আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা ও জঙ্গিবাদ - Dainikshiksha

আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা ও জঙ্গিবাদ

সুধীর বরণ মাঝি |

শিক্ষা সভ্যতার ধারক-বাহক। শিক্ষা জাতীয় চেতনা ও ঐক্যের প্রতীক। শিক্ষা মানুষের শারীরিক, মানসিক ও সার্বিক কল্যাণ সাধন করে। আর শিক্ষা অধিক ফলপ্রসূ হয় যদি শিক্ষার মাধ্যম হয় মাতৃভাষা। যে শিক্ষা সবার কাছে অর্থবহ নয় সে শিক্ষা পূর্ণাঙ্গ নয়। শিক্ষার মাধ্যম হবে মাতৃভাষা। মাতৃভাষা ছাড়া শিক্ষা পূর্ণতা লাভ করতে পারে না। যা সর্বজন স্বীকৃত। সব উন্নত দেশে শিক্ষার মাধ্যম হচ্ছে তার নিজ ভাষা অর্থাৎ মাতৃভাষা। মাতৃভাষাতে কোন একটি বিষয় যত সহজে উপলব্ধি করা যায়, বোধগম্য হয়, সহজবোধ্য হয় অন্য কোন ভাষাতে তা সম্ভব নয়। মাতৃভাষায় অর্জিত শিক্ষার মাধ্যমে দেশপ্রেম, জাতীয়তাবোধ ও মানুষের প্রতি ভালোবাসা জাগ্রত হয়। শিক্ষার বৈষম্য নানা অপরাধের জন্ম দেয়।

আমাদের দেশের মতো তিন ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা পৃথিবীর অন্য কোন দেশে আছে বলে আমার জানা নেই। শিক্ষায় যত বেশি প্রকার ভেদ তত বেশি রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয় এবং ধনী-গরিব বৈষম্য বাড়তে থাকে। ফলে অপরাধের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়। আমরা যদি আমাদের দেশের জঙ্গিবাদ ও জঙ্গি হামলার দিকে একটু দৃষ্টি দেই তাহলে আমরা কী দেখতে পাই? যারা জঙ্গি হচ্ছে তারা প্রত্যেকই বেসকারি (প্রাইভেট) শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মাদ্রাসার ছাত্র এবং এদের শিক্ষার মাধ্যম হচ্ছে ভিনদেশীয় ভাষা। আমরা জানি, দেশপ্রেম ইমানের অঙ্গ। যেই শিক্ষার মধ্যে দেশপ্রেম নেই সেই শিক্ষা পরিপূর্ণ শিক্ষা নয়। ভিনদেশীয় ভাষা কখনো আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্য, সাহিত্য-সংস্কৃতি শেখায় না। ফলে তাদের মধ্যে দেশপ্রেমবোধ, দেশাত্মবোধও জন্মায় না। তাদের শিক্ষা যখন আমাদের দেশের বাস্তবতার সঙ্গে মিল খুঁজে পায় না আর তখনই তার মধ্যে হতাশা দেখা দেয় এবং জীবনের প্রতি ভালোবাসা হারিয়ে ফেলে। জন্ম নেয় উগ্রবাদী চিন্তা-চেতনা। তারা পা বাড়ায় অন্ধকার জগতের দিকে। কেউ জঙ্গি, কেউ মাদকসেবী আবার কেউ সন্ত্রাসীর খাতায় নাম লেখায়। আমাদের মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা দেশকে মোটের ওপর জীবন ও জগৎবিমুখ মানুষ উপহার দিচ্ছে। অন্যদিকে ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষা ব্যবস্থা বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকেও বেরোচ্ছে একটি স্বার্থপর বা ভীষণ রকম আত্মকেন্দ্রিক, নিজস্ব ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে উদাসীন, দেশপ্রেমের অনুভূতিবর্জিত ও সামাজিক দায়বোধহীন রোবট। সাধারণ শিক্ষার প্রতি যাদের মমতা কম, মাতৃভাষায় শিক্ষার প্রতি তাদের আগ্রহ ও শ্রদ্ধা কম। তাদের সন্তানরাই আজ বেশি বিপথগামী যারা মাতৃভাষাকে অবহেলা, অবজ্ঞা করে এবং চাষাভুষাদের ভাষা বলে হীনমন্যতায় ভোগে।

জঙ্গিবাদ রোধ করতে হলে একই ধারায় অভিন্ন শিক্ষা পদ্ধতি চালু করতে হবে এবং যার মাধ্যম হবে মাতৃভাষা। মোটকথা, সেদিন ১৯৭২ সালে যা হয়তো সম্ভব হলেও হতে পারত, বলা বাহুল্য আজ আর তা সম্ভব নয়। বিদ্যমান বাস্তবতায় যা করণীয় তা হলো, সাধারণ শিক্ষাকেই মূলধারা গণ্য করেই সতর্ক ও দূরদর্শী পরিকল্পনার মাধ্যমে, এর সঙ্গে প্রচলিত অন্য ধারাগুলোর ব্যবধান, সম্ভবের শেষ সীমা পর্যন্ত কমিয়ে আনা। আর তার জন্য মাদ্রাসা শিক্ষার ব্যাপক আধুনিকায়ন ও মানোন্নয়ন যেমন অত্যাবশ্যক তেমনি সাধারণ ধারাতেও নৈতিক শিক্ষার সংস্থান রাখতে হবে। অন্যদিকে ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষা পদ্ধতিকেও সরকারের পূর্ণনিয়ন্ত্রণ বা তদারকিতে এনে সেখানেও শিক্ষার্থীদের বাধ্যতামূলকভাবে ও সমান গুরুত্ব দিয়ে জাতীয় ভাষা, জাতীয় ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয়ের সুযোগ ঘটাতে হবে। পাশাপাশি দেশের সাধারণ শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং এই ধারায় পড়ালেখা করেও যাতে একজন শিক্ষার্থী যথেষ্ট ভালোভাবে ইংরেজি শিখতে পারে সেইভাবে পুরো শিক্ষা ব্যবস্থাটিকে ঢেলে সাজাতে হবে।

সুধীর বরণ মাঝি

হাইমচর-চাঁদপুর।

নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ - dainik shiksha বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি - dainik shiksha যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি - dainik shiksha তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই - dainik shiksha শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী - dainik shiksha বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0035419464111328