আবহাওয়ার এই খামখেয়ালির নেপথ্যে - Dainikshiksha

আবহাওয়ার এই খামখেয়ালির নেপথ্যে

নিজস্ব প্রতিবেদক |

এবছর ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস, অস্বাভাবিক মাত্রায় বজ্রপাত, অতি ভারি বর্ষণ, আকস্মিক বন্যা, ভূমিধসের মত একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। কিন্তু এর কারণ কী?

প্রকৃতির এই বৈরী আচরণকে হুট করে ‘জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব’ বলে চালিয়ে দিতে চান না আবহাওয়াবিদরা। তারা বলছেন, ওই সিদ্ধান্তে আসতে গেলে অন্তত ৫০ বছরের তথ্য পর্যালোচনা করতে হবে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আবদুল মান্নান বলেন, এক মৌসুমে ঘন ঘন এমন আবহাওয়াকে তারা ‘ক্লাইমেট ভেরিয়েবিলিটি’ হিসেবে দেখছেন। প্রকৃতির এই ‘অস্বাভাবিক আচরণকে’ তারা বলতে চাইছেন স্বল্পমেয়াদী ‘ক্লাইমেট ফেনোমেনা’।

এ বছর এপ্রিল ও মে মাসে মারুথা ও মোরা নামে দু’টি ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়েছে বঙ্গোপসাগরে। এর বাইরে নিম্নচাপ তৈরি হয়েছে বেশ কয়েকবার, তার মধ্যে দুই দফা নিম্নচাপে প্রবল বর্ষণে পাহাড়ে ভূমিধসে মৃত্যু হয় দেড় শতাধিক মানুষের।

দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলে আগাম বন্যায় বোরো ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে এবার। বর্ষা মৌসুমের শুরুতে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে উত্তর পশ্চিমের মানুষকেও ভুগতে হয়েছে। আগস্টেও বড় বন্যার আভাস দিয়ে রেখেছে আবহাওয়া অফিস।

বজ্রপাতে মৃত্যুর খবর গত বছর তিনেক ধরেই বেড়ে গেছে। এছাড়া ভারি বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতায় নাকাল হতে হচ্ছে চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরের বাসিন্দাদের।

সর্বশেষ বৃহস্পতিবার ঢাকায় তিন ঘণ্টার ১২৩ মিলিমিটার বৃষ্টিতে ফের জলজটের ভোগান্তিতে পড়েছে রাজধানীবাসী।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আবদুল মান্নান বলেন, বৃহস্পতিবারের ওই বৃষ্টি স্বল্প সময়ের বিবেচনায় গত এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০০৬ সালের জুলাই মাসে ঢাকায় তিন ঘণ্টায় ৯৬ মিলিমিটার বৃষ্টির রেকর্ড ছিল।

এবার বর্ষার শুরুতে গত ১২-১৩ জুন ২৪ ঘণ্টায় ১৩৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয় ঢাকায়। ১৩ জুলাই ১০৩ মিলিমিটারের রেকর্ড বৃষ্টি হয়। ২৬ জুলাই রাতে মাত্র ৬৭ মিলিমিটারের বৃষ্টিতে নগরবাসীকে দিনভর জলজট ও যানজটে ভুগতে হয়।

রাজধানীর বাইরে ২০ জুলাই সীতাকুণ্ডে ২৪ ঘণ্টায় ৩৭৪ মিলিমিটার; রাঙামাটিতে ১২ জুন ৩৪৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়।

আবহাওয়াবিদ মান্নান বলেন, “এবার নির্দিষ্ট এলাকায় খুব বেশি বৃষ্টি দেখা গেল। এটাকে শর্টলাইফ ক্লাইমেট ফেনোমেনা বলা হয়। এ ধরনের আবহাওয়ায় আকস্মিক দুর্যোগ নেমে আসে, জনজীবনেও চরম ভোগান্তি হয়। গত কয়েক বছর ধরে এমন আবহাওয়া দেখা যাচ্ছে।”

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বল্প সময়ের বৃষ্টিতেই এখন ঢাকা-চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে। কিন্তু ১৯৫৬ সালে বৃষ্টির পরিমাণ ৩০০ মিলিমিটার ছাড়িয়ে গেলেও সে সময় এতোটা দুর্ভোগ হত না।

খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় এবং জনসংখ্যা ও শহরের আয়তন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নতি না হওয়ায় এখন মানুষকে বেশি ভুগতে হচ্ছে বলে মনে করছেন তারা।

স্বাধীনতার আগে-পরে ঢাকায় ২৪ ঘণ্টায় তিনশ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টির রেকর্ড রয়েছে। ২০০৯ সালের ২৭ জুলাই রাজধানীতে ২৪ ঘণ্টায় ৩৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। তার আগে ১৯৫৬ সালের ২৪ জুলাই ৩২৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের রেকর্ড রয়েছে।

আবহাওয়াবিদ আবদুল মান্নান বলেন, “বাংলাদেশে বর্ষায় ভারি বর্ষণ হবেই। আগে নগরে বৃষ্টি পানি নেমে যাওয়ার সব পথ সচল ছিল, তখন সমস্যা হয়নি। এখন পানি আটকে থাকাকে দুর্যোগ ভাবা ঠিক হবে না।”

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রিয়াজ আহমেদ বলেন, “মহানগরের নানা সমস্যার কারণে আজ নাগরিকদের জলাবদ্ধতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। রাজধানীতে খাল নেই, রাস্তাঘাটে কাজ চলছে, ড্রেনেজ ব্যবস্থাও ভালো নয়। ঢাকা-চট্টগ্রামে যা ঘটছে তাতে দুর্ভোগ হচ্ছে, আর সেটা দুর্যোগের মত মনে হচ্ছে।”

তবে ভূমি ধস ও হাওরের আকস্মিক বন্যায় আবহাওয়ার ব্যাপক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেখতে পাচ্ছেন তিনি।

‘রাঙামাটিতে এমন ভূমিধস ৫০ বছরেও ঘটেনি; হাওরে মার্চ-এপ্রিলের আকস্মিক বন্যাও অনেক দিন পর দেখা গেল। সুনামগঞ্জে বন্যার সময় যেন এগিয়ে এসেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই এটা হচ্ছে কিনা তা গবেষণার মাধ্যমে উঠে আসবে আশা করি।’

এবারের অভিজ্ঞতা থেকে আগামীতে দুর্যোগ মোকাবেলায় সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে রিয়াজ আহমেদ জানান।

দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0072770118713379