চাকরির আবেদনের সময় শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ ও জাতীয় পরিচয়পত্রের অনুলিপিসহ প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্রই জমা দিয়েছিলেন ‘নূরুন নবী’। তবে সেগুলোর কোনোটিই তার নিজের নয়। এমনকি নামটা পর্যন্ত ধার করা! এই ছদ্ম পরিচয়ে ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানটিতে চাকরিও হয় তার। বছরখানেক চাকরি করার পর তিনি সুযোগ বুঝে প্রতিষ্ঠানের মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়ে চম্পট দেন। তদন্তে নেমে পুলিশ পায় প্রকৃত নূরুন নবীকে, যিনি ঘটনার বিষয়ে কিছুই জানেন না। এরপর বেরিয়ে আসে নেপথ্যের কাহিনী। জানা যায়, প্রতারকের আসল নাম সোহেল।
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ঢাকা মহানগর অঞ্চলের বিশেষ পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদ বলেন, অভিনব কৌশলের আশ্রয় নিয়েছিলেন প্রতারক সোহেল। ভেবেছিলেন, অন্যের নাম-ঠিকানা, সনদ ও পরিচয়পত্র ব্যবহার করায় তাকে শনাক্ত করা যাবে না। তবে পিবিআইয়ের তদন্তে তাকে শনাক্ত করার পাশাপাশি তার অপরাধের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
তদন্তসংশ্নিষ্টরা জানান, ২০১৪ সালের অক্টোবরে ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান দি একমি ল্যাবরেটরিজ লিমিটেডে বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে চাকরি নেন সোহেল। তার বাড়ি মাগুরা সদরের নিশ্চিন্তপুরে। তবে তিনি একমি কার্যালয়ে জমা দেন কুড়িগ্রামের রাজারহাটের হরিশ্বর তালুক এলাকার নূরুন নবীর জাতীয় পরিচয়পত্র, শিক্ষাগত সনদ ও অন্যান্য কাগজপত্রের অনুলিপি। এর মধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্রের অনুলিপিতে নূরুন নবীর ছবির জায়গায় নিজের ছবিটি বসিয়ে দেন তিনি। ফলে চেহারা দেখে নিয়োগকর্তার বোঝার সুযোগ ছিল না যে তিনি প্রকৃত নূরুন নবী নন। এই সুযোগে তিনি প্রতিষ্ঠানের হয়ে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছিলেন লক্ষ্মীপুর ডায়াবেটিক হাসপাতাল মার্কেটে। তবে ২০১৫ সালের ৭ নভেম্বর হঠাৎ তিনি নিখোঁজ হন। এ ঘটনার পরদিন লক্ষ্মীপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। পরে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানের আট লাখ টাকা নিয়ে গা ঢাকা দিয়েছেন নূরুন নবী পরিচয়ধারী সোহেল। তখন নাম-ঠিকানা অনুযায়ী গিয়ে প্রকৃত নূরুন নবীকে পান একমির কর্মকর্তারা। পরে পুলিশও তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এ সময় নূরুন নবী জানান, তার শিক্ষা সনদসহ অন্য কাগজপত্র সংবলিত ব্যাগটি হারিয়ে যায়। সে সময় তিনি থানায় জিডি করেন ও পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেন। সনদের ডুপ্লিকেট কপিও সংগ্রহ করেন তিনি। তদন্তে তার বক্তব্যের সত্যতা মেলে। পাশাপাশি জাতীয় পরিচয়পত্রের সার্ভার থেকে তথ্য সংগ্রহ করে দেখা যায়, যে ব্যক্তি একমিতে চাকরি করেছেন, একমিতে জমা দেওয়া পরিচয়পত্র তার নয়।
মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের এসআই জুয়েল মিয়া বলেন, সোহেলের বিরুদ্ধে নাম-পরিচয় গোপন করে আরেকজনের শিক্ষাগত সনদ ও জাতীয় পরিচয়পত্রে নিজের ছবি বসিয়ে জাল পরিচয়পত্র তৈরি এবং টাকা আত্মসাতের অভিযোগ প্রমাণ হয়েছে। এ ক্ষেত্রে মূল সনদধারী নূরুন নবী প্রতারণামূলক ঘটনার শিকার। জিজ্ঞাসাবাদের সময় তিনি সোহেলের ছবি দেখে তাকে চিনতে পারেন। সোহেলের বোনের বিয়ে হয়েছে নূরুন নবীর গ্রামের বাড়ির এলাকায়। নূরুন নবীর হারিয়ে যাওয়া শিক্ষাগত সনদ ও জাতীয় পরিচয়পত্র কোনোভাবে সোহেলের হস্তগত হয় এবং তিনি এগুলো ব্যবহার করেন।
সূত্রঃ দৈনিক সমকাল