শিক্ষার্থীর টাকা লুটপাটের রাস্তা বন্ধের ব্যবস্থা রেখে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি নীতিমালা প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবিত এ নীতিমালা অনুমোদনের জন্য মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি। প্রস্তাব অনুযায়ী, মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হবে। এবার সাড়ে ১৬ লাখ শিক্ষার্থীর একাদশ শ্রেণীর ভর্তি কার্যক্রমে অংশ নেয়ার সম্ভাবনা আছে।
এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণরাই একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হয়ে থাকে। আগামী ১০ মে’র মধ্যে এ পরীক্ষার ফল প্রকাশ করতে চাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সে লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর সময় চেয়ে দু-এক দিনের মধ্যে সারসংক্ষেপ পাঠানো হবে বলে জানা গেছে।
তৃতীয়বারের মতো এবারও ভর্তি কার্যক্রম অনলাইন ও এসএমএসে সম্পন্ন করা হবে। দু’বছর ধরে শিক্ষার্থীরা ভর্তির ক্ষেত্রে লুটপাটের শিকার হচ্ছে। একটি কলেজে ভর্তি হওয়ার পর আরেকটিতে গেলে আগের কলেজে দেয়া ভর্তির টাকা ফেরত পেত না তারা। এ কারণে অনেককে একাধিক কলেজে ভর্তি ফি দিতে হয়েছে। এবার একবারই ভর্তির বিধান করা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে একটি কলেজে চান্স পেলে সেখানে শুধু ১৮৫ টাকা রেজিস্ট্রেশন ফি জমা দিয়ে ভর্তির সুযোগ রাখা হচ্ছে। কলেজ চূড়ান্ত হওয়ার পরই শুধু শিক্ষার্থী প্রতিষ্ঠানের সবধরনের ফি জমা দেবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ভর্তি নীতিমালার একটা খসড়া আমরা তৈরি করেছি। সেটি চূড়ান্ত করবেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি অনুমোদন না দেয়া পর্যন্ত নীতিমালা সম্পর্কে কিছুই বলা যাচ্ছে না।’
৯ এপ্রিল বিভিন্ন বোর্ডের চেয়ারম্যানকে নিয়ে গঠিত ওই সমন্বয় কমিটির বৈঠক ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে গত ৬ মার্চ আরেক দফা বসেছিলেন কমিটির সদস্যরা। কমিটির একজন সদস্য জানান, বিগত দু’বছরের অভিজ্ঞতা সামনে রেখে তারা এই খসড়া নীতিমালা শিক্ষার্থীবান্ধব করার চেষ্টা করেছেন।
প্রস্তাবিত নীতিমালা অনুযায়ী, এবার মোট তিনবার মেধাতালিকা প্রকাশ করা হবে। প্রতিবার একজন শিক্ষার্থীর একটিমাত্র কলেজের নাম থাকবে তালিকায়। শিক্ষার্থীরা এবার একাদশ শ্রেণীতে একবারই ভর্তি হবে। অনলাইন বা এসএমএসে সর্বোচ্চ ১০টি কলেজের নাম আবেদনকালে পছন্দের তালিকায় দেবে। সেখান থেকে প্রথমে মেধার বিচারে উপরের দিকের কলেজে শিক্ষার্থীকে মনোনয়ন দেয়া হবে। সেটি পছন্দ হলে রেজিস্ট্রেশন ফি জমা দিয়ে নিজের ভর্তি নিশ্চিত করবে। একবার তালিকায় জায়গা পেলে শিক্ষার্থীকে অবশ্যই ভর্তি হতে হবে।
পছন্দের ১০টি কলেজে আবেদনকারীর সংখ্যা ও শিক্ষার্থীর মেধা অনুযায়ী যদি কেউ প্রথমবার তালিকায় স্থান না পায়, তাহলে তাকে দ্বিতীয়বারের তালিকার জন্য আবেদন করতে হবে। তবে ফি একবারই নেয়া হবে। কেউ যদি ভর্তি হওয়া কলেজে পড়তে না চায় তাহলে তাকেও মাইগ্রেশনের জন্য আবেদন করতে হবে। এরপর মাইগ্রেশনের আবেদনকারী এবং প্রথম তালিকায় ঠাঁই না পাওয়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে দ্বিতীয় তালিকা প্রকাশ করা হবে।
দ্বিতীয় তালিকায় যারা চান্স পাবে, তাদের অবশ্যই ভর্তি হতে হবে। যদি এ তালিকারও কেউ কলেজ পরিবর্তন করতে চায় তাহলে তাকে ফের মাইগ্রেশনের সুযোগ দেয়া হবে। এই মাইগ্রেশনের শিক্ষার্থী এবং দ্বিতীয় তালিকায়ও ঠাঁই না পাওয়াদের নিয়ে তৃতীয় তালিকা প্রকাশ করা হবে। এ তালিকার শিক্ষার্থীদের জন্য নির্দিষ্ট কলেজে প্রত্যেককে ভর্তি হতে হবে।
তৃতীয় তালিকার পর আর কোনো তালিকা প্রকাশ করা হবে না। এ তালিকার পর যখন শিক্ষার্থীরা রেজিস্ট্রেশন ফি দিয়ে কলেজ পেয়ে যাবে, এরপর প্রত্যেকে নিজ নিজ কলেজের নির্ধারিত ফি জমা দেবে।
একজন চেয়ারম্যান জানান, আগে দ্বিতীয় বা তৃতীয় তালিকায় কেউ পছন্দের কলেজে চান্স পেলে প্রথমে ভর্তি হওয়া কলেজে দেয়া টাকা ফেরত পেত না। সেটা এক ধরনের লুটপাট ছিল। এখন শিক্ষার্থীর শুধু রেজিস্ট্রেশন ফি নষ্ট হবে। ফলে আগে যেখানে শিক্ষার্থীকে একাধিকবার মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে ভর্তি হতে হয়েছে, এবার সেখানে একবারই সর্বশেষ ভর্তির টাকা দিতে হবে।
গত বছর একজন শিক্ষার্থী মেধা অনুযায়ী ২০টি কলেজের মধ্যে যতটিতে চান্স পেয়েছে, সব কটির নাম প্রকাশ করা হয়েছে। এবার শুধু মেধা অনুযায়ী পছন্দের শীর্ষের কলেজটি পাবে। বাকি নাম প্রকাশ করা হবে না। ভর্তির কাজ সহজ করতে এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
এবার ভর্তির সঙ্গে রেজিস্ট্রেশন কাজও সম্পন্ন করা হবে। গত বছর ভর্তি করা শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া এখনও চলছে বলে জানা গেছে। ভর্তি কার্যক্রম ৩০ জুনের মধ্যে শেষ করে ১ জুলাই ক্লাস শুরু করার চিন্তাভাবনা আছে সরকারের। গত বছর মে-জুন মাসে ভর্তি প্রক্রিয়া শেষে ১০ জুলাই ক্লাস শুরু হয়। কিন্তু অপেক্ষমাণ তালিকার ভর্তি প্রক্রিয়া আগস্ট মাসেও চলে।