ঈদের ছুটি বাড়ানো হবে কি না তা নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে সরকার। ছুটি বাড়ানোর নথি চালাচালি হচ্ছে কেবল, সিদ্ধান্ত হচ্ছে না। ছুটি বাড়ানোর বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবসংবলিত নথি এখন আছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র মতে, ঈদের ছুটি বাড়িয়ে ছয় দিন করার জন্য গত ২৫ জুলাই প্রস্তাব দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। চারটি সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করে ঈদের ছুটি বাড়ানোর ওই প্রস্তাব করে মন্ত্রণালয়টি। এ ক্ষেত্রে প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয় গণপরিবহনের ওপর মাত্রাতিরিক্ত চাপকে। দীর্ঘ যানজটের কারণে সৃষ্ট দুর্ভোগ কমানোর জন্য ঈদের ছুটি বাড়ানো দরকার বলে মনে করছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় আরো মনে করে, ঈদের আগে ও পরে সড়ক দুর্ঘটনায় যেসব প্রাণহানি হয় তা লাঘব করা এবং ঈদের পরে অফিস খোলা হলেও কর্মচারীদের অনুপস্থিতি রোধ করার জন্য ঈদের ছুটি বাড়ানো প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো ছুটির প্রস্তাবেও ওই চারটি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ইনোভেশন টিম নৈমিত্তিক ছুটি ২০ দিন থেকে কমিয়ে ১৪ দিন নির্ধারণ করে বাকি ছয় দিন দুই ঈদের ছুটির সঙ্গে সমন্বয় করা এবং ঈদের ছুটির সঙ্গে ঐচ্ছিক ছুটি বাতিল করার প্রস্তাব দেয়।
অন্য ধর্মাবলম্বীদের প্রধান দুটি ধর্মীয় উৎসবের সরকারি ছুটির সঙ্গে দুই দিন করে চার দিন ঐচ্ছিক ছুটির প্রস্তাব করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এমন প্রস্তাব দেওয়ার পরও নিয়মতান্ত্রিকভাবে ছুটির প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানোর পর তা নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে সরকার।
সরকারের একজন গুরুত্বপূর্ণ সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সরকারের নীতিনির্ধারকরা ঈদের ছুটি বাড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন। এ জন্যই ২৫ জুলাই এসংক্রান্ত প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানোর পরও তা নিয়ে কোনো অগ্রগতি নেই। ওই সচিব বলেন, এরই মধ্যে ঈদের আমেজ শুরু হয়ে গেছে। রেলওয়ে অগ্রিম টিকিট ছাড়ার সিডিউল ঘোষণা করেছে। এখনই ছুটির সিদ্ধান্ত জরুরি। কারণ পরে ছুটি ঘোষণা করা হলে তা কর্মচারীদের খুব একটা কাজে আসবে না।
ওই সচিব জানান, ঈদের ছুটি বাড়াতে হলে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে মন্ত্রিসভায়। কারণ বছরের ছুটি অনুমোদন করে মন্ত্রিসভা। সেখানে পরিবর্তন আনতে হলে বিষয়টি মন্ত্রিসভায় নিতে হবে।
এর আগেও ঈদের ছুটি বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। গত ঈদুল ফিতরের সময় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ছুটি বাড়ানোর প্রস্তাব দিলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বলা হয়েছিল, শুধু ঈদের ছুটি বাড়ানো নয়, অন্যান্য প্রধান ধর্মাবলম্বীদের বড় ধর্মীয় উৎসবের ছুটিও বাড়ানো দরকার। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ওই অভিমত পাওয়ার পর বিষয়টি ইতিবাচক ধরে নিয়েই সংশোধিত প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ঈদুল ফিতরের আগে আর ছুটি বাড়ানোর প্রস্তাবে সায় দেননি প্রধানমন্ত্রী। সেই সময় ছুটি না বাড়ানোর কারণ হিসেবে অর্থবছর শেষ এবং সংসদে বাজেট পাস করার বিষয় সামনে আনা হয়েছিল।
ঈদুল ফিতরের মতো ঈদুল আজহায়ও ছুটি বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ঈদুল ফিতরের ঈদের ছুটির সঙ্গে দুই দিনের সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় দূরে বসবাসকারীদের পক্ষে বাড়ি গিয়ে প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু এবারের ঈদে তিন দিনের অনুমোদিত ছুটির দুই দিনই পড়েছে সাপ্তাহিক ছুটি শুক্র ও শনিবার। এর সঙ্গে রবিবার ঈদের ছুটি থাকবে। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে এবার ঈদুল আজহা হতে পারে আগামী ২ সেপ্টেম্বর শনিবার। তাই ঈদের ছুটি শুরু হবে আগের দিন শুক্রবার থেকে। আর শেষ হবে রবিবারে। এ অবস্থায় সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে এবার ঈদের ছুটির চাহিদা বেশি। সব দিক বিবেচনা করেই ঈদের ছুটি বাড়ানোর প্রস্তাব পাঠিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশে ছুটি নিয়ে নানা অব্যবস্থাপনা চলছে। বছরে ২০ দিন নৈমিত্তিক ছুটি ভোগ করেন সরকারি কর্মচারীরা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এই ছুটির কোনো রেকর্ড থাকে না। সরকারি কর্মচারীরা নিজের ডেস্কে নৈমিত্তিক ছুটির দরখাস্ত রেখে ছুটিতে চলে যান। ছুটি থেকে ফিরে এসে বেশির ভাগ কর্মচারী সেই দরখাস্ত গায়েব করে ফেলেন। তাঁরা দরখাস্ত রেখে যান ছুটিতে থাকাকালে কোনো সমস্যা হলে তা থেকে মুক্তি পাওয়ার কৌশল হিসেবে। এ অবস্থায় নৈমিত্তিক ছুটি কমিয়ে ঈদের ছুটি বাড়ানো হলে সেটি সব দিক দিয়েই ভালো হবে।
এর আগে পুলিশের পক্ষ থেকেও ঈদের ছুটি বাড়ানোর আর্জি জানানো হয়েছিল। ছুটি বাড়ানোর পক্ষে তাদের যুক্তি ছিল—ছুটি বাড়ানো হলে এক দিনে রাস্তার ওপর মাত্রাতিরিক্ত চাপ পড়বে না। ঘরমুখো যাত্রীরা তাদের সুবিধামতো সময়ে বাড়ি যেতে পারবে। এতে করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষে কাজ করা সুবিধাজনক হবে। ঈদের ছুটি বাড়ানো নিয়ে এর আগে সচিব সভায়ও সিদ্ধান্ত হয়েছে। আলোচনা হয়েছে মন্ত্রিসভা বৈঠকেও।
ঈদের ছুটি কম হলে যারা দূরে থাকে তাদের পক্ষে পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদ করা সম্ভব হয় না। যাওয়া-আসা করতে পথেই সময় শেষ হয়ে যায়। বাইরের অনেক দেশে জাতীয় ও ধর্মীয় উৎসবে দীর্ঘদিন ছুটি দেওয়া হয়।