অবৈধভাবে বাসা ভাড়া দিচ্ছেন ঢাবি শিক্ষক-কর্মকর্তারা - দৈনিকশিক্ষা

অবৈধভাবে বাসা ভাড়া দিচ্ছেন ঢাবি শিক্ষক-কর্মকর্তারা

ঢাবি প্রতিনিধি |

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নিজেদের নামে বরাদ্দকৃত ফ্ল্যাট ভাড়া দিয়ে অর্থ উপার্জনের অভিযোগ উঠেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কিছু শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে । এরই মধ্যে কয়েক দফা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কয়েকজনের বিরুদ্ধে । তারপরও বন্ধ হয়নি অবৈধভাবে সাবলেট দেওয়া।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অবৈধভাবে বাসা ভাড়া দেওয়ার অভিযোগে প্রায় ১০০ জনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে নোটিস জারি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু নোটিস-জরিমানা আমলেই নিচ্ছেন না এসব শিক্ষক-কর্মকর্তা। সরেজমিন বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকাগুলোয় গিয়ে বাসা ভাড়া ও সাবলেট দেওয়ার বিষয়ে প্রমাণ মিলে। এমনকি বিষয়টি স্বীকারও করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

নিজের নামে বরাদ্দকৃত বাসা ভাড়া দেওয়া কর্মকর্তা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার (তদন্ত) শেখ আইয়ুব আলী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ৭০-৮০ জন কর্মকর্তাকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নোটিস দেওয়া হয়েছে। আপনি সবাইকে জিজ্ঞাস করেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি বহিরাগত কাউকে বাসা বাড়া দিইনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব স্টাফ আবাসন সুবিধা পাননি আমি তাদের কাছে ভাড়া দিয়েছি।’ তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাফদের কাছে বাসা ভাড়া দেওয়াটা বৈধ বলে দাবি করেন। তবে একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানিয়েছেন, স্টাফদের কাছে বাসা ভাড়া দেওয়ারও বৈধতা নেই।

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকাগুলোয় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাসা ভাড়া দেওয়া হয় ইডেন কলেজ, গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ, ঢাকা কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ আশপাশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কাছে। তাদের কাছে ভাড়া দেওয়ার আগে তাদেরকে শিক্ষক কর্মকর্তাদের আত্মীয় পরিচয় দেওয়ার জন্য শিখিয়ে দেওয়া হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তর নীলক্ষেত আবাসিক এলাকায় এক কর্মকর্তার বাসায় সাবলেট থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইডেন মহিলা কলেজের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘এখানে থাকা অবৈধ তা আমি জানি। কিন্তু আমার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সিট সংকটের কারণে এখানে বাসা বাড়া করে থাকতে বাধ্য হচ্ছি।’

অবৈধভাবে বাসা ভাড়া দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘অন্য অনেকের মতো আমাকেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নোটিস দেওয়া হয়েছে। অপরাধী হলে একা আমি হবো না, এক্ষেত্রে অন্যরাও সমান অপরাধী। আমিরুল ইসলাম উত্তর নীলক্ষেত আবাসিক এলাকার ২১ নাম্বার ভবনের বি-ব্লকে থাকেন।’

সর্বশেষ প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক হাজার ৮৮৫ জন শিক্ষক রয়েছেন। বিভিন্ন বিভাগীয় কর্মকর্তা রয়েছেন ৯৭৩ জন। এছাড়া তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী রয়েছেন যথাক্রমে এক হাজার ৯৫ ও দুই হাজার ৪৩৫ জন। এদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকায় বাসা বরাদ্দ পেয়েছেন ৬২১ জন শিক্ষক। আর বিভিন্ন শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে বাসা পেয়েছেন ৯৪৮ জন।

এছাড়া শিক্ষার্থীদের আবাসিক হলগুলোয় ২২১ জন শিক্ষক হাউস টিউটর হিসেবে আবাসন সুবিধা পেয়ে থাকেন।

হিসাব মতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ছয় হাজার ৩৪৪ শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে এক হাজার ৭৯০ জন আবাসন সুবিধা ভোগ করছেন; যা মোট শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীর মাত্র ২৮ শতাংশ। বাকি ৭২ শতাংশ বাইরে বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসন সংকট সত্ত্বেও বাসা বরাদ্দ নিয়ে একশ্রেণির শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী সুবিধার অপব্যহার করছেন। তারা বাসা ভাড়া দিয়ে বাইরে থাকেন বলে সরেজমিন গিয়ে জানা গেছে।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. আআমস আরেফিন সিদ্দিক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন ব্যবস্থাকে যারা কলঙ্কিত করছে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বারবার নোটিস পাওয়ার পরও যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের নোটিস লঙ্ঘন করেছে শিগগিরই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠার সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের শতভাগ আবাসন সুবিধা ছিল। পরবর্তীতে নতুন নতুন বিভাগ চালু ও শিক্ষক কর্মকর্তার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় সবার জন্য আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়ে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বেশকিছু বহুতল আবাসিক ভবন নির্মিত হওয়ায় সংকট কমতে শুরু করেছে। কিন্তু এসব ভবনে বাসা বরাদ্দের ক্ষেত্রে অতিমাত্রায় স্বজনপ্রীতি হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় যারা বাসা বরাদ্দ পাচ্ছেন, তারাও নিজেরা না থেকে অন্যদের কাছে ভাড়া দিচ্ছেন। অথচ আবাসন সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষক এবং কর্মকর্তাদের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার ক্ষেত্রে উদাসীনতার পরিচয় দিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট ম্যানেজার সুপ্রিয়া দাস শিক্ষক-কর্মকর্তাদের বাসা ভাড়া দেওয়ার বিষয়টি তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার উল্লেখ করে এ নিয়ে কিছু বলতে রাজি হননি।

হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য - dainik shiksha হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা - dainik shiksha ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক - dainik shiksha সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি - dainik shiksha ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার - dainik shiksha রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0062770843505859