এন আই খানের বর্ণনায় সড়ক দুর্ঘটনা - দৈনিকশিক্ষা

এন আই খানের বর্ণনায় সড়ক দুর্ঘটনা

নিজস্ব প্রতিবেদক |
সপরিবারে এক গাড়ীতে চট্রগাম থেকে কক্সবাজার যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় পতিত হন বিশিষ্ট শিক্ষা সংস্কারক ও সাবেক শিক্ষা সচিব মো. নজরুল ইসলাম খান। গাড়ীতে থাকা সবা্ই কমবেশি আহত হয়েছেন। তবে, তাঁর স্ত্রী ফেরদৌস আরা খানের পা ভেঙ্গেছে এবং ২২শে মার্চ ধানমন্ডির একটা হাসপাতালে সফল অস্ত্রোপাচার সম্পন্ন হয়েছে। দুর্ঘটনার অবিকল বর্ণনা দৈনিকশিক্ষার পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো:
পর্ব-১
‘দুঃস্বপ্ন একসিডেন্ট ১৩ মার্চ ২০১৭ বিকাল আনুমানিক ৩ টায় চট্টগ্রাম- কক্সবাজার রোড, লোহাগাড়া বার আউলিয়া কলেজের সামনে।
সামনে না দেখতে পেলে ভালো লাগে না তাই সামনের সিটে বসি। সামনের ছিটে একই সিট বেল্টের মধ্যে বাঁধা আমি আর দৌহিত্রী  ‘তদুক্ষিপা’ সামনে তাকিয়ে আছি। হঠাৎ গাড়িটা পাগলা ঘোড়ার মত লাফ দিল। ডানহাত শক্ত করে তদুকে আর বা হাতে গাড়ির রেলিং চেপে ধরলাম।
দেখলাম গাড়িটার সামনের বা-কোনা বড় মেহগনি গাছে লাগতে যাচ্ছে। সেকেন্ডের ভগ্নাংশে চিন্তা এলো- লাগলে গাড়িটা উল্টে গড়া খাবে, সবাই মারা যাবো। ড্রাইভার ‘সুজনের’ পা সম্ভবত ব্রেক থেকে আলগা হয়ে গেছে তাই স্টেরিং-এ বুক চেপে দু’ হাতে মরিয়া হয়ে ডাইনে টান দিল। কাজ হলো। ঐগাছে লাগলো না।
গাড়ী মাটিতে চাকা পেল। পেলে কী হবে ? আগের দিন সম্ভবত রাতে বৃষ্টি হয়েছিলো। লাফ দিয়ে মাটিতে পড়তেই আবার বা-দিকে ঘুরে গেল। আরো দূরে একটা মেহগনি গাছে গাড়ীর সামনের মাঝামাঝি ধাক্কা দিল। বুকে মনে হলো কেউ বড় একটা বাঁশ দিয়ে বাড়ি দিলো, ‘ঢপ’ করে শব্দ হলো। আর কিছু দেখতে পাচ্ছি না। দম নিতে পারছি না। কষ্ট, মনে হলো মরে যাচ্ছি। মিনিট খানেক পর আবছা দেখতে পেলাম। পিছনে তাকিয়ে দেখলাম আমার স্ত্রী’র নাক-মুখ দিয়ে অঝর রক্ত বের হচ্ছে। চোখ ঘোরাতে রাশেদার নাক দিয়ে রক্ত বের হতে দেখলাম। তদুক্ষিপার নাক-মুখে রক্ত, কাঁপছে আর চিৎকার করছে। চেষ্টা করলাম বের হতে পারি কী না ? মাথা ঘুরছে। চোখ অন্ধকার এরপর আর বলতে পারি না। তাকিয়ে দেখি হাসপাতালে।’

পর্ব-২

এক্সিডেন্ট: সড়কে সবসময় সিটবেল্ট বাঁধবেন
আমি বরাবর ডাক্তারদের ফাউন্ডেশনে “মানুষ সৃষ্টি আর মানুষের সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়া” নিয়ে ক্লাস নিই। মাঝে মধ্যে বাদ যায়। বিষয়টি ফাউন্ডেশন কোর্সে আমি অন্তর্ভুক্ত করিয়েছি। কারণ, আমাদের এই উপমহাদেশে মানুষ সৃষ্টির কোন প্রমাণ নেই। তা হলে আমরা কোথা থেকে আসলাম? আমরা কারা ? বাঙালির উৎপত্তিই বা কি করে হলো ? আমরা আমাদের সম্পর্কে না জানলে আমরা কেমন জাতি ?
কক্সবাজার বিয়ামে ফাউন্ডেশন কোর্সে প্রশিক্ষক হিসেবে অংশ নেয়ার জন্য ভোর চারটায় উঠে ৫ টায় ঢাকা থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা হই। পথে বেশ কয়েক জায়গায় যানযটে বিলম্ব। বিকাল তিনটার কাছাকাছি লোহাগাড়া’র বার আউলিয়া ডিগ্রি কলেজের কাছে পৌঁছাই। আমি পরদিন সারাদিন ১৪ ই মে মানুষ, ডিজিটাল আর শিক্ষা সম্পর্কে ক্লাস নিব। অন্য সবাই কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত উপভোগ করবে।
গাড়ীতে আমার সাথে আমার বড় মেয়ের মেয়ে তদুক্ষিপা সামনের ছিটে একই সিট বেল্টের মধ্যে। স্ত্রী ফেরদৌস আরা খান আমার পিছনের সিটে। অন্তঃত চারবার সিটবেল্ট বাঁধতে বলেছি সে বেল্ট খুঁজে পায়নি। আমার জানা মতে ভিতরে ঢোকানো। বড় মেয়ে মা’র কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে ছিলো। এর পিছনে রাশেদা আর নাসরিন। এরা কখনও পাহাড় বা সমুদ্র দেখিনি। তাই সাথে নেয়া। আমরা বেশ খোশ মেজাজে গল্প করতে করতে যাচ্ছি। পথিমধ্যে ফেনী সার্কিট হাউজে থেমে বাসা থেকে আনা খিচুড়ি-ডিম-মাংস খেলাম,কোন ক্লান্তি নেই।

