অবৈধ স্কুল বন্ধে পাঁচ মাসেও প্রতিবেদন দেয়নি টাস্কফোর্স - Dainikshiksha

অবৈধ স্কুল বন্ধে পাঁচ মাসেও প্রতিবেদন দেয়নি টাস্কফোর্স

নিজস্ব প্রতিবেদক |

সারাদেশের অলিগলিতে গড়ে ওঠা অবৈধ ইংলিশ মিডিয়াম, কিন্ডারগার্টেন (কেজি) ও বাংলা মাধ্যমের স্কুল বন্ধে ৫ মাস আগে উদ্যোগ নেয় সরকার। এ লক্ষ্যে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) সমন্বয়ে মোট ৫৫৯টি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। কিন্তু মাঠ প্রশাসনের অসহযোগিতায় কাজটি মোটেও আগায়নি। এ কাজে সহযোগিতার নির্দেশনা পাঠাতে রোববার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি পাঠিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে এ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নজরুল ইসলাম খান  বলেন, আগস্টে আমরা সব বিভাগীয় কমিশনার, ডিসি ও ইউএনওদের এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠিয়েছি। তাতে টাস্কফোর্সের কাজ এক মাসের মধ্যে শেষ করার নির্দেশনা ছিল। কিন্তু চট্টগ্রাম অঞ্চল ছাড়া আর কারও কাছ থেকে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এ কারণে অবৈধ স্কুলের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ আটকে আছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েও প্রতিবেদন পাঠানো যায়নি। তাই আমরা এবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তাগিদপত্র পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছি। বিভাগীয় কমিশনারদের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং ডিসি ও ইউএনওদের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে পাঠানো এ চিঠিতে বলা হয়, ২০১৬ সালের ১৬ আগস্ট বেসরকারি প্রাথমিক (বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যম) এবং কেজি স্কুল যাচাই ও করণীয় সম্পর্কে এক মাসের মধ্যে সুপারিশ পাঠাতে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এ বিষয়ে ১ নভেম্বর তাগিদপত্র পাঠানো হয়। কিন্তু তাদের কাছ থেকে কোনো সুপারিশ আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত পত্রটির সঙ্গে টাস্কফোর্সের বিষয়টির যোগসূত্র আছে। এ অবস্থায় বিভাগীয় কমিশনার, ডিসি এবং ইউএনওদের নির্দেশনা দিতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হল।

অতিরিক্ত সচিব জানান, এসব টাস্কফোর্সের প্রধান কাজ ছিল লাগামহীনভাবে চলা ওইসব শিশুশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকা তৈরি করা। এগুলো বন্ধসহ সার্বিক করণীয় বিষয়ে সুপারিশ করাসহ আরও তিনটি কাজ ছিল, তা হচ্ছে- স্কুলের বৈধতা যাচাই ও রাখার প্রয়োজনীয়তা নিরূপণ। স্কুলের ব্যবস্থাপনা, শিক্ষার্থী ভর্তি, ফি নির্ধারণ ও আদায়, শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত, অবকাঠামো সুবিধাসহ অন্যান্য দিক পরীক্ষা। স্কুলে কী পড়ানো হয় ও পাঠ্যপুস্তক কী, তাও দেখবে টাস্কফোর্স। স্কুল প্রতিষ্ঠার অর্থের উৎস কী, আয়ের অর্থ কোথায় ব্যয় হয়, ব্যয়ের ক্ষেত্রে সরকারি বিধিবিধান মানে কিনা ইত্যাদিও খোঁজখবর নেবে।

নজরুল ইসলাম খান বলেন, দেশে বিভিন্ন স্থানে পরিচালিত বেশিরভাগ কেজি স্কুল বৈধভাবে গড়ে ওঠেনি। এসব স্কুলের আদৌ প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা, তাও আমরা জানি না। মূলত উচ্ছেদের আগে বাস্তব তথ্য দরকার। তাই টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, ৫ বছর ধরে চেষ্টা করেও এসব স্কুলকে আইনের আওতায় আনা যায়নি। অভিযোগ আছে, এসব কেজি, ইংরেজি মাধ্যম ও প্রাইভেট স্কুলের বেশিরভাগের মালিক সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত। কেউ কেউ জঙ্গি অর্থায়ন ও বিদেশে অর্থপাচার করে বলে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন আছে। এ কারণে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশে এমন পদক্ষেপ নেয়া হয়। টাস্কফোর্সগুলোর মধ্যে ৪৮৭ উপজেলায় একটি করে, ৬৪ জেলায় একটি করে এবং ৮ বিভাগে একটি করে হবে। তিন ধরনের টাস্কফোর্সের প্রত্যেকটিতে ৫ জন করে সদস্য আছেন। এর মধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে কমিটি উপজেলায় থাকা কেজি স্কুল নিয়ে কাজ করবে। জেলা প্রশাসক করবেন তার জেলা শহরের ভেতরের বা উপজেলার বাইরে যা থাকবে। বিভাগীয় কমিশনারদের মহানগর বা মেট্রোপলিটন শহরের স্কুলের বিষয়ে কাজ দেয়া হয়।

মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিপিই) সূত্র জানিয়েছে, এ টাস্কফোর্স গঠনের প্রধান উদ্দেশ্য স্কুলগুলোকে আইনের মধ্যে নিয়ে আসা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাধিকবার শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবইয়ের আকার এবং স্কুলব্যাগের ওজন কমানোর তাগিদ দিয়েছেন। সে অনুযায়ী জাতীয় পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) বইয়ের আকার ছোট করেছে। সরকারি স্কুলে বইয়ের বহরও কম।

কেজি স্কুলগুলো লাগামহীনভাবে চলছে। কোনো কোনো বেসরকারি প্রকাশকদের কাছ থেকে উৎকোচ গ্রহণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব প্রতিষ্ঠানে অনেক শিক্ষক আছেন যাদের শিক্ষক হওয়ার ন্যূনতম যোগ্যতা নেই। অনেক স্কুলের মালিক, তার স্ত্রী ও সন্তানরা মিলে স্কুল চালাচ্ছেন। আদায় করা হচ্ছে ইচ্ছেমতো ফি। যদিও শিক্ষার্থীরা মানসম্মত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। শিক্ষকদের বেতন-ভাতাও দেয়া হয় নামমাত্র। এককথায়, রমরমা শিক্ষা বাণিজ্য চালাচ্ছে এসব প্রতিষ্ঠান।

এমন সীমাহীন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার ১৯৬২ সালের স্কুল নিবন্ধন আইনের আলোকে ২০১১ সালে একটি বিধিমালা করে। কথা ছিল, কেজি স্কুলগুলো ওই বিধিমালার অধীনে স্কুল নিবন্ধন করবে। কিন্তু সার্বসাকুল্যে ৩০২টি প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন করে। অথচ কেজি স্কুলের বিভিন্ন সমিতির তথ্যমতে, সারা দেশে এ ধরনের অন্তত ৭০ হাজার স্কুল আছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লাখ লাখ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করলেও এর ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই। দেশে বর্তমানে কতটি কেজি বা ইংলিশ মাধ্যম স্কুল আছে সরকারের কাছে সে তথ্য নেই। মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, টাস্কফোর্সের কাজ শেষ হলে ২০১১ সালের বিধিমালা অনুযায়ী কেজি স্কুলগুলো নিয়ন্ত্রণ করা হবে।

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0035741329193115