এমপিওভুক্তিতে দুর্নীতি: বরিশালে রাজত্ব করছেন এক কর্মকর্তা, দুই ক্লার্ক - দৈনিকশিক্ষা

এমপিওভুক্তিতে দুর্নীতি: বরিশালে রাজত্ব করছেন এক কর্মকর্তা, দুই ক্লার্ক

নিজস্ব প্রতিবেদক |

বরগুনার আমতলী উপজেলার পশ্চিম চিলা আমিনিয়া ফাজিল মাদ্রাসার জুনিয়র মৌলভি পদে ২০১৬ সালের অক্টোবরে যোগ দেন সিরাজুম মুনির। বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) সুপারিশ অনুযায়ী শূন্য পদে যোগ দিলেও এখনও এমপিওভুক্ত হতে পারেননি তিনি। পরপর দুই দফায় এমপিওভুক্তির আবেদন করলেও এখনও তাকে তা করা হচ্ছে না অবসরে যাওয়া শিক্ষকদের ইনডেক্স নম্বর বাতিল না হওয়ার অজুহাত দেখিয়ে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক আবেদনকারী শিক্ষক অভিযোগ করেন, মাধ্যমিক উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়ের বিদ্যালয় পরিদর্শক জাহাঙ্গীর আলমের ঘুষ-বাণিজ্যে অতিষ্ঠ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষকরা। এমপিওভুক্ত হতে উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে শুরু করে মাউশির আঞ্চলিক কার্যালয় পর্যন্ত ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা খরচ করতে হয়।

বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার উলানিয়া মোজাফ্ফর হোসেন কলেজে এনটিআরসিএর সুপারিশে সমাজকল্যাণ বিষয়ে প্রভাষক পদে যোগ দেন হুমায়রা সিদ্দিকা। ছয়-সাত মাস আগে তিনি অনলাইনে আবেদন করলেও উপজেলা ও জেলা শিক্ষা অফিস পেরোনোর পর তা আটকে আছে মাউশির বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়ে। অভিযোগ, উৎকোচ না দেওয়ায় এ রকম ঘটেছে। দু’জন শিক্ষক ২০১৬ সালে এনটিআরসিএর সুপারিশে যোগ দেন বরিশাল নগরের মানিক মিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। কিন্তু জনবল কাঠামোর প্রাপ্যতা এবং অনুমোদন না থাকার অভিযোগ তুলে তাদের এমপিওভুক্ত করা হচ্ছে না।

তাদের একজন জানান, ২০১৬ সালের নভেম্বরে ওই বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষক পদে যোগ দেন তিনি। বিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় এমপিওভুক্তির কাগজ উপজেলা শিক্ষা অফিসে জমা দেওয়ার পর জেলা শিক্ষা অফিস থেকে তা বরিশাল মাউশি কার্যালয়ে পেঁৗছেছে। কিন্তু বেশ কিছু টাকা দেওয়ার পরও তিনি এখনও এমপিওভুক্ত হতে পারেননি। বরগুনার বামনা উপজেলার বাসিন্দা ওই শিক্ষক অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে বলেন, ‘মাসের পর মাস বেতন না পাওয়ায় বাসা ছেড়ে দিতে হয়েছে। পরিবার-পরিজনের কাছে এখন মুখ দেখাতে পারছি না।’ একই বিদ্যালয়ে বাংলা শিক্ষকের শূন্য পদে এনটিআরসিএর সুপারিশে যোগ দেন জাকিয়া বেগম। জনবল কাঠামো অনুযায়ী প্রাপ্যতা নেই অজুহাতে তাকেও এমপিওভুক্ত করা হচ্ছে না।

এ প্রসঙ্গে বরিশাল জেলা শিক্ষক সমিতির (মাধ্যমিক) সাধারণ সম্পাদক আসাদুল ইসলাম বলেন, এনটিআরসিএর সুপারিশ পেয়ে শিক্ষকরা কাজে যোগ দিলেও তাদের এমপিওভুক্তি নিয়ে ঘুষ-বাণিজ্য ও ভোগান্তির বিষয়টি এখন প্রতিষ্ঠিত। জাতীয় শিক্ষক-কর্মচারী ফ্রন্ট বরিশাল বিভাগীয় কমিটির আহ্বায়ক অধ্যক্ষ মহসিনুল ইসলাম হাবুল অভিযোগ করেন, এমপিওভুক্তির জন্য মাউশির আঞ্চলিক কার্যালয়সহ তিনটি স্তর পেরোতে শিক্ষকদের ৩৫-৪০ হাজার টাকা খরচ করতে হয়। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, সম্প্রতি বরিশাল ইসলামিয়া কলেজে ১০ জন শিক্ষককে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারা প্রত্যেকেই টাকার বিনিময়ে এমপিওভুক্ত হয়েছেন।

কর্মকর্তাদের বক্তব্য :এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে কথা হয় মাউশির বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়ের বিদ্যালয় পরিদর্শক জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে। তিনি বলেন, এমপিওভুক্ত করতে তাদের কিছু বাধ্যবাধ্যকতা আছে। কিন্তু যারা বিধিবিধান মানতে চান না, তারা নানা অভিযোগ তোলেন। জাহাঙ্গীর আলম পাল্টা চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেন, যারা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ করেন, তারা এসে কেন জানতে চান না কী কারণে এমপিওভুক্তি হয়নি?

মাউশির বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপপরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান এমপিও নিয়ে অর্থ-বাণিজ্যের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, যেসব আবেদন অনুমোদন হয় না, সেগুলো কী কারণে হয়নি তার ব্যাখ্যাসহ সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়। তিনি বলেন, গত জুন-জুলাই মাসে বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়ে ৪৮০ জনের এমপিওভুক্তির আবেদন এসেছিল। এগুলোর মধ্যে ৩৪৩ জনকে অনুমোদন দিয়ে মহাপরিচালকের দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। উপযুক্ত কারণ ছাড়া আবেদন আটকে রাখার কোনো সুযোগ নেই। তিনি আরও বলেন, আমাদের কাছে অভিযোগ রয়েছে, এমপিওভুক্তির জন্য কোনো কোনো বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকও মোটা টাকা নেন। অথচ কী কারণে এমপিওভুক্তি হলো না, তা যথাযথভাবে আবেদনকারীকে জানানো হয় না এবং মাউশি কার্যালয়ে যোগাযোগ করতেও নিষেধ করা হয়। এতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের অভাবে কিছু আবেদন নিষ্পত্তি করা যায় না।

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0060369968414307