শচীন কুমার রায়। বরিশালের সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজের অধ্যক্ষ। ৭ম বিসিএস দিয়ে চাকরিতে যোগ দেন ১৯৮৭ সালে। যোগদানের সময় সকল কাগজপত্র অনুযায়ী তার জন্ম তারিখ ১লা ফেব্রুয়ারি ১৯৫৮ সাল। এভাবে চলে আসছিল দীর্ঘদিন। হঠাৎ করে তার জন্ম তারিখ নিয়ে ঘটে তেলেসমাতি ঘটনা। অর্থাৎ তার বয়স ২ বছর কমে যায়। ২৭ বছর পর ২০১৪ সালে সহকারী অধ্যাপক থেকে সহযোগী অধ্যাপক হওয়ার পর জন্ম তারিখ নিয়ে এই কেলেঙ্কারি ঘটনা ধরা পড়ে। পদোন্নতি পাওয়া কাগজপত্রে দেখা যায়, তার জন্ম তারিখ ১লা ফেব্রুয়ারি ১৯৫৮ থেকে ২ বছর কমে হয়েছে ১লা ফেব্রুয়ারি ১৯৬০ সাল। এই ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর শিক্ষা ক্যাডার, যশোর শিক্ষা বোর্ড এমনকি বরিশালের ওই কলেজে চলছে তোলকালাম কাণ্ড।
এ বিষয়ে সচীন কুমার রায় বলেন, এটা স্যাটেল (মীমাংসিত) বিষয়। আরো ২৯ বছর আগেই এটা শেষ হয়ে গেছে। তিনি জানান, আমি চাকরিতে যোগদানের আগে বয়স পরিবর্তন করার আবেদন করি। সেখানে আমি ১৬ ধরনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র বোর্ডে জমা দেই। সেই কাগজপত্রের ভিত্তিতে বোর্ড আমার বয়স কমিয়েছে। বোর্ডের এই কাগজপত্রের ভিত্তিতে মন্ত্রণালয় আমার বয়স কমিয়েছে। এটা নিয়ে নতুন বিতর্ক হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বয়স কমানো যৌক্তিকতা তুলে ধরে তিনি বলেন, নবম শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশন করার সময় অফিস সহকারী ভুলে আমার বয়স দুই বছর বেশি লেখে দেয়। পরে আমার পিতা বিষয়টি সংশোধন করার উদ্যোগ নেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তার বয়স আগেই কমানো হলেও মন্ত্রণালয় তা সংশোধন করেছে সম্প্রতি। গেল বছর অবসরে যাওয়া শিক্ষামন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব যার স্ত্রী সচীন কুমারের চাকরির ব্যাচমেট। সেই সূত্র ধরে তিনি যখন ভারপ্রাপ্ত সচিবের দায়িত্ব পান তখন তার ফাইলটি অনুমোদন করিয়ে দেন। এরপর থেকে এটি নিয়ে মন্ত্রণালয়, মাউশি এমনকি বরিশালের সৈয়দ হাতেম আলী কলেজে তোলপাড় শুরু হয়।
এ ব্যাপারে যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মোহাম্মদ আবদুল আলিম বলেন, এটা তো অনেক আগের ঘটনা। ওই সময় যারা তার বয়স সংশোধিত করেছিল তারাই এর প্রকৃত ব্যাখ্যা দিতে পারবেন। তবে বয়স কমানোর ব্যাপারে বোর্ড সব সময় সর্বোচ্চ সতর্ক থাকে। হাজার হাজার আবেদন থেকে যথেষ্ট প্রমাণ থাকার পরও একটি দুটি আবেদনের বয়স হয়তো কমে। কারও বসয় যদি ১ থেকে ১১ মাসের মধ্যে কমানোর আবেদন করে। আর চাকরিতে যোগদান করার পর কারও বয়স কমানোর ইতিহাস আমার জানা নেই।
আর যশোর বোর্ডের সচিব ড. মোল্লা আমির হোসেন বলেন, এটা নিয়ে বরিশালে অনেক কিছু হচ্ছে বলে আমরা শুনেছি। বোর্ডের এই মুহূর্তে কিছু করার নেই। তবে মন্ত্রণালয় বা আদালত যদি তদন্ত করতে বলে আমরা সেই মোতাবেক তদন্ত করতে প্রস্তুত।
একাধিক বোর্ড চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকারি চাকরিতে এফিডেভিট (বয়স কমানোর দালিলিক প্রমাণ) গ্রহণযোগ্য নয়। এটা জেনে তিনি চাকরিতে যোগদানের পর বয়স কমিয়েছেন। অর্থাৎ তিনি অতিরিক্ত আরো দুই বছর চাকরি করতে চান। এ ছাড়া তিনি যে প্রক্রিয়ায় বয়স কমিয়েছেন পুরোটাই সন্দেহজনক। প্রথমত এসএসসি থেকে এইচএসসি পর্যন্ত বোর্ড একজন শিক্ষার্থীর বয়স নির্ধারণ করে ১৪ থেকে ২০ বছর। এর মধ্যে কেউ যদি বয়স কমানোর আবেদন করে সেখানে র্স্বোচ্চ ১ থেকে ১১ মাস পর্যন্ত কমানো হয়। এর বেশি হলে সকল কাগজপত্র থাকার পরও বাতিল বলে ধরে নেয়া হয়। দ্বিতীয়ত, ওই কর্মকর্তা এসএসসি, এইচএসসি, স্নাতক পাস করার পর বিসিএস পরীক্ষা অংশগ্রহণ করেন এবং চাকরিতে যোগদান করেন। বয়স কমাতে এই দীর্ঘসময় লাগার কথা নয়। তাছাড়া চাকরিতে এফিডেভিট শর্ত জুড়ে দেয়া ছিল। তৃতীয়ত, তার বয়স কমার পর তা শিক্ষামন্ত্রণালয়, হিসাব রক্ষক (এজি) অফিস তা গ্রহণ করতে হবে। তা হয়েছে কী আমাদের জানা নেই। সাধারণত এই ধরনের ঘটনা বা বয়স কমানো কখনও এজি অফিস গ্রহণ করে না। সমস্যা শুধু এখানেই নয়, তিনি যখন অবসরে যাবেন তখন তার বয়স কোনটা ধরবে? ১৯৫৮ নাকি ১৯৬০।