অর্থমন্ত্রীর প্রতি খোলা চিঠি
‘মাননীয় অর্থমন্ত্রী গত কয়েক বছরে বেড়েছে সার্বিক শিক্ষা খাতের পরিসর কিন্তু বাজেট বরাদ্দ বাড়েনি। গত চার বছরে শিক্ষাখাতে টাকার অংক বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় বরাদ্দের হার কমেছে। শিক্ষা প্রসারে বাজেটে তুলনামুলক বরাদ্দ না বাড়ালে এ খাতের উন্নয়ন ব্যাহত হবে।
গত বছর ২০১৫-১৬ বাজেট এর ঠিক একই সময় ঢাকায় সফর করেন নোবেল বিজয়ী শিক্ষাবিদ কৈলাস সত্যার্থী। সামগ্রিক বাজেটের উপর শিক্ষাখাতে এই প্রতুল বরাদ্দ বিষয়ে তিনি উল্লেখ্য করেন শিক্ষাখাতে এক ডলার ব্যয় করলে ২০ বছর পর সেখান থেকে ১৫ গুন রিটার্ণ (প্রাপ্তি) আসে। তাই ভবিষ্যতে কথা চিন্তা করে শিক্ষাখাতে ব্যয় বাড়ানো উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি। এজন্য ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে শিক্ষাখাতে বাজেট বরাদ্দ বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশ সরকারকে পরামর্শ দিয়েছিলেন তিনি। আর উল্লেখ করেছিলেন যেকোন দেশের শিক্ষাখাতে ব্যয় বাড়ালে সেটা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং জিডিপি প্রবৃত্তি-তেও সহায়ক ভূমিকা রাখে।
মাননীয় মন্ত্রী, আমরা জানি ছাত্র জীবনে আপনি অত্যন্ত মেধাবী কৃতি ছাত্র ছিলেন। সে অনুযায়ী দেশের শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিদের কামনা ছিল আপনার হাতেই শিক্ষাখাতে ব্যাপক উন্নতি হবে। কিন্ত আপনার মন্ত্রীত্ব পাওয়ার পর থেকে বাজেটে বরাবরই বাংলাদেশের শিক্ষাখাতে বরাদ্দ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কিন্তু কেন? শুধু তাই নয় বিভিন্ন সময় আপনার দেওয়া শিক্ষা আর শিক্ষকদের নিয়ে কটুক্তিকর মন্তব্য সরকারের উচ্চ মহলেও করেছে বিব্রত। এরপরও আপনার মেধা আর যোগ্যতায় স্বীয় পদ অলংকৃত করে আসছেন। খুবই ভালো কথা।
মাননীয় মন্ত্রী, ২০১৬-১৭ সম্পুরক বাজেট আলোচনায় আপনি বাংলাদেশের এমপিওভুক্ত এক-তৃতীয়াংশ বেসরকারী প্রতিষ্ঠানকে ভুঁইফোড় বলে যে মন্তব্য করেছেন তা মোটেই যুক্তিযুক্ত নয়। এজন্য বাংলাদেশের ২৬,০০০ হাজার এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং ৫ হাজার নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের লক্ষ লক্ষ শিক্ষক কর্মচারীসহ দেশের লক্ষাধিক শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিরা হয়েছে হতাশাগ্রস্ত। অবশ্য এসব আপনি স্বচক্ষে দেখেননি তাই এ বিষয়ে আপনার কৌতুহল না থাকারই কথা। বাস্তবতা জানলে অবশ্যই আপনি পদত্যাগ করতেন।
মাননীয় মন্ত্রী, বাংলাদেশে নন-এমপিও বেসরকারী অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দীর্ঘ ১৫/১৬ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সব ঠিক থাকলেও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারনে এর আগে এমপিওভুক্ত হয়নি। বর্তমান শিক্ষানুরাগী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে শিক্ষা সংক্রান্ত সমস্ত সমস্যার সমাধান হবে; বিশেষ করে নন-এমপিওভুক্ত বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হবে অথচ বাস্তবে দেখা গেছে এর উল্টা। অর্থ্যাৎ নির্ধারিত কোন কারন ছাড়া দীর্ঘ প্রায় আট বছর ধরে এমপিওভুক্তিকরণ বন্ধ করা হয়েছে। বাংলাদেশের বিগত কোন সরকারের আমলে এমন ঘটনা ঘটেনি। নিঃসন্দেহে বিষয়টি অত্যন্ত দু:খজনক এবং বর্তমান দেশের শিক্ষা বিকাশে অশনিসংকেত।
মাননীয় মন্ত্রী, এ বিষয়ে আমরা আর কিছুই বলতে চাইনা। শুধু আপনাকে অনুরোধ করবো যেহেতু দেশে নতুন করে আর কোন বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনুমোদন দেয়া হচ্ছে না তাই দীর্ঘদিনের প্রতিষ্ঠিত হওয়া দেশে বেসরকারী নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো এমপিওভুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক বরাদ্দ দিন। এসব প্রতিষ্ঠান এখন আর আগের মত নেই; আস্তে আস্তে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে গেছে। আপনার হস্তক্ষেপেই সম্ভব এই প্রতিষ্ঠানগুলো জীবন ফিরে পাওয়া। দেশে প্রায় আট হাজার নন-এমপিও বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে; এটাই হয়তো শেষ এবং চূড়ান্ত এমপিওভুক্তিকরণ। আপনিও হয়তো আর বেশীদিন এ পদে দায়িত্বরত থাকবেননা। পত্রিকায় দেখলাম আপনার পরিবার থেকেই আপনার বার্ধক্যের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। মাননীয় মন্ত্রী আপনার বয়স এখন ৮৩ বছরের অধিক। আপনি আরও দীর্ঘজীবি হন আমরা কামনা করি।
কিন্তু শেষ সময়ে শেষ বয়সে বাংলাদেশের প্রায় আট হাজার বেসরকারী ননএমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং এর শিক্ষক কর্মচারীদের আপনি নিরাশ করবেন না। সেই সাথে নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারীদের অভিশাপ না নিয়ে তাদের ন্যায্য অধিকার এমপিওভুক্তিকরণ এর শেষ বাজেট বরাদ্দের ব্যবস্থা করে দেশের শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিদের প্রানঢালা দোয়া ও ভালবাসা নিয়ে বিদায় নিবেন। এটাই আপনার কাছে আমাদের প্রত্যাশা এবং এর মাধ্যমেই চিরস্বরণীয়, বরনীয় হয়ে থাকবেন সেই কামনা রইল।’
নিবেদক: মো. মাহবুবুব আলম, প্রভাষক, কালিয়া আদর্শ কলেজ, উপজেলা: কালিয়া, জেলা: নড়াইল।