চার-পাঁচজন শিক্ষার্থী পেয়েছি।’ এ অনিয়মের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নিয়েছেন? এমন প্রশ্নে জবাবে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘দাদারে ওদের (শিক্ষক-কর্মচারী) পেটে লাথি মেরে কি লাভ। তবে ওদের বলেছি, আগামী জানুয়ারি থেকে তিন শ্রেণিতে যদি কমপক্ষে ৭৫ জন শিক্ষার্থী না থাকে, তাহলে সরকারি সুযোগ-সুবিধা বাতিলের সুপারিশ করবো।’

এ বিষয়ে ইউএনও মো. সোহাগ হাওলাদার বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ থাকায় উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা ইমরান শাহরিয়ারকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছিল। সেই কমিটি অনিয়মের সত্যতা পেয়ে বিদ্যালয়ের এমপিও বাতিলের সুপারিশ করে। এ ছাড়া বিদ্যালয়ের জমির বিষয়ে সম্প্রতি একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি যা তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ 

দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.018592834472656