একচল্লিশ বছরের পিতৃহীন এক জাতি। পিতা হারানোর ধকল আজো সয়ে চলেছে। বাবার মৃত্যুর পর কোনো পরিবার যেমন অগোছালো হয়ে পড়ে, তেমনি পিতাকে হারিয়ে আমাদের জাতিটা আজো গতি খোঁজে পায়নি। ভাগ্যিস, তাঁর সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা না থাকলে হয়তো বা এতোদিনে আমরা আমাদের স্বাধীনতাই হারিয়ে বসতাম । নিজের জীবনের উপর শত ঝুঁকি নিয়ে ও তিনি বাবার হাতে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। ধন্য বাবার ধন্য সন্তান। জয়তু শেখ হাসিনা ।
বঙ্গবন্ধু ছিলেন বিশ্ব মাপের নেতা। তাঁর বলিষ্ট নেতৃত্বে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ নামের এক স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যুদয়। কবির ভাষায় –
‘সাবাস বাংলাদেশ।অবাক পৃথিবী তাকিয়ে রয়,
জ্বলে পুড়ে ছারখার।তবু, মাথা নোয়াবার নয়।’
সারা বিশ্ব বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করেছে বঙ্গবন্ধুর সম্মোহনী নেতৃত্ব। একজন ক্যারিশমেটিক নেতা হিসেবে তিনি বিশ্ববাসীকে তাঁর ক্যারিশমা দেখিয়ে যেতে পেরেছিলেন। ৭ মার্চের ভাষণ সারা দুনিয়ার অদ্বিতীয় এক ভাষণ। এ ভাষণে স্বাধীনতা অর্জন ও মুক্তিযুদ্ধের চমৎকার নির্দেশনা জাতি পেয়ে যায়। আব্রাহাম লিংকনের ঐতিহাসিক ‘গেটিসবার্গ ‘-এর ভাষণকে ও যেন ছাড়িয়ে যায় বঙ্গবন্ধুর এ ভাষণ। এই একটি মাত্র ভাষণ বাঙ্গালি জাতিকে এক অকুতোভয় বীরের জাতির মর্যাদার আসনে পৌঁছে দেয়। মানুষ আজো কান পেতে শুনে বঙ্গবন্ধুর সে ভাষণ। বিশ্বের আর কোনো নেতা কোনোদিন এরকম তেজোদীপ্ত ও জ্বালাময়ী ভাষণ দিতে পেরেছিলেন কী-না, কে জানে? প্রতি বছর ৭ মার্চ, ১৭ মার্চ, ২৬ মার্চ, ১৬ ডিসেম্বর, ১৫ আগস্টসহ নানা জাতীয় দিবসে জাতির জনকের এ ভাষণ গোটা জাতিকে আলোড়িত ও আন্দোলিত করে।
বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করার সাহস ঘাতকেরা কোথা পেয়েছিল? কতো বড় দুঃসাহস ওদের! বঙ্গবন্ধুর একটা দুর্বলতা ছিল। সে এক বড় দুর্বলতা। সেটি হচ্ছে, তিনি এ দেশের মানুষকে বড্ড বেশী ভালবাসতেন। সে অত্যধিক ভালবাসাই তাঁর নিজের ও তাঁর স্বজনদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ঘাতকেরা বঙ্গবন্ধুকে প্রাণে মেরেছে বটে, কিন্তু তারা তাঁকে আদর্শিক হত্যা করতে পারেনি। তাঁর আদর্শ ও চিন্তা চেতনা আজ চির ভাস্বর হয়ে ওঠেছে। নিত্যদিন বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠছেন মানুষের আত্মার পরমাত্মীয়। তাঁর স্বপ্নের চিন্তাধারায় এগিয়ে যাচ্ছে সোনার বাংলাদেশ।
বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে সেটি কেবল এ দেশের জন্য নয়, গোটা বিশ্বের জন্য এক বড় আশীর্বাদ হতো। বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু নিশ্চয় বিশ্ব নেতার ভূমিকাই পালন করতেন। ঘাতক শয়তানের দল বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে বিশ্ব বাসীকে তাঁর অসীম ও অনন্য অবদান থেকে বঞ্চিত করেছে।
জাতির জনকের প্রয়াণ দিবসে ঘাতক-কুলাঙ্গারদের চরম ঘৃণা জানিয়ে তাদের মুখে থুথু দেবার বড় সাধ মনে জাগে।
লেখক : অধ্যক্ষ, চরিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, কানাইঘাট, সিলেট।