খুলনার ডুমুরিয়ায় অনিয়ম অব্যবস্থাপনার মধ্যে চলছে সমাজসেবা অধিদপ্তর পরিচালিত সরকারি ক্যাপিটেশন গ্রান্ট প্রাপ্ত বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামে এতিমখানা।
ডুমুরিয়া উপজেলায় আলিয়া মাদ্রাসা, কওমী মাদ্রাসা ও লিল্লাহ বোর্ডিং এর নামে ১২টি এতিমখানার টাকা হরিলুট চলছে। অন্যদিকে গত ২০১৬-১৭ অর্থ বছরের ২ কিস্তির ক্যাপিটেশন গ্রান্টপ্রাপ্ত এতিমখানার অর্থ বিভিন্ন অজুহাতে রহস্যজনকভাবে আটকে রেখেছেন উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা। এসব এতিমখানার তত্ত্বাবধায়কবৃন্দ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার অফিসে দেন-দরবার করেও টাকা তুলছে পারছেন না বলে তাদের অভিযোগ।
উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ডুমুরিয়া সাজিয়াড়া শামসুল উলুম এতিমখানা ও লিল্লাহ বোর্ডিং (খুলনা- ৩৪৫/৮৫) ২৫ জন নিবাসীর অনুকূলে ৩ লাখ টাকা, মধুগ্রাম ইসলামিয়া আলিয়া মাদ্রাসা লিল্লাহ বোর্ডিং ও এতিমখানা (খুলনা-৫৬০/৯৪) ৯ জন নিবাসীর অনুকূলে ১ লাখ ৮ হাজার টাকা, খলশি লিল্লাহ বোর্ডিং ও এতিমখানা (খুলনা-১১১১/০২) ১০জন নিবাসীর অনুকূলে ১লাখ ২০ হাজার টাকা, ডুমুরিয়া শাহ রফিকুজ্জামান এতিমখানা ও লিল্লাহ বোর্ডিং (খুলনা-৪৬০/৯৬) ৮ জন নিবাসীর অনুকূলে ৯৬ হাজার টাকা, হযরত শেখ শাহ আফজাল (রহ:) শিশুসদন কমপ্লেক্স ৬ জন নিবাসীর অনুকূলে ৭২ হাজার টাকা, উলা মজিদিয়া এতিমখানা ও লিল্লাহ বোর্ডিং (খুলনা-৪৭৩/৯৬) ৬ জন নিবাসীর অনুকূলে ৭২ হাজার টাকা, সেনপাড়া বাহরুল উলুম দাখিল মাদ্রাসা (খুলনা-১০৭২/০২) ৯ জন নিবাসীর অনুকূলে ১লাখ ৮ হাজার টাকা, আন্দুলিয়া কাদেরিয়া দাখিল মাদ্রাসা ও এতিমখানা (খুলনা-৪৪৬/৫৫) ১০জন নিবাসীর অনুকূলে ১লাখ ২০ হাজার টাকা, খরসা কেকেকেবি গাউসুল আযম এতিমখানা (খুলনা-১৪০২/১০) ৪ জন নিবাসীর অনুকূলে ১লাখ ৮ হাজার টাকা, শলুয়া মদিনাতুল উলুম মোহাম্মাদিয়া এতিমখানা, শানতলা, (খুলনা-১৪০৯/১০) ১৯ জন নিবাসীর অনুকূলে ১লাখ ২৮ হাজার টাকা, থুকড়া ইসলামিয়া ওয়াজেদিয়া দাখিল মাদ্রাসা ও এতিমখানা (খুলনা-৪৪৪/৯৫) ৩ জন নিবাসীর অনুকূলে ৩৬ হাজার টাকা, ডুমুরিয়া হাজী জয়নুল আবেদিন এতিমখানা (খুলনা-১৫৭১/১৬) ২ জন নিবাসীর অনুকূলে ২৪ হাজার টাকা ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ক্যাপিটেশন গ্রান্ট বরাদ্ধ পেয়েছেন।
জুলাই- ডিসেম্বর’১৬ এবং জানুয়ারি- জুন’১৭ মাসে পৃথকভাবে ২ কিস্তিতে ১২ লাখ ৩২ হাজার টাকা সরকার প্রদান করেন। কিন্তু উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা এতিমখানার বিল ভাউচার ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা নিয়ে সমুদয় টাকা উপজেলা তহবিলে জমা রেখে বিভিন্ন তালবাহানা করছেন।
