অষ্টম পে-স্কেল ও শিক্ষকদের মর্যাদা - Dainikshiksha

অষ্টম পে-স্কেল ও শিক্ষকদের মর্যাদা

ড. মো. হুমায়ুন কবীর |

অষ্টম পে-স্কেল বাস্তবায়নের পর্যায়ে এসে দেশের ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি কলেজ, সরকারি প্রাইমারি স্কুল এমনকি বেসরকারি পর্যায়ের সকল শিক্ষকদের মধ্যেই এখন একটি অস্থির পরিস্থিতি বিরাজমান। আর এ অস্থিরতা সৃষ্টির অন্যতম একটি কারণ হলো শিক্ষকদের মর্যাদা পুনরুদ্ধারের প্রশ্নে। এখানে অর্থের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির বিষয়টি খুব বড় হয়ে দেখা দেয়নি। টাকার অঙ্কে এবারের বেতন স্মরণাতীতকালের সর্বোচ্চ পরিমাণে অর্থাত্ কোনো কোনো ক্ষেত্রে দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু সমস্যাটি সৃষ্টি হয়েছে নতুন একটি পদ্ধতির প্রবর্তন করার জন্য।

সরকার না চাইতেই পে-স্কেল দিয়ে অতিসহজেই সবার সুদৃষ্টি পেয়েছেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু সম্পূর্ণ নতুন স্কেলটি যতই বাস্তবায়নের দিকে এগুচ্ছে ততই এর অসুবিধা ও দুর্বলতাগুলো সংশ্লিষ্টদের কাছে স্পষ্ট হয়ে ধরা পড়ছে। সেখানে আগেও বিভিন্ন পর্যায় থেকে বিশ্লেষক ও বিশেষজ্ঞগণ তাদের লেখায়, পরামর্শে বলেছেন যে, সেখানে বর্তমান ধারার সিলেকশন গ্রেড ও টাইমস্কেলটা যদি শুধু আগের মত বজায় রেখে আর বাদ-বাকি সব বর্তমানে কমিশনের প্রস্তাব অনুসারেই বাস্তবায়ন করা হয় তাহলে আর তেমন কোনো সমস্যা থাকে না। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কলেজ শিক্ষকসহ প্রকৃচি-বিসিএস ২৬ ক্যাডারের সমন্বয় কমিটি, অন্যান্য স্কুল-কলেজের শিক্ষকবৃন্দ, সচিবালয়ের ৩য়-৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী সমন্বয় কমিটি সবাই পৃথক পৃথকভাবে মাননীয় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের সাথে আলোচনা করেছেন। সেখানে অর্থমন্ত্রী মহোদয় সকলকে কিছ ুকিছু বিষয়ে আশ্বাসও দিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখা গেল সেগুলো আর সমন্বয় করা হয়নি। উপরন্তু তিনি বিভিন্ন সময়ে উস্কানিমূলক কথাবার্তা বলে সকলের সম্মানে আঘাত করেছেন। যেমন ‘শিক্ষকরা না জেনে কথা বলছেন’, ‘যতই আন্দোলন করুক শিক্ষকদের বিষয়ে আর কিছু করার নেই’ ইত্যাদি ইত্যাদি। অথচ শিক্ষামন্ত্রী জনাব নুরুল ইসলাম নাহিদ সর্বদাই যথাসম্ভব শিক্ষকদের পক্ষাবলম্বন করে সহানুভূতিশীল বক্তব্য-বিবৃতি দিয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সিলেকশন গ্রেড শুধুমাত্র নির্দিষ্ট সংখ্যক সিনিয়র প্রফেসরদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়। কিন্তু সে সিলেকশন গ্রেডটি রেখেছেন ঠিকই তবে সেটি হচ্ছে জাতীয় অধ্যাপকগণের বেলায়। অথচ দেশে জাতীয় অধ্যাপকের সংখ্যা হলো মাত্র ৬ জন। তার মানে হলো সাধারণ কোনো প্রফেসর তার চাকরি জীবনে সেই সিলেকশন গ্রেড আর পাওয়ার অধিকারী হবেন না। সেজন্যই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সংগঠন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন ঢাকায় সাংবাদিক সম্মেলন আয়োজন করে সেখানে তারা প্রতারিত হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। সেখানে ১১ জানুয়ারি ২০১৬ থেকে তারা ক্লাস বর্জনসহ আরো কঠোর কর্মসূচিতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

সরকারি কলেজের শিক্ষকরা ইতোমধ্যে সেধরনের কর্মসূচি পালন করছেন। আমি নিজে শিক্ষা প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা হিসেবে নতুন পে-স্কেলের খুঁটিনাটি বিশ্লেষণ করে দেখেছি যে, সেখানে অনেক অসঙ্গতি রয়েছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ছাড়াও আরো অনেক ধরনের কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে। স্বায়ত্তশাসন থাকার কারণে যাদের যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও পদোন্নতি হয় না, তাদের সকলের জন্য কোথায় রিস্ট্রাকচারিং আবার কোথাও আপগ্রেডেশন নীতিমালা প্রণয়ন করে সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়ে থাকে। কিন্তু বর্তমানে জারিকৃত প্রজ্ঞাপনের পর এগুলো সবই বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ায় মর্যাদা ও আর্থিক উভয় প্রশ্নে শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা প্রত্যেকে ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। কিন্তু আশার কথা, ৩ জানুয়ারি’২০১৬ মন্ত্রিসভার নিয়মিত সভায় এবিষয়টি নিরসনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজে দায়িত্ব নিয়েছেন বলে জানা গেছে।

এবার এ বিষয়টির একটি সম্মানজনক সমাধান হবে বলেই আশা করা হচ্ছে। তবে সেখানে সিলেকশন গ্রেড ও টাইমস্কেল বহাল রাখলেই সকল সমস্যার আপাত সমাধান হবে বলে অভিজ্ঞ মহলের ধারণা। আর সেরকম একটি আশার আলো যখন শিক্ষকসহ সকলে দেখতে পাবেন, তখন নিশ্চয়ই তারাও সকল আন্দোলন কর্মসূচি থেকে সরে আসবেন।

লেখক: ড. মো. হুমায়ুন কবীর

ডেপুটি রেজিস্ট্রার,জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়।

এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ - dainik shiksha এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ - dainik shiksha পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী - dainik shiksha ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ - dainik shiksha প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0048060417175293