পর্ব-৩

সড়কে সচেতন থাকবেন, আনমনা থাকবেন না
আমি, বড় মেয়ে ফ্রিডা, নাসরিন আর ড্রাইভার ছাড়া সবার নাক মুখ দিয়ে রক্ত বের হয়েছে।
আমি সামনে তাকিয়ে ছিলাম। ড্রাইভার সুজন গাড়িটার সামনে একটা বেবিট্যাক্সি বাঁচাতে গেল সামনে স্পীড ব্রেকার দেখতে পায়নি। তাই বাঁধা পেয়ে গাড়িটা পাগলা ঘোড়া হয়ে গেল। আমি বা-হাত দিয়ে গাড়ীর সামনের রেলিং চেপে ধরলাম কিন্তু ফসকে গেল। চেপে ধরলে ফস্কে না গেলে হয়তো হাত ভেঙে যেতো। ধরে রাখার জন্য বুকের ধাক্কা কিছুটা কম লেগেছে। তারপরও থুতনি ও ডান মোড়ায় প্রচন্ড ব্যাথা পেয়েছি। ভাবলাম ভেঙে গেছে। হাত ফুলে গেছে, ব্যাথা পেয়েছি। ডানহাত দিয়ে তদুকে ধরার জন্য তার মুখে কম ধাক্কা লেগেছে নতুবা দাঁত ভেঙে যেতো। তবুও নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বেরিয়েছে। দাঁতে ঠোঁটে লেগে কেটে গেছে।
থুতনির নীচে সবাই ব্যাথা পেয়েছে- আমিও। সম্ভবত প্রথম ধাক্কায় মাথা পিছনের দিকে গেলে মাথা সোজা হওয়ার আগেই সামনে আছড়ে পড়ে থুতনির নীচে ধাক্কা খায়। আমার বুকের ডান পাঁজরের নীচে প্রচন্ড ব্যাথা যা এখনও আছে। কী করে লাগলো জানি না, সিট বেল্টের টানে না গিয়ার বক্সের মাথার নবের বাড়ি বলতে পারব না। গিয়ারের ডান্ডার বাড়ি তদুক্ষিপার পায়ে লেগে পা ফুলে ঢোল। ভাবলাম ভেঙে গেছে।
বড় মেয়ের ‘কলার বোন’ আচড়ে গেছে। থুতনির নীচে রক্ত জমে গেছে। তবে সে অপেক্ষাকৃত কম আহত। আমাদের দেখাশুনা করার মতো আছে। হাসপাতাল আমার রক্তচাপ স্বাভাবিক পেলো। আমিও সক্ষম। রাশিদার নাক দিয়ে রক্ত বেরিয়েছে। নাসরিন ঘাড়ে ব্যাথা পেয়েছে তবে মোটামুটি অক্ষত।

চলবে….

রোজায় স্কুল: শিক্ষার্থী উপস্থিতি কম, নজরদারিও ঢিলেঢালা - dainik shiksha রোজায় স্কুল: শিক্ষার্থী উপস্থিতি কম, নজরদারিও ঢিলেঢালা পেনশন প্রজ্ঞাপনে উদ্বিগ্ন ঢাবি উপাচার্য - dainik shiksha পেনশন প্রজ্ঞাপনে উদ্বিগ্ন ঢাবি উপাচার্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গবেষণা অনুদান করমুক্ত - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গবেষণা অনুদান করমুক্ত ব্রাজিলে তীব্র গরমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ - dainik shiksha ব্রাজিলে তীব্র গরমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের নামে প্রতারণা, সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের নামে প্রতারণা, সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উচ্চ মাধ্যমিকের সমমান পেলো ‘হেট’ - dainik shiksha উচ্চ মাধ্যমিকের সমমান পেলো ‘হেট’ আটকের ১৩ দিন পরেও বরখাস্ত হননি অধ্যক্ষ - dainik shiksha আটকের ১৩ দিন পরেও বরখাস্ত হননি অধ্যক্ষ please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0035531520843506