অন্তরে ইনক্রিমেন্ট ও হৃদয়ে  জাতীয়করণ - দৈনিকশিক্ষা

অন্তরে ইনক্রিমেন্ট ও হৃদয়ে জাতীয়করণ

অধ্যক্ষ মুজম্মিল আলী |

স্কুল-কলেজ একত্রে জাতীয়করণ নিয়ে ইদানিং বিস্তর লেখালেখি আর বলাবলি । এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের এ নিয়ে উচ্ছ্বাসের অন্ত নেই । তাদের অতি উৎসাহ দেখে অনেকে মনে করে- জাতীয়করণে হয়ত শিক্ষকদের লাভ সর্বাপেক্ষা বেশী । এতে করে তাদের চাকরীটা সরকারি হয়ে যায় । এ তো বটে । কিন্তু, এ অতি সংকীর্ণ এক ধারণা মাত্র । যারা তাই মনে করে, তারা সব স্কুল-কলেজ যাতে এক সাথে জাতীয়করণ না হয় – সে জন্য মরিয়া হয়ে তৎপর । তারা সেটুকু মোটেও উপলব্ধি করে না যে, জাতির বৃহত্তর স্বার্থে বর্তমান সময়ে স্কুল-কলেজ জাতীয়করণ করা অপরিহার্য একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে ।

কেন জানিনে,  একটি শ্রেণি খুব বেশী শিক্ষক বিদ্বেষী মনোভাব পোষণ করে থাকে । আর যাই হোক, শিক্ষকদের মান মর্যাদা এদের সহ্য হয় না ।

যুগে যুগে শিক্ষকদের মান মর্যাদা সবার ওপরে ছিল । এখনো দুনিয়ার প্রায় সকল দেশে আছে। কেবল আমাদের দেশটাতে কী যেন কী হয়েছে ? অনেকে শিক্ষকদের তীর্যক চোখে দেখতে পছন্দ করে ।

‘বেসরকারি’ বলে দেশের ৯৮শতাংশ শিক্ষকদের প্রতি রাষ্ট্র ও জাতির  প্রচ্ছন্ন অবহেলা । সরকার এমপিও শিক্ষকদের পুরো বেতন স্কেল সহ অনেক কিছু দিয়ে ও কেবল জাতীয়করণ করার ভয়ে ‘বেসরকারি’ শব্দটি জিইয়ে রেখেছে । তারা এখন শিক্ষক-কর্মচারীদের যেটুকু দেয় , ইচ্ছে করলে তার ভিত্তিতেই ‘বেসরকারি’ শব্দ থেকে বেদরকারি ‘বে’ উপসর্গটি বিদেয় করে দিতে পারে । বেসরকারি বলে অনেকেই শিক্ষকদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য ভেবে থাকে এবং এ কারণে শিক্ষকদের অনেকে ও হীনমন্যতায় ভোগে থাকেন । বেসরকারি স্কুল-কলেজ এবং তাদের শিক্ষকগণ যতই মান সম্মত হন না কেন , তাদের প্রতি সাধারণের ক্ষেত্র বিশেষ নেতিবাচক ধারণা সচরাচর থাকে। সরকার যেখানে এতটুকু দিয়ে থাকে , সেখানে স্কুল-কলেজ জাতীয়করণে কী আর এমন খরচ পড়ে ? শিক্ষা ও শিক্ষক বান্ধব সাবেক সচিব এনআই খান স্যার তো সে হিসেবটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রিকে দেখিয়ে দিয়ে গেছেন। কারো হিসেবে তো আর এ খরচটি হাজার কোটি টাকার ওপরে যায় না । এক হাজার কোটি টাকা আমাদের জাতীয় বাজেটের কত শতাংশই বা হয় ?

বেসরকারি শিক্ষকদের কারো কারো এমপিও নেই । কারো নিজের দূরে থাক , প্রতিষ্ঠানের পর্যন্ত এমপিও নেই । বছরের পর বছর এ জাতীয় প্রতিষ্ঠান বিনে টাকায় টিকে থাকে কী করে ? অনেক বছর ধরে  বিনে বেতনে এ জাতীয় শিক্ষক পরিবার চলে কী করে ?   আইসিটি শিক্ষকদের কষ্টের কথা শুনলে যে কারো মনে কষ্ট আসে । অনুরুপ উৎপাদন, ব্যবস্থাপনা ও বিপনন শিক্ষকদের কষ্টের সীমা নেই । শাখা শিক্ষকদের ও মনের দুঃখটা কে বুঝে ? আমাদের কেবল স্বাস্থ্য , যোগাযোগ ও প্রতিরক্ষা ছাড়া অন্য সব উন্নয়ন কাজ বাদ দিয়ে হলেও শিক্ষকদের কষ্টটুকু লাঘব করা একান্ত অপরিহার্য । অস্বীকার করার উপায় নেই, দেশের জনসংখ্যাকে দক্ষ মানব শক্তিতে রুপান্তর করতে পারেন একমাত্র শিক্ষক । আমরা যদি আগামী প্রজন্মটিকে দক্ষ মানব শক্তিতে রুপান্তর করতে পারি, তাহলে জাতীয় উন্নয়নের  চাকাগুলো আপনা থেকে সচল হয়ে যায় । সে চাকা আর কোনদিন পশ্চাদগামী হবার ভয় থাকে না ।

