এমপিওভুক্তিতে ঘুষ লেনদেনে বিশ্বস্তদের পাশে রাখেন উপপরিচালক - দৈনিকশিক্ষা

এমপিওভুক্তিতে ঘুষ লেনদেনে বিশ্বস্তদের পাশে রাখেন উপপরিচালক

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি |

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) ময়মনসিংহ অঞ্চলের কার্যালয়ে শিক্ষকদের এমপিওভুক্তি নিয়ে ব্যাপক দুর্নীতি ও হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। ঘুষের টাকা লেনদেন করতে অতিবিশ্বস্ত হিসেবে শিক্ষক স্ত্রীকে নিজের অফিসে বদলি করে এনেছেন ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক এএসএম আবদুল খালেক। তার স্ত্রী এমপিওভুক্তির লেনদেন বিষয়ে শিক্ষকদের সঙ্গে সরাসরি দেন-দরবার করেন। এছাড়া তার অনিয়মের বিশ্বস্ত সহযোগী এক কর্মচারী এক যুগ ধরে একই পদে কর্মরত আছেন। অপরদিকে, উপপরিচালকের নানা অনিয়মে সহযোগিতা না করায় ইতিমধ্যে দুই কর্মচারীকে বদলি করা হয়েছে। এ কার্যালয়ে জাল সনদধারী শিক্ষককে এমপিওভুক্তিসহ নানা অনিয়ম নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

তবেজানা যায়, ডিজি অফিস ও মন্ত্রণালয়ের প্রভাবশালী কর্মকর্তাদের হাত করেই উপপরিচালক অনিয়ম করে যাচ্ছেন।

২০১৫ সালে মাউশি ময়মনসিংহ অঞ্চলের কার্যালয়ে শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির কাজ শুরু হয়। ২০১৬ সালের মে মাসে শিক্ষা বিভাগের সহকারী পরিচালক এএসএম আবদুুল খালেক মাধ্যমিক উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) হিসেবে দায়িত্ব নেন। দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি তার স্ত্রী রেজাই নাছরিনকে জেলা সদরের বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বদলি করিয়ে মাউশি কার্যালয়ে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা পদে যোগদান করান। বর্তমানে আবদুুল খালেক উপপরিচালক (ডিডি) ও আইএস (ইন্সপেক্টর অব স্কুল) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। অভিযোগ রয়েছে, আইএস হিসেবে তিনি এমপিওর আবেদন প্রথমে প্রত্যাখ্যান করেন; পরে আর্থিক সুবিধা নিয়ে স্বামী-স্ত্রী মিলে এমপিও প্রদান করেন। এ ছাড়াও মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে জাল সনদধারীদের এমপিওর চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

জানা যায়, কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলার বর্ষাগাতি বালিকা দাখিল মাদ্রাসার জুনিয়র শিক্ষক (বেতন কোড-১৫) মোরশেদ আলমের নিয়োগকালীন শিক্ষাগত যোগ্যতা ছিল এইচএসসি। পরে তিনি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএ ডিগ্রি নেন এবং বর্তমান ডিডির মাধ্যমে সহকারী শিক্ষক (বেতন কোড-১১) হিসেবে এমপিওভুক্ত হন। ২০১৩ সালে সংশোধিত জনবল কাঠামো অনুযায়ী শুধু মাধ্যমিক ও নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতায় উচ্চতর স্কেল প্রদান করা যাবে; মাদ্রাসার নয়। অভিযোগ করা হয়েছে, তার বিএ পাসের সনদ সঠিক নয় এবং ডিডি আর্থিক সুবিধা নিয়ে তাকে এমপিওভুক্ত করেছেন। এ রকম জাল সার্টিফিকেট দিয়ে কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলার কাগারচর এইচএমইউ বালিকা দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক (শরীরচর্চা) আবদুুল কুদ্দুস, শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলার ধানশাইল ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক (শরীরচর্চা) মোহাম্মদ শফিকুল ইসলামসহ আরও কয়েটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক অবৈধ সুবিধা নিয়েছেন বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করা হয়েছে। এ ছাড়া জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জ এএম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের অতিরিক্ত শাখার অনুমোদন নেই। এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শাখা অনুমোদন ভুয়া প্রমাণ হলে এমপিও বাতিল করা হয়। বর্তমান ডিডি আর্থিক সুবিধা নিয়ে গত মে মাসের এমপিওতে অতিরিক্ত শাখার অনুমোদন দেন। শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলার কালিকাকুড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেও এরকম অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

ময়মনসিংহ সদরের মাইজবাড়ি আবদুল খালেক উচ্চ বিদ্যালয়ে সায়মা নিলুফা ২০১৫ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নিয়োগ পান এবং এমপিওভুক্তির জন্য মাউশির নিয়ম অনুসরণ করে আবেদন করেন। ময়মনসিংহ আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপপরিচালক আর্থিক সুবিধা না পাওয়ায় নানা অজুহাতে এমপিও প্রদান না করে হয়রানি করছেন বলে তিনি অভিযোগ করেছেন। তবে একই যোগ্যতাসম্পন্ন ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার নবারুণ বিদ্যানিকেতনের সহকারী শিক্ষক (বিজ্ঞান) সোমা দাশগুপ্ত এবং আরও একজন একই উপজেলায় গত মে মাসে এমপিও পেয়েছেন। উপপরিচালকের অনিয়মে সহায়তা না করায় ময়মনসিংহের মাউশির অফিস সহকারী রইস উদ্দিন শ্যামলকে কয়েক দিন আগে ফরিদপুরে এবং ডাটা এন্ট্রি অপারেটর আওলাদ হোসেন, চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী রেজাউল করিমকে জামালপুরে ও প্রোগ্রামার আক্তারুজ্জামানকে স্ট্যান্ড রিলিজের আদেশ দিয়ে সিলেটে বদলি করা হয়। অন্যদিকে, কার্যালয়ের সাঁটলিপিকার আবুল কালামকে ডিডি ব্যক্তিগত সহকারী (এপিএস) করেছেন। আবুল কালাম ১২ বছরের বেশি সময় ধরে একই অফিসে কর্মরত। ডিডির আরেক ঘনিষ্ঠ সহযোগী নৈশপ্রহরী নূর হোসেন। এই দুই কর্মচারীকে দিয়ে ডিডি সব আর্থিক লেনদেন করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

এএসএম আবদুুল খালেক কার্যালয়ে বদলি সম্পর্কে বলেন, ‘আমি কোনো বদলি করিনি। এসব বদলি ঢাকা থেকে হয়েছে।’ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম সম্পর্কে তিনি বলেন, জাল সনদের জন্য সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দায়ী। অনলাইনে আবেদনের পর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সুপারিশের পর তা অনুমোদিত হয়। নিয়ম মেনেই সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। তার অফিসের কোনো কর্মচারী অনিয়মে সম্পৃক্ত নয় বলেও তিনি জানিয়েছেন।

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0038330554962158