চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’ পদ সৃষ্টি করে সেই পদে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরীকে নিয়োগ দেওয়ার সুপারিশ করেছে এসংক্রান্ত একটি কমিটি, যে কমিটির প্রধান উপাচার্য নিজেই। বৃহস্পতিবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) আরেক বৈঠকে এই সুপারিশ চূড়ান্ত করে সিন্ডিকেটের অনুমোদনের জন্য পাঠানোর কথা রয়েছে।
২০১৭ সালের ২৭ আগস্ট চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের ৫১০তম সভায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গৌরবময় জীবন ও কীর্তি নিয়ে গবেষণা ও তাঁর স্মৃতি সংরক্ষণার্থে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’ সৃষ্টি ও প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত হয়।
এ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা প্রণয়নের জন্য উপাচার্যের নেতৃত্বে ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’ নির্বাহী কমিটি গঠিত হয়। গত ৩ জানুয়ারি এই কমিটির প্রথম সভায় পদ সৃষ্টি ও নীতিমালা অনুমোদন এবং চার বছরের জন্য উপাচার্যকে ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’ পদে নিয়োগ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়।
সভাটি শুরু হয়েছিল উপাচার্যের সভাপতিত্বে। তবে ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’ পদে নিয়োগের সুপারিশ নিয়ে ‘আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে কমিটির সদস্যগণের অনুরোধে উপাচার্য মহোদয় সভাকক্ষ ত্যাগ করে সভার কার্যক্রমে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকেন’—ওই সভার উপাচার্য স্বাক্ষরিত কার্যবিবরণীতে এ রকমই লেখা রয়েছে। এ সময় কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মো. সেকান্দর চৌধুরী সভাপতিত্ব করেন।
সভার কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছে, বঙ্গবন্ধুর “জীবন, রাজনীতি, আদর্শ ও কীর্তি নিয়ে একাধারে গবেষণা ও লেখালেখি করায় বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী এবং এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরীকে (যিনি বর্তমানে ডেপুটেশনে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে কর্মরত আছেন) যোগদানের তারিখ থেকে চার বছরের জন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’ পদে নিয়োগ প্রদানের জন্য কমিটি সর্বসম্মতিক্রমে সুপারিশ করছে।”
বঙ্গবন্ধু চেয়ার পদে নিয়োগের নীতিমালার এক জায়গায় বলা রয়েছে, বঙ্গবন্ধু চেয়ার পদে নিয়োগপ্রাপ্ত অধ্যাপক এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত অধ্যাপকগণের অন্তর্ভুক্ত হবেন না এবং পদাধিকারবলে একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য হতে পারবেন না। তিনি কোনো প্রশাসনিক পর্ষদের সদস্য হবেন না এবং কোনো প্রশাসনিক পদের দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না।
নীতিমালায় এমন কথা থাকলেও একই অনুচ্ছেদে যোগ করা হয়েছে, ‘তবে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত কোনো অধ্যাপক এ পদে নিয়োগ পেলে তিনি তাঁর মূল পদের জন্য নিয়মানুযায়ী প্রযোজ্য সকল অধিকার ও সুযোগ-সুবিধাদি ভোগ করতে পারবেন।’
আরেক জায়গায় বলা হয়েছে, “এ বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত কোনো অধ্যাপককে এ পদের জন্য মনোনীত করা হলে তিনি নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত হিসাবে ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’ পদের দায়িত্ব পালন করবেন। মূলত গবেষণা করাই এ পদের দায়িত্ব বিধায় এলপিআর ভোগরত অবস্থায়ও এ দায়িত্ব পালন করতে পারবেন।”
এ পদে এ বিশ্ববিদ্যালয়েরই বিশেষ কারো নিয়োগের পথ খোলা রাখার জন্যই নীতিমালায় এসব ব্যতিক্রম রাখা হয়েছে বলে মনে করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক।
গতকাল থেকে ফোনে যোগাযোগ করা হলে উপাচার্য বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার কমিটি করা হয়েছে, এ বিষয়ে নীতিমালাও হয়েছে। নিয়োগের ব্যাপারে আগামী সিন্ডিকেটে সিদ্ধান্ত হবে।’
এ পদে নিয়োগের জন্য কোনো আবেদন চাওয়া হয়েছে কি না অথবা কারো নাম সুপারিশ করা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এসব বিষয় কমিটির বিবেচনাধীন আছে। কমিটির সিদ্ধান্তের পর বলতে পারব। এখনো চূড়ান্ত কিছু হয়নি।’