উপাচার্যের ক্ষমতা কাগজে কলমে, বাস্তবে নেই - দৈনিকশিক্ষা

উপাচার্যের ক্ষমতা কাগজে কলমে, বাস্তবে নেই

নিজামুল হক |

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনে উপাচার্যকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলা হলেও ট্রাস্টি বোর্ডের প্রভাবে অসহায় তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের মান উন্নয়নে যে ভূমিকা রাখার জন্য রাষ্ট্রপতি তাকে নিয়োগ দেন, ট্রাস্টি বোর্ডের অযাচিত হস্তক্ষেপে তা তিনি করতে পারেন না। শিক্ষার মান ও শিক্ষার্থীদের পক্ষে নয়, ট্রাস্টি বোর্ডের নির্দেশনা মানতে এবং নৈতিক-অনৈতিক সুবিধা দিতেই ব্যস্ত থাকতে হয়। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া এ চিত্র প্রায় প্রতিটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের।

দেশের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, দৈনন্দিন প্রায় সব বিষয়েই উপাচার্যদের ওপর প্রভাব বিস্তার করেন ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যরা। শিক্ষার্থীদের নয়, ট্রাস্টি বোর্ডের স্বার্থই সব সময় দেখতে হয় উপাচার্যকে। ট্রাস্টি বোর্ডের সব সিদ্ধান্তের পক্ষেই তাকে কাজ করতে হয়। শিক্ষার মান উন্নয়নের ভূমিকা রাখার সুযোগ কমই দেওয়া হয় তাকে। শুধু তাই নয়, ট্রাস্টি বোর্ডের কোনো কাজের বিরোধিতা করলেই বিপাকে পড়তে হয় তাকে। পদ ছাড়তে বাধ্য করা হয়।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় দেখভালের দায়িত্বে থাকা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (্ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বিষয়টির সাথে সহমত পোষণ করেন। তিনি বলেন, ৮/১০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে যারা উপাচার্যের কর্মকাণ্ডে হস্তক্ষেপ করে না। এর বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ট্রাস্টি বোর্ডের অযাচিত হস্তক্ষেপের কারণে উপাচার্য ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করতে পারেন না। ট্রাস্টি বোর্ড নানা অনিয়ম করে। আর্থিক হিসাব ঠিক মতো দেয় না। ব্যবস্থা নিতে গেলেই মামলা করে দেয়।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ অনুযায়ী ট্রাস্টি বোর্ডের প্রস্তাবের আলোকে রাষ্ট্রপতি ৪ বছরের জন্য একজন শিক্ষককে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসাবে নিয়োগ দেন। এই আইনে বলা হয়েছে, উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নির্বাহী এবং একাডেমিক কর্মকর্তা হবেন এবং তিনি সিন্ডিকেট এবং বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য দায়ী হবেন।

বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী প্রধান নির্বাহী কর্তৃপক্ষ সিন্ডিকেট। এই কর্তৃপক্ষের বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক, প্রশাসনিক কার্যাবলী ও সাধারণ ব্যবস্থাপনা তত্ত্বাবধান ও পরিচালনার ক্ষমতা রয়েছে এবং এই কমিটির সভাপতি উপাচার্য। এছাড়া উপাচার্য একাডেমিক কাউন্সিল, শিক্ষক নিয়োগ কমিটির সভাপতি এবং অন্যান্য সকল কমিটির সদস্য।

রাজধানীর বনানীতে অবস্থিত একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উপাচার্য পদ ছাড়তে হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষককে। এই উপাচার্য বলেন, ট্রাস্টি বোর্ড নানা অনিয়মের সাথে জড়িত থাকে।

ট্রাস্টি বোর্ডের অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার বিরোধিতা করায় বসুন্ধরা এবং উত্তরাতে দুটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং উপ-উপাচার্যকে পদ ছাড়তে হয়েছে।

ট্রাস্টি বোর্ডের ক্ষমতা অপব্যবহারের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মানের বিবেচনায় ঘুণে ধরছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। নানা অনিয়ম, দুর্নীতি যেন নিত্যসঙ্গী। বিশ্ববিদ্যালয় আইন মানার প্রতিও অনীহা তাদের। ইচ্ছেমতো টিউশন ফি নির্ধারণ করে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়ের টাকা ভাগবাটোয়ারা করে নেওয়া হচ্ছে। ইউজিসির কর্মকর্তারা বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আর্থিক ক্ষেত্রে নানা অনিয়ম করে থাকে। কোনো বিধিবিধান না মেনেই টাকা খরচ করে। তাই ইচ্ছেমতো ফার্ম দিয়ে অডিট করানোর জন্য মন্ত্রণালয়কে প্রস্তাব করে যাতে ওই অডিট ফার্মের মাধ্যমে নিজেদের সব আর্থিক অনিয়ম জায়েজ করে। উপাচার্যকে ক্ষমতা দেয়া হলে এত অনিয়ম হতে পারতো না।

সংশ্লিষ্টদের মতে, শিক্ষা উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য কোনো বিধিমালা না থাকার সুযোগে সরকার দলীয় নেতা, কর্মীরা এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য হয়েছেন। আর তারা এটাকে দেখছেন শতভাগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হিসেবে।

তবে ট্রাস্টি বোর্ডে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা কমানোর প্রস্তাব রেখেছে জাতীয় সংসদের শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় সাব-কমিটি।

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0057909488677979