অপরদিকে সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, কওমী মাদ্রাসার কয়েকটি এতিমখানা স্বাভাবিকভাবে পরিচালনা করলেও অন্যান্য এতিমখানাগুলোতে চলছে হরিলুট। এখানে প্রকৃত এতিম প্রতিপালিত হয় না। সমাজসেবা অফিসে জমাকৃত ভাউচারে পোশাক, মাছ, মাংস, ডিম পর্যাপ্ত খাবার পরিবেশনের কথা উল্লেখ করলেও বাস্তবে তা দেয়া হয়না। রমজান মাস, গ্রীষ্মকাল, ঈদ ও অন্যান্য ছুটিতে এসব এতিমখানাগুলো ছুটি দিয়ে নিবাসীদের বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয়। এতিমখানার নিবাসীর সংখ্যার ৫০ শতাংশ অর্থ সরকার প্রদান করেন। অথচ সরকার নির্ধারিত ক্যাপিটেশন গ্রান্টপ্রাপ্ত নিবাসীও এতিমখানাগুলোতে সরেজমিনে দেখা যায়নি।
অনেক এতিমখানার কমিটিও হালনাগাদ নেই। এসব অভিযোগের সুযোগ নিয়ে বাধ সেধে বসে আছেন উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা। তিনি দুই কিস্তির সমূদয় টাকা উপজেলা তহবিলে জমা করে আটকে দিয়েছেন। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে আকস্মিক পরিদর্শনে গিয়ে অনিয়ম দেখে এতিমখানা পরিচালকদের বাঁকা আঙুল দেখিয়ে বসে আছেন। বিপাকে পড়েছেন এতিমখানা পরিচালকবৃন্দ। নিজেদের অনিয়মের কারণে জোর গলায় কিছু বলতেও পারছেন না আবার বরাদ্ধের অর্থও পাচ্ছেন না। ফলে তারা অফিসের সহকারীদের সাথে দরকষাকষি চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অনেকে জানান।
মধুগ্রাম ইসলামিয়া আলিয়া মাদ্রাসা লিল্লাহ বোর্ডিং ও এতিমখানা (খুলনা-৫৬০/৯৪) এর তত্ত্বাবধায়ক মাওলানা মহিবুর রহমান বলেন, ‘আমার প্রতিষ্ঠানে ৯ জন নিবাসী থাকে তাদের জন্য ২ কিস্তির বরাদ্ধ ১ লাখ ৮ হাজার টাকা এখনও পাইনি। তবে তাড়াতাড়ি পেয়ে যাব।’ সমাজসেবা অফিসে কোন টাকা দিতে হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন,‘ ভাই মোবাইলে সব বলা সম্ভব না।
হাতে গোনা দু’একটি এতিমখানা ছাড়া অধিকাংশ এতিমখানায় মানসম্মত খাবার, পোষাক সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক সরবরাহ করা হয়না। কয়েকটি এতিমখানা কর্তৃপক্ষের অসাধু ব্যক্তি প্রতি বছর সরকারি অনুদান নেয়ার সময় দাপ্তরিক বিভিন্ন খরচের অজুহাত মোটা অংকের টাকা আত্মসাৎ করে থাকেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
ঘুষ দেয়ার শর্তে টাকা ছাড় করার অভিযোগ ও টাকা দেয়ার বিলম্বের কারণ জানতে চাইলে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা খান আনিচুর রহমান বলেন, এতিমখানা গুলোতে হাল নাগাদ কমিটি অনুমোদন না থাকায় ঐ সকল প্রতিষ্ঠানে চেক ছাড়তে দেরি হচ্ছে। আর ঘুষ বা অনৈতিক সুবিধা গ্রহণের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তিনি আরও বলেন, এতিমদের জন্য বরাদ্দ অনুদান থেকে ঘুষ নিতে হবে এমন অধ:পতন আমার হয়নি।
খুলনা জেলা সমাজ সেবা দপ্তরের উপ পরিচালক সুকান্ত সরকার বলেন, কোন এতিমখানায় এতিম নেই। অথচ গ্রান্ট নেয়া হচ্ছে। আর যদি আমার দপ্তরের কোন কর্মচারি বা কর্মকর্তা অনৈতিক সুবিধা দাবি করছে এমন অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেব।