আড়াই লাখ পরীক্ষার্থীর পাঁচ লাখ উত্তরপত্র চ্যালেঞ্জ - দৈনিকশিক্ষা

আড়াই লাখ পরীক্ষার্থীর পাঁচ লাখ উত্তরপত্র চ্যালেঞ্জ

নিজস্ব প্রতিবেদক |

আদালতের আদেশ না থাকলে পাবলিক পরীক্ষার কোনো পরীক্ষার্থীর খাতা পুনরায় মূল্যায়ন হয় না। তবু এবার অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ হয়েছে উত্তরপত্র চ্যালেঞ্জে। ৪ঠা মে প্রকাশিত এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় কাঙ্ক্ষিত ফল না পেয়ে ২ লাখ ৬৬ হাজার ৩৪০ জন পরীক্ষার্থী সাড়ে চার লাখেরও বেশি উত্তর পত্রের নম্বর পরিবর্তন চেয়ে আবেদন করেছে। ফল প্রকাশ হবে ৩০শে মে। আন্ত:শিক্ষাবোর্ড কর্মকর্তারা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে এ খবর নিশ্চিত করেছেন।

বোর্ড কর্মকর্তাদের মতে, এ আবেদনের সংখ্যা আগের সব রেকর্ড ভেঙেছে। তারা বলেছেন, জিপিএ পদ্ধতি চালুর ১৭ বছর পর এবার প্রথম নম্বর দেখার সুযোগ পেয়েছে শিক্ষার্থীরা। এতেই অনেকে হয়েছেন হতাশ। কারণ অনেক শিক্ষার্থী ৭৮ বা ৭৯ পেয়েছে। এরকম প্রত্যেকটি গ্রেডের আগে এক বা দুই নম্বর কম পেয়েছে তারাই সবচেয়ে বেশি আবেদন করেছে। এর মধ্যে ৩২ নম্বর পেয়েও ফেল করেছে এরকম হাজার হাজার শিক্ষার্থী আছে। এবার আবেদনের সংখ্যা বেশি হওয়ার জন্য এটাই সবচেয়ে বেশি কারণ বলে জানিয়েছেন তারা। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও তিনটি ক্যাটাগরি এমসিকিউ, প্র্যাকটিক্যাল ও লিখিত নম্বরপত্র আলাদা আলাদাভাবে পরীক্ষক মূল্যায়ণ করার কারণে এমনটা হয়েছে। আবেদনের শীর্ষে থাকা বিষয়ের মধ্যে আছে গণিত, ইংরেজি, বাংলা, পদার্থ ও রসায়ন।

আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের সমন্বয়ক ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মাহবুবুর রহমান দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, গত বছর এইচএসসির পর এবার এসএসসির নম্বর দেখার সুযোগ পেল শিক্ষার্থীরা। এটাই আবেদন বাড়ার অন্যতম কারণ।

চার দিন যাবত ছুটিতে নিজ গ্রামে থাকা চেয়ারম্যান টেলিফোনে বলেন, আন্তঃবোর্ডের সিদ্ধান্ত ছিল এসএসসির নম্বর না দেয়ার। তারপরও আমি অনেকটা জোর করে নম্বর দেয়ার ব্যবস্থা করেছি। তিনি বলেন, হাইকোর্ট এইচএসসি নম্বর দেয়ার ব্যাপারে একটা নির্দেশনা দিয়েছিলেন তাও যে জানতে চায় শুধু তার। আমরা চিন্তা করলাম এখানে গোপন করার কিছু নেই। তাই পুরোপুরি নম্বর দেখার ব্যবস্থা করেছি।

এ ব্যাপারে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সিনিয়র সিস্টেম এ্যানালিস্ট প্রকৌশলী মনজুরুল কবীর বলেন, কোনো বিষয়ে ৭৮ বা ৭৯ পাওয়া অনেক পরীক্ষার্থী তার অভিভাবকসহ আবেদনের নম্বর নিয়ে সশরীরে শিক্ষা বোর্ডে হাজির হচ্ছে। তারা অনুরোধ করছেন, তার সন্তান এক নম্বরের জন্য গোন্ডেল বা জিপিএ-৫ পায়নি। কিন্তু আমাদের কিছু করার নেই। এটা পুরোই ডিজিটাল পদ্ধতিতে হয়। পরীক্ষার ফল যে প্রক্রিয়ায় তৈরি হয়, পুনঃনিরীক্ষণ একই প্রক্রিয়ায় হয়।

