সরকার ২০১৮ সালের মধ্যে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষার অন্তর্ভুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছে। উদ্যোগটি প্রশংসনীয়। তবে এজন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেই। দেশের সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যেমন অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত চালু করা সম্ভব নয়, তেমনি সকল বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণি খোলার সুযোগ নেই।
জোর করে খোলার ব্যবস্থা করা হলেও শিক্ষার্থী সংকটের কারণে এগুলোর বেশিরভাগই বন্ধ থাকবে। তর্কের খাতিরে যদি ধরে নেই যে, সরকার হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে দেশের সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর ব্যবস্থা করবে, নিয়োগ দেবে পর্যাপ্ত সংখ্যক শিক্ষক, তাদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবে। তাহলেও তা কত বছরে বাস্তবায়ন সম্ভব হবে এ প্রশ্নটি থেকে যায়। অন্যদিকে সকল বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ থকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বাদ দেওয়া হলে ঐ সকল বিদ্যালয়ের উদ্বৃত্ত শিক্ষক ও কর্মচারীরা কোথায় যাবেন? এদের সবাই তো আর উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে পাঠদানে সমর্থ নন।
আমি অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নের বিরোধিতা করছি না। এটি অতি অবশ্যই বাস্তবায়ন করতে হবে, তবে তা কোন পদ্ধতিতে এটাই বিবেচ্য। এই ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সকলের বিবেচনার জন্য একটি প্রস্তাব তুলে ধরছি—
সরকার বেসরকারি পর্যায়ের শিক্ষক-কর্মচারীদের বর্তমানে যতটা সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে তার সঙ্গে আর সামান্য কিছু সুবিধা বাড়ালেই শিক্ষা জাতীয়করণের দাবি পূরণ করা যায়। আর এজন্য অতিরিক্ত যে পরিমাণ অর্থ প্রয়োজন তা ঐসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর টিউশন ফিসহ বিভিন্ন পর্যায়ের আয় ও সম্পদ থেকে মেটানো যায় যদি তা সরকারি তহবিলে আসে।
এই বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো এদেশের শিক্ষাব্যবস্থাও জাতীয়করণ করা হলে নতুন করে বিপুল সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান, হাজার হাজার কোটি টাকার অবকাঠামো নির্মাণের প্রয়োজন হবে বলে মনে হয় না।
প্রচলিত পদ্ধতির মধ্যেই অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন সম্ভব। কলেজগুলোতে যেমন বোর্ড এবং বিশ্ববিদ্যালয় উভয় পর্যায়ের পাঠদান এবং পরীক্ষা চলে, তেমন স্কুলগুলোতেও প্রাথমিক ও মাধ্যমিক উভয় স্তরের পাঠদান ও পরীক্ষা নেওয়া যাবে। শিক্ষক ও কর্মচারী উদ্বৃত্ত কিংবা উচ্চ মাধ্যমিকে শিক্ষার্থী সংকট হবে না।