বর্তমান সময়টি কেবল এক সাথে স্কুল-কলেজ জাতীয়করণের দিকেই ইঙ্গিত দিয়ে যায় ।চারদিকে জাতীয়করণের আলোচনা । আমাদের জাতির জনকের সময়ে প্রাথমিক শিক্ষাকে জাতীয়করণের যে তাগিদ ছিল, সেটি তিনি দ্রুত উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন । আমাদের ও আজ সেটি উপলব্ধি করবার তাগিদ কেবলি জোরদার হচ্ছে । শিক্ষার দ্বিতীয় স্তরটি জাতীয়করণের সময় আমরা পেছনে ফেলে এসেছি ।

এক সময় আমরা বিনামূল্যে পাঠ্য বইয়ের কথা কল্পনা ও করিনি । উপবৃত্তির ধারণা কারো মাথায় কোনদিনও ছিল না । গ্রামের স্কুলে দ্বিতল কিংবা তিতল ভবন দুরে থাক, পাকা ঘরের কথা ভাবতে কষ্ট হতো । গ্রামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পর্যন্ত আজ ডিজিটাল মাল্টিমিডিয়া শ্রেণি কক্ষ । সে সব আমাদের সরকারের নিজস্ব অর্জন । সে তুলনায় সব স্কুল-কলেজ একত্রে জাতীয়করণ করা দুঃসাধ্য কোন কাজ নয় ।

আইসিটি’র নন এমপিও একেক জন শিক্ষকের দেশকে এগিয়ে নেবার প্রত্যয় চোখে-মুখে । বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গঠনে ঝাঁপিয়ে পড়বার আগেই হতাশা গ্রাস করে বসেছে তাদের । যারা শিক্ষকদের কল্যাণ চায় না, তাদের কাছে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা এক অতি তুচ্ছ বিষয় ।

শিক্ষা ব্যয় যে কোন দেশে শ্রেষ্ঠ বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচনা করা হয় । আমাদের দেশে কর্তা ব্যক্তিগণ শিক্ষা ব্যয়কে অপচয় মনে করে থাকেন কীনা-কে জানে ? না হয় তারা এমপিও শিক্ষকদের ইনক্রিমেন্ট দেয় না কেন ?  স্কুল-কলেজ জাতীয়করণে তারা কেন সরকারকে নিরুৎসাহিত করে  ?

ইনক্রিমেন্ট যে কোন পেশাজীবি মানুষের মৌলিক অধিকার । বিশেষ করে শিক্ষকদের জন্য সেটি সময় মত প্রদান করা শিক্ষা ও শিক্ষকের জন্য মর্যাদা প্রদর্শনের এক অপার সুযোগ । সে সুযোগটি আমাদের কর্তৃপক্ষ কাজে লাগাতে চায় না ।

তারা শিক্ষকদের বঞ্চিত রাখতে পছন্দ করে । শিক্ষকদের বৈশাখি  ভাতা দিতে জোর ধরে তাদের।   এটি ও শিক্ষকদের একান্ত ন্যায্য পাওনা ।

শিক্ষকদের ন্যায্য দাবীর পাল্লা আজ অনেক ভারী । এর ভার আর বাড়ানো সমীচিন হবে না । সব স্কুল-কলেজ একত্রে জাতীয়করণ করলে সকল দায় দেনা এক সাথে চুকে যায় । বিশ্ব আমাদের নানা মানদন্ডে মূল্যায়ন করে । শিক্ষকদের মান মর্যাদা অবনমতি রেখে আমরা বিশ্ববাসীর কাছে কী মর্যাদা প্রত্যাশা করতে পারি ? বাংলাদেশ এগিয়েছে অনেক । কেবল শিক্ষকদের পিছিয়ে রাখার দায়ে আবার একদিন আমাদের পিছিয়ে পড়তে হবে । এমনিতেই আমাদের নীতি, নৈতিকতা ও মূল্যবোধে আমরা এখন অন্য অনেকের চেয়ে বহু গুণ পিছিয়ে । আমরা সে দীনতা কাটিয়ে চির স্থায়ী মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত হতে চাই ।

[ মুজম্মিল আলী: অধ্যক্ষ, চরিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, কানাইঘাট, সিলেট ও দৈনিকশিক্ষার নিজস্ব সংবাদ বিশ্লেষক।]

দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.007343053817749