ঘুষ-দুর্নীতির দূর্গ হিসেবে সারাদেশে শিক্ষক-কর্মচারীদের কাছে পরিচিত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) দশজন কর্মকর্তাকে কারণ দর্শাও নোটিশ দেয়া হয়েছে। রাজধানীর আবদুল গণি রোডের শিক্ষা ভবনের দ্বিতীয় ভবনের দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত ডিআইএর অফিসে বুধবার (১০ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে দশটায় এই দশজন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন না। তারা পার্শ্ববর্তী পার্কে, চায়ের দোকান ও গণপূর্ত ভবনের মাঠের কোনা-কাঞ্চিতে শিক্ষক-কর্মচারীদের সঙ্গে ঘুষ-লেনদেনে নিয়োজিত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। যদিও কারণ দর্শানোর নোটিশে জানতে চাওয়া হয়েছে অফিস চলাকালীন সময়ে কেন অফিসে উপস্থিত ছিলেন না তারা। অফিস সময়ে বিনা অনুমতিতে অনুপস্থিত থাকা সরকারি কর্মচারী শৃঙ্খলা বিধির সুষ্পষ্ট লঙ্ঘণ।
নোটিশ জারির বিষয়টি দৈনিকশিক্ষাকে নিশ্চিত করেছেন ডিআইএর যুগ্ম-পরিচালক বিপুল চন্দ্র সরকার।
তবে, দৈনিকশিক্ষার অনুসন্ধানে জানা গেছে, যেসব কর্মকর্তা নিয়মিত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তিন দপ্তরের কয়েকজন কর্মচারীকে মাসিকভিত্তিতে মাসোহারা দেন তাদেরকে আলাদা চোখে দেখা হয়। নোটিশ না পাওয়ার ব্যবস্থা ইতিমধ্যে তারা করে ফেলেছেন।
নোটিশ পাওয়া দশজন : এইচ এম জাহাঙ্গীর আলম, সালেহ উদ্দিন সেখ, মো: আবদুস সালাম আজাদ, টুটল কুমার নাগ, মো: আবদুস সালাম, শ্যামা প্রসাদ সাহা, মো: আবদুল্লাহ আল মামুন, মোকলেছুর রহমান ও জামালুল মাওলা এবং মাহমুদুল হক। এদের অধিকাংশই বি সি এস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত সরকারি কলেজ শিক্ষক। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে মোটা অংকের টাকা দিয়ে ডিআইএতে পদায়ন নিতে হয় বলেই শিক্ষা প্রশাসনে জনশ্রুতি রয়েছে।
সারাদেশে স্কুল-কলেজ মাদ্রাসায় পরিদর্শনে গিয়ে ডিআইএর কর্মকর্তারা নিজেদের মন্ত্রণালয়ের ‘অডিটর’ পরিচয় দেন। এদের একেকজনের রয়েছে একাধিক ফোন ও ভিজিটিং কার্ড। ঠুনকো কাজেও জাকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় ডিআইএতে। এতে খরচ করা হয় কোটি কোটি টাকা। সরকারের কলেজ জাতীয়করণের বিরোধীতাকারী বি সি এস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের সব কর্মসূচিতে অর্থ যোগান দেয়ার অভিযোগ ডিআাইএর কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
ডিআইএ কর্মকর্তাদের সম্পর্কে গত ২৪ ডিসেম্বর শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ যা বলেন: “এখানে (ডিআইএ) যখন বৈঠক করছিলাম তখনকার যা চিত্র, যা অবস্থা ছিল এই প্রতিষ্ঠানটি ছিল ইইডির মতো। স্কুলে খাম তৈরি করা থাকতো, আপনার কাজ হলো, আপনি গেলেন, খাম আপনার হাতে ধরিয়ে দিবে, আর আপনি খেয়ে-দেয়ে খাম নিয়ে চলে আসবেন। এসে রিপোর্ট দিবেন ঠিক আছে। এ ছিল মানুষের কাছে আমাদের ইমেজ। তখন ওই পদ্ধতির মাঝে আমরা কড়াকড়ি করলাম। এটা হবে না, আমরা খোঁজখবর রাখবো, চেষ্টা করবো। তারপর আবার যখন তারা গেল, অনেক স্কুলের শিক্ষক, প্রধান শিক্ষক, কমিটির চেয়ারম্যান আমাকে ফোন করে বললো, এবার ডিআইএ লোকজন আসছিল, কিন্তু অন্যবারের মতো না। এবার তারা খুব ভালো করছে। কেউ কেউ এমন স্বচ্ছ হয়ে গেছে, তারা এক কাপ চাও খেতে চায় না। তারা বললো, আমরা আপনাদের টাকায় এক খাপ চাও খাবো না। আমি বলছি, এত কড়াকড়ি হইয়েন না। কারও বাড়িতে গেলে কেউ এক কাপ চা খাওয়াতে পারে। এটা নির্ভর করে সম্পর্কের ওপর।এর বিনিময়ে কিছু নিয়ে আসবেন কি না বা সে কিছু চায় কি না সেটা বুঝে নিবেন। আমরা মাছও খেতে পারি মাংসও খেতে পারি। কিন্তু আমার যদি এর মধ্যে স্বার্থ থাকে তাহলে চা খাওয়ার দরকার নেই। আবার এমন ফোনও আসছে, আপনার তো কোনো পরিবর্তন হয়নি। বড় বড় কথা বলেন মন্ত্রীরা। আপনার লোক তো এখানে আসছিল সে তো খাম নিয়েই গেল।”