অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি, টাইমস হায়ার এডুকেশন ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র্যাংকিং-এর তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি। ২৬ জন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ৩০ জন আন্তর্জাতিক নেতা, ৫০ জন নোবেল বিজয়ী এবং ১২জন অলিম্পিক মেডেল বিজয়ী এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড শহরে অবস্থিত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়। ইংরেজি ভাষাভাষী জগতের সবচেয়ে পুরাতন বিশ্ববিদ্যালয়। ধারণা করা হয় ১১০০ শতাব্দীর শেষ দিকে অথবা ১২০০ শতাব্দীর প্রথমে এই বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা শুরু করে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমানে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অন্যতম হিসেবে সর্বস্বীকৃত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বললে যেমন একটি প্রতিষ্ঠানের অবয়ব ফুটে ওঠে, অক্সফোর্ড তেমনটি নয়। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রয়েছে ৩৮টি কলেজ। প্রতিটি কলেজই নিজস্ব ইতিহাস, ঐতিহ্য ও গৌরব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা এখন ২২ হাজার। এদের মধ্যে স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থী ১১ হাজার ৭১০ এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ১০ হাজার ৩২৭। বিদেশি শিক্ষার্থীও নেহাত কম নয়। বিশ্বের ১৪০টি দেশের প্রায় আট হাজার বিদেশি শিক্ষার্থী সেখানে পড়াশোনা করেন। এর মধ্যে বাংলাদেশের শিক্ষাথী ২০ জন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কলেজে গ্রন্থাগারের সংখ্যা প্রায় ১০০। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাফ ১২ হাজার ৫১০ জন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট খরচের ২৩ শতাংশ জোগান দেয় ‘হায়ার এডুকেশন ফান্ডিং কাউন্সিল ফর ইংল্যান্ড’। শিক্ষার্থীদের বেতন ও ফি থেকে আসে ১৫ শতাংশ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসা ও বিনিয়োগ থেকে আসে আয়ের ২১ শতাংশ। বাকি প্রায় ৪১ শতাংশ আয় আসে বাইরের গবেষণা ও অনুদান থেকে।
অক্সফার্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সঠিক তারিখ জানা না গেলেও অনুমান করা হয় ১১ শতাব্দীর প্রথম থেকেই অক্সফোর্ড শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব ছিল। তবে ১১৬৭ সালে রাজা ২য় হেনরি ইংরেজ ছাত্রদের প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করলে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করে। প্রথমদিকে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মতত্ত্ব, আইন, চিকিত্সাবিজ্ঞান ও দর্শন বিভাগ ছিল। প্রথমদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজের কোন ভবন ছিল না, ভাড়া করা হল অথবা চার্চে ক্লাস নেয়া হত। ১৩৫৫ সালে রাজার এক আদেশবলে বিশ্ববিদ্যালয়কে অক্সফোর্ড শহরে স্থান দেয়া হয়। ইংল্যান্ডের গৃহযুদ্ধের সময় বিশ্ববিদ্যালয়টি রাজার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে কিন্তু পরবর্তীতে রাজার ২য় পুত্রের সাথে সংঘাতে জড়িয়ে যায়। ১৯০০ শতাব্দীতে বিশ্ববিদ্যালয়টির কলেবর বৃদ্ধি করা হয়। ১৮৮৭ সালে প্রথম মহিলা কলেজ লেডি মার্গারেট হল প্রতিষ্ঠিত হয়।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ৩৮টি কলেজ এবং ৭টি পিপিএইচএস-এর সমন্বয়ে গঠিত। এদের প্রতিটি স্বতন্ত্রভাবে পরিচালিত হয়। সকল ছাত্রকে এদের যেকোন একটির সাথে যুক্ত থাকতে হয়। তবে পরীক্ষা, গবেষণাগার এবং কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পরিচালনা করে। প্রতিটি কলেজে সাধারণত একটি ডাইনিং হল, প্রার্থনা কেন্দ্র, লাইব্রেরি, তিনটি কমন রুম এবং ২০০-৪০০ ছাত্রের থাকার স্থান থাকে। কলেজগুলোর ভর্তি প্রক্রিয়া আলাদা হলেও একটি গ্রহণযোগ্য মান ধরে রাখা হয়। বিশ্বজুড়ে সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় অক্সফোর্ডের অবস্থান সব সময় শীর্ষে কখনো প্রথম, কখনোবা দ্বিতীয় স্থানে। গত বছর টাইমস গুড ইউনিভার্সিটি গাইডে বলা হয়েছে, এক দশক ধরে ব্রিটেনে শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে অক্সফার্ড।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বহু বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব শিক্ষা লাভ করেছেন। এ পর্যন্ত কমপক্ষে একাধিক জন ইংরেজ রাজা, ৮ জন বিদেশি রাজা, ৫০ জন নোবেল পুরষ্কার বিজয়ী, ২৬ জন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী, ২৮ জন বিদেশি প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী, ৭ জন সেইন্ট বা সাধু, ১৮ জন কার্ডিনাল ও একজন পোপ এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। এদের মধ্যে রয়েছেন— জন ওয়েজলি, অস্কার ওয়াইল্ড, সেসিল রোডস, এডমান্ড হ্যালি, স্টিফেন হকিং, টিম বার্নার্স-লি, হিউ গ্রান্ট, রুপার্ট মার্ডক, মার্গারেট থ্যাচার প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ। রয়েছেন ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও লেবার পার্টির নেতা ক্লেমেন্ট অ্যাটলি, পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো, জুলফিকার আলী ভুট্টো, সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার, ডেভিড ক্যামেরন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টন, অস্ট্রেলিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম ফ্রেজার, ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং, ইন্দিরা গান্ধী। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ১ হাজার ৪৩৭ জন, চীনের ৯২০, জার্মানির ৮৩০, কানার ৪০৩, ভারতের ৩৭৩, ইতালির ৩৩৩, অস্ট্রেলিয়ার ৩০৩, ফ্যান্সের ২৬৭, সিঙ্গাপুরের ২৬৭, আয়ারল্যান্ডের ২২৯, বাংলাদেশের ২০ শিক্ষার্থী পড়ছে।