নিজের জমানো টাকা পয়সা যা ছিল আজ সব শেষ। আর কত ধার-দেনা করে চলব। বছরের পর বছর বিনা বেতনে চাকরি করছি, আমার যা কিছু হারাবার সব কিছু হারিয়ে ফেলেছি। এমনকি আমার মা, বাবা, ভাই, বোন থাকতেও তারা আমাকে দুরে সরিয়ে দিচ্ছে এই এমপিও না হওয়ার কারণে। এখন ভিক্ষা ছাড়া আমার আর কোন উপায় নেই। আইসিটি শিক্ষক হওয়াটাই কি আমার অপরাধ ছিল ?
আমার পরিবার আমাকে গত বছর বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। আমার যাবার মত আর কোন রাস্তা নেই। আমাকে এখন কেউ দুইটা টাকাও ধার দেয় না। আমি ঈদে বাড়ি যাব, কিন্তু কাদের কাছে যাব, তাদেরকেই বা কী দিব। আমি খুব অসহায় হয়ে পড়েছি। সবার কাছে আমি আমার প্রাণ ভিক্ষা চাচ্ছি। আমি কিছুদিনের মধ্যেই আত্মহত্যা করতে চাই। আইসিটি শিক্ষকদের বেতন না পাওয়ার জন্য আমি এই পথ বেছে নিলাম। ঈদের পর ঈদ আসতেই থাকে, কিন্তু আইসিটি শিক্ষকদের বেতন এমপিও শীটে আসেনা। এ কেমন স্বাধীন দেশ। একই স্কুলে চাকরি করে সবাই বেতন পায়, আর আমি বেতন পাই না।
আমার স্কুলের অফিস সহকারিসহ সবাই আমাকে ভয় দেখায়, আমি এখনও কেন ঈদের উৎসব বোনাসের শীট তৈরি করি নাই । আসলে তখন খুব কষ্ট লাগে মনের ভিতরে। আর কত স্কুল ও শিক্ষদের কাজ বিনা বেতনে করে দিব। স্কুল থেকে কিছু টাকা সরকারি বিধি মোতাবেক পাবার কথা থাকলেও স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাকে সেটা দিচ্ছে না। তাদেরকে প্রশ্ন করলে বলে স্কুলে থাকলে থাকেন, আর না থাকলে চলে যান। আমারতো আর যাবার জায়গা নেই। এখন মৃত্যুই আমার একমাত্র সমাধান । আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী না, তবে যারা আমার বেতন নিয়ে ছিনিমিনি করছে তাদের জন্য আমি মরলাম।
সরকার কোচিং বন্ধ করে একটা ভালো কাজ করেছে, কোচিং করলে চাকরি থাকবে না এমন প্রজ্ঞাপন ইতিমধ্যে জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু আমি কী করে টাকা উপার্জন করব ? না পারব প্রাইভেট পড়াতে, না পারব চুরি করতে। আবার স্কুল থেকে বেতন দিবে না। এখন আপনারাই বলেন আমি কি করবো? স্কুলের এত কাজ করে কী লাভ হচ্ছে আমার বরং প্রতিনিয়ত কষ্ট পাচ্ছি।
আইসিটি শিক্ষকদের এমপিওর ব্যবস্থা করুন। আর যদি করতে না পারেন তাহলে তাদেরকে চাকরি থেকে বহিষ্কার করুন। আপনারা আপনাদের প্রতিষ্ঠান চালান, আমাদেরকে কেন রেখে কষ্ট দিচ্ছেন। আমার কথাগুলোর দ্বারা কেউ যদি কোন রকমের কষ্ট পান, তাহলে আমাকে ক্ষমা করবেন।
মো. জসিম উদ্দিন: সহকারি শিক্ষক (কম্পিউটার), নারায়ণগঞ্জ ।