ছুটির ঘণ্টা চলচ্চিত্রের চোখ ভেজানো সেই দৃশ্য আরেকবার ভেসে উঠলো, তবে পর্দায় নয় বাস্তবে। চট্টগ্রামে ঘটতে চলেছিলো আরেক হৃদয় বিদারক ঘটনা। কিন্তু এবার পথচারীদের সহায়তায় রক্ষা পেলো দুই শিশু।
বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) বিকেলে কোতোয়ালি থানাধীন সরকারি ন্যাশনাল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
নগরীর একটি স্কুলের ভবনে তালাবদ্ধ স্মৃতি মণি ও মণি দে নামের তৃতীয় শ্রেণির দুই ছাত্রীর কান্না শুনে পথচারীরা স্থানীয় তরুণদের সহায়তায় উদ্ধার করেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন জামালখান ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন, থানা শিক্ষা কর্মকর্তা শর্মিষ্ঠা মজুমদার, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বদরুন নেসা, মহসিন কলেজ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীসহ অভিভাবকেরা।
মো. শেরখান নামের এক কিশোর বলল, আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ সড়ক দিয়ে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ শুনতে পাই দুটি শিশু অস্বাভাবিক ভাবে কান্না করছে। কান খাড়া করে শুনলাম। স্কুল ভবনের দিকে মনে হলো। মূল ফটক বন্ধ। পেছন দিয়ে দেয়াল টপকে কয়েকজন শিশুসহ আমরা ঢুকলাম। তালা ভেঙে তাদের উদ্ধার করলাম।
‘আমি নিজে এ স্কুলের ছাত্র ছিলাম। এখন সালেহ জহুর স্কুলে নবম শ্রেণিতে ছিলাম। মেয়ে দুটি উদ্ধার না হলে শুক্রবারও আটকা থাকত। বড় অঘটন ঘটতে পারত।’ যোগ করল শেরখান।
খবর পেয়ে বিমান অফিস এলাকা থেকে স্কুলে ছুটে আসেন স্মৃতি মণির মা ফিরোজা বেগম। তিনি বলেন, লোকমুখে খবর পেলাম আমার মেয়ে স্কুল আটকা পড়েছে। সারা শরীর কাঁপছিল। পড়ি মরি করে ছুটে এলাম।
প্রধান শিক্ষিকা জানান, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত এ বিদ্যালয়ে বর্তমানে ১ হাজার ৩০০ শিক্ষার্থী আছে। এর মধ্যে তৃতীয় শ্রেণিতে আছে ১৫০ জন। দোতলায় তাদের শ্রেণিকক্ষ। আমাদের শ্রেণিকক্ষগুলো খোলা থাকে। ভবনের ফটকে কলাপসিবল গেটে তালা দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, দুই শিশুর সঙ্গে কথা বলে জেনেছি অন্য ছাত্র-ছাত্রীরা যখন ছুটি শেষ বাড়ি ফিরে যাচ্ছিল তখন তারা ফুচকা কিনে এনে খাচ্ছিল। আয়া তাদের দেখেনি। তাই ভবনের কলাপসিবল গেটে তালা দিয়ে যান। আগামীতে এ ব্যাপারে আমরা আরও মনোযোগী হব।
শৈবাল দাশ সুমন বলেন, অভিভাবকদের হাতে দুই শিশুকে তুলে দেব আমরা। একজনের মা-বাবা এসেছেন। অন্যজনকে প্রয়োজনে আমার গাড়িতে করে প্রধান শিক্ষিকা পৌঁছে দেবেন। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে ব্যাপারে স্কুলের শিক্ষক, কর্মী, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সচেতন করব। এ যাত্রায় একটি বড় বিপদ থেকে রক্ষা পেল দুই ছাত্রী।