দেশের সব ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে মাসিক বেতন, পরীক্ষার ফির বাইরে এক শ্রেণি থেকে অন্য শ্রেণিতে ওঠার সময় কোনো প্রকার পুনঃভর্তি ও সেশন ফি বা একাডেমিক ফির নামে কোনো ফি নেয়া যাবে না বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, ফি বাড়াতে হলে ম্যানেজিং কমিটি তা নির্ধারণ করবে। এতে অভিভাবক প্রতিনিধিদের মতামত প্রাধান্য পাবে। এসব স্কুলে স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবসসহ সব জাতীয় দিবস যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে পালন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বাংলা ভাষা ও দেশীয় সংস্কৃতিচর্চার ওপর জোর দিতে। গত বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট এ রায় দিয়েছেন। ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলোর বিরুদ্ধে অতিরিক্ত টিউশন ফির অভিযোগ অতি পুরনো। এই নিয়ে পত্রপত্রিকায় বিস্তর লেখালেখি হয়েছে। আদালতের এই রায়কে আমরা খুবই ইতিবাচক হিসেবে দেখছি। এর যথাযথ বাস্তবায়ন হলে শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা সুফল পাবে। ফিরে আসবে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের পড়ালেখার শৃঙ্খলা।
এতদিন ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলে ভর্তি, বেতন, টিউশন ফি নির্ধারণে কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না। প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ নিজেদের ইচ্ছেমতো শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টিউশন ফি আদায় করত। একেক স্কুলের বেতন কাঠামো একেক রকম। সমন্বয় নেই স্কুলগুলোর কারিকুলামেও। ইচ্ছেমতো সিলেবাস প্রণয়ন করা হয়। আদালত বেশ কয়েকটি নির্দেশনা দিয়েছেন। ওই নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য এ রায় পাওয়ার এক মাসের মধ্যে সার্কুলার দিয়ে সব ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পাঠাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং প্রতি তিন মাস অন্তর অন্তর আদালতের নির্দেশনা কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে তার প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। রায়ের নির্দেশনাগুলো হলো- বেসরকারি স্কুল নিবন্ধন অধ্যাদেশ ১৯৬২ অনুসারে স্কুলগুলোতে অভিভাবকসহ শিক্ষক প্রতিনিধি নিয়ে ম্যানেজিং কমিটি গঠন করতে হবে। শিক্ষক ও স্টাফ নিয়োগের ক্ষেত্রে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে যাচাই-বাছাই করে নিয়োগ দিতে হবে। পেছনের দরজা দিয়ে কাউকে নিয়োগ দেয়া যাবে না। এতে মালিকপক্ষের কোনো প্রাধান্য থাকবে না। এক শ্রেণি থেকে অন্য শ্রেণিতে ওঠার সময় কোনো প্রকার পুনঃভর্তি ফি ও সেশন চার্জ নেয়া যাবে না। কোনো ধরনের ফি বাড়াতে হলে অভিভাবকদের মতামত নিয়ে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে। ম্যানেজিং কমিটি ভর্তি ফি, টিউশন ফি নির্ধারণ করবে। এতে অভিভাবক প্রতিনিধির মতামত প্রাধান্য পাবে। সব প্রতিষ্ঠানের অডিট রিপোর্ট ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে। জাতীয় দিবস যথাযথ মর্যাদায় পালন করতে হবে। পাশাপাশি দেশের সংস্কৃতি অনুযায়ী রবীন্দ্র-নজরুল ও বঙ্গবন্ধুসহ মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মদানকারীদের জীবনী নিয়ে অনুষ্ঠান করতে হবে। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বাংলা বিষয়ে পড়া, লেখা ও বলায় বিশেষ গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে শুধু ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলোতেই নয় বরং নামি-দামি স্কুল, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই অতিরিক্ত ফি আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। যা নিয়ে দেশের শিক্ষাবিদ থেকে শুরু করে গুণীজনরা তাদের আশঙ্কার কথাও প্রকাশ করেছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মানতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বাধ্য; অথচ তারা যখন এড়িয়ে যাচ্ছে আর এর শিকার হতে হচ্ছে অভিভাবকদের তখন বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিজেদের খেয়াল-খুশিমতো পরিচালিত হবে এটা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। একটি জাতির মেধা ও শিক্ষা অর্জনের পরিবেশকে নষ্ট করে দিতে পারে এরকম যেকোনো কার্যক্রমকে শক্ত হাতে দমন করতে হবে। শিক্ষার নামে লাগামহীন বাণিজ্য কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য অবহেলিত হলে প্রয়োজনে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নতুন আইনের মধ্য দিয়ে ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে একটি শৃঙ্খলা ফিরে আসবে আমরা এমনই প্রত্যাশা করছি।
সৌজন্যে: ভোরের কাগজ