সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর ডেন্টাল ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলে ‘উপজাতি’ কোটায় চারজন বাঙালি শিক্ষার্থীকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। অথচ ডেন্টালের পরীক্ষায় পাস নম্বর পেয়েও উপজাতি ভর্তিচ্ছুক পরীক্ষার্থীরা এই কোটায় মনোনয়ন পাননি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঘোষিত ভর্তি পরীক্ষার ফলে বাঙালি শিক্ষার্থীদের এই মনোনয়ন দেখা গেছে।
গত ১০ অক্টোবর সরকারি ডেন্টাল কলেজ ও মেডিকেল কলেজের ডেন্টাল ইউনিটে ভর্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয়, পশ্চাদপদ জনগোষ্ঠীর জন্য ১০টি সংরক্ষিত আসনসহ মোট ৫৩২টি আসন আছে। পশ্চাদপদ জনগোষ্ঠীর পাঁচটি আসনে একজন ক্ষুদ্র জাতিসত্তার ক্ষুদ্র জাতিসত্তার সদস্যসহ চারজন বাঙালি মনোনীত হয়েছেন। ফলাফল অনুযায়ী, উপজাতি কোটা পাওয়া চার শিক্ষার্থী হলেন রাগিব শাহরিয়ার, ফারহানা নাজনীন, এ টি এম তানভীর হাসান ও ফারজানা মুনমুন চৌধুরী।
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (শিক্ষা ও জনশক্তি উন্নয়ন) অধ্যাপক এম এ রশিদ বলেন, ‘উপজাতি’ কোটায় বাঙালি ভর্তির সুযোগ নেই। অনেক সময় আবেদনকারীরা উপজাতি কোটায় ভুল করে টিক দেন। এতে করে ফলাফলে তারা মনোনয়ন পান। যেসব বাঙালি ‘উপজাতি’ কোটায় নিয়োগ পেয়েছেন, তারা সনদ দেখাতে না পারলে ভর্তি বাতিল হয়ে যাবে। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র থেকে জানা গেছে, ডেন্টালের ভর্তিতে উপজাতি কোটায় মনোনয়ন পেতে দুই শতাধিক বাঙালি শিক্ষার্থীর আবেদন জমা পড়েছে।
‘উপজাতি’ কোটায় বাঙালি শিক্ষার্থীর মনোনয়ন পাওয়ার খবরটি অত্যন্ত দুঃখজনক। উপজাতিরা প্রাপ্য ৫টি আসন থেকে কেন মাত্র একটি আসন পেল তা অবশ্যই খতিয়ে দেখা দরকার। এ ঘটনা থেকে সহজেই বোঝা যায়, সংরক্ষিত আসনের সিংহভাগ চলে গেছে অন্য কারো হাতে। অর্থাৎ উপজাতি কোটা বেহাত হওয়ার আশঙ্কাই তৈরি হয়েছে।
আমরা জানি, রাষ্ট্র আদিবাসী তথা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর স্বার্থ সংরক্ষণে অঙ্গীকারাবদ্ধ। অথচ তাদের জীবনযাত্রা ও শিক্ষার মানোন্নয়নে যে কোটা পদ্ধতি চালু করা হয়েছিল সেখানেও এখন নব্য সুবিধাবাদ প্রাধান্য পাচ্ছে। আমরা মনে করি, এটি রাষ্ট্রের জন্য একটি নৈরাশ্যকর বার্তা বহন করে। প্রশ্ন হলো, পরীক্ষার সময় ছাত্ররা যদি ভুল করেই থাকে টিক দেয় তবে সেটি ধরা হলো না কেন? বিষয়টি তখনই সংশোধন করে নেয়ার সুযোগ ছিল। সেটি না করে এখন যদি ‘ইচ্ছাকৃত’ কিংবা ‘অনিচ্ছাকৃত’ ঐ ভুলটাকে কোনভাবে জায়েজ করে নেয়ার পথ তৈরি হয় তবে সেটি হবে আরও বড় অপরাধ।
‘উপজাতি’ কোটায় শুধু উপজাতি বা আদিবাসী মানুষরাই বিবেচিত হবে। এর বাইরে ঐ কোটায় অন্য কারও মনোনয়ন কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
আমরা এই ভুল মনোনয়ন বাতিল দাবি করি। এ ঘটনা অবশ্যই তলিয়ে দেখা প্রয়োজন। যারা এ ধরনের অপকর্ম করে আদিবাসীদের ন্যায্য অধিকার হরণ করতে চায়, তাদের মুখোশ উন্মোচন করতে হবে। এমন ঘটনা যেন আর না ঘটে সে ব্যাপারে রাষ্ট্রকে সতর্ক হতে হবে।
সৌজন্যে: দৈনিক সংবাদ