যশোর বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক মাধব চন্দ্র রুদ্র বলেন, কোনো শিক্ষার্থীর খাতা পুনরায় মূল্যায়ন হয় না।পুনঃনিরীক্ষণে সাধারণত মোট ৪টি বিষয় দেখা হয়। এগুলো হলো- উত্তরপত্রে সব প্রশ্নের সঠিকভাবে নম্বর দেয়া হয়েছে কি না, প্রাপ্ত নম্বর গণনা ঠিক রয়েছে কিনা, প্রাপ্ত নম্বর ওএমআর শিটে উঠানো হয়েছে কী না এবং প্রাপ্ত নম্বর অনুযায়ী ওএমআর শিটে বৃত্ত ভরাট ঠিক আছে কিনা। এসব বিষয় পরীক্ষা করেই পুনঃনিরীক্ষার ফল দেয়া হয়।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের তথ্যানুযায়ী, এবার এসএসসি পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করেছেন ৫৫ হাজার ৩৩০ জন শিক্ষার্থী। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ৪৩ হাজার ৫৮০ জন। এ বছর বিষয়ভিত্তিক আবেদন জমা পড়েছে এক লাখ ৩১ হাজার ২২টি। গত বছর ছিল এক লাখ ১৫ হাজার ৯১৩টি।

এবার বিষয়ভিত্তিক ফল চ্যালেঞ্জ করেছে সব চেয়ে গণিতে। এর সংখ্যা ১৯ হাজার। এরপর যথাক্রমে বাংলায় ১৩ হাজার ২৭৩টি, ইংরেজিতে ১৩ হাজার ১২৪টি, রসায়নে আট হাজার ৩৪২টি, পদার্থে দুই হাজার ৩২২টি।

এরপর আছে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে। এই বোর্ডে মোট ৩০ হাজার ২৪০ জন শিক্ষার্থী ৬৪ হাজার ৮৮৯টি বিষয়ের খাতার ফল পরিবর্তনের আবেদন করেছেন। এই বোর্ডে ইংরেজিতে ৪ হাজার ৪৫৯টি, গণিতে ৭ হাজার ৬৭ এবং রসায়নে ৪ হাজার ৮৭৮টি আবেদন পড়েছে। চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে ২১ হাজার ৯৩৯ জন শিক্ষার্থী ৫৭ হাজার ৮১৪টি পত্রের জন্য আবেদন করেছে। এর মধ্যে গণিতে আবেদন করেছে ৫ হাজার ৪৫, বাংলা ও ইংরেজি উত্তরপত্রের জন্য আবেদন করেছে যথাক্রমে ৩ হাজার ৭৭৯ ও ৪ হাজার ৪৮৫টি।

সিলেট বোর্ডে ১০ হাজার ৬৮ জন শিক্ষার্থী ২২ হাজার ৩২৬টি পত্রের জন্য আবেদন করেছে। এর মধ্যে গণিতে সবচেয়ে বেশি। এই পত্রের জন্য ২ হাজার ৫২৩, বাংলা ১ হাজার ৯৭৫ এবং বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচিতি ১ হাজার ৮৩২টি আবেদন পড়েছে। যশোর বোর্ডে ১৯ হাজার ৯৬০ জন শিক্ষার্থী আবেদন করেছে।

বিষয়ভিত্তিক আবেদন পড়েছে ৪৩ হাজার ৭৭০জন। রাজশাহী বোর্ডে ১৭ হাজার ৭১৪ জন শিক্ষার্থী ৩৭ হাজার ৮০৭টি পত্রের ফল পরিবর্তনের জন্য আবেদন করেছে। এর মধ্যে গণিতে ৭ হাজার ৬৯২টি, রসায়নে ৪ হাজার ৬৭৭ এবং পদার্থ বিজ্ঞানে ৩ হাজার ৭৪২টি আবেদন পড়েছে।

দিনাজপুরে ৩৭ হাজার ৩৯৭জন শিক্ষার্থী ৪৬ হাজার ৬৫৬টি পত্রের ফল পরিবর্তনের জন্য আবেদন করেছে।

বরিশাল বোর্ডে ২০ হাজার ২৩৯জন শিক্ষার্থী ৩৪ হাজার ৪০৩টি এবং কারিগরি বোর্ডে ১১ হাজার ৮৮৩ জন শিক্ষার্থী ২৫ হাজার ৭৬টি বিষয়ের ফল পরিবর্তনের জন্য আবেদন করেছে। আর মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডে ২৩ হাজার ৫০৭ জন শিক্ষার্থী ৪৩ হাজার ৮২৫টি বিষয়ের ফল পরিবর্তনের জন্য আবেদন করেছে। চলতি বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় গত সাত বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম পাসের রেকর্ড হয়। পাসের হার ও জিপিএ-৫ পাওয়ার সংখ্যা দুটিই কমেছে। এ বছর দেশের ২৮ হাজার ৩৫৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১৭ লাখ ৯১ হাজার ৯৯৩ হাজার জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পরীক্ষা দিয়েছে মোট ১৭ লাখ ৮১ হাজার ৯৬২ জন। এদের মধ্যে পাস করেছে ১৪ লাখ ৩১ হাজার ৭২২ জন। ১০টি বোর্ডে গড় পাসের হার ৮০ দশমিক তিন পাঁচ শতাংশ; আর জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৪ হাজার ৭৬১ জন।

এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ - dainik shiksha এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ - dainik shiksha পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী - dainik shiksha ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ - dainik shiksha প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0053579807281494