এমপিও’র রুদ্ধ দ্বার খুলে দিয়ে জাতীয়করণ ত্বরান্বিত করুন - দৈনিকশিক্ষা

এমপিও’র রুদ্ধ দ্বার খুলে দিয়ে জাতীয়করণ ত্বরান্বিত করুন

অধ্যক্ষ মুজম্মিল আলী |

Mujammel Aliবেশ ক’বছর ধরে সারা দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তি বন্ধ। দেশের অসংখ্য স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা আজো এমপিও’র বাইরে। তাদের কষ্ট ও দূর্ভোগের সীমা নেই। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীগণ তাঁদের পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করেন। অনেক প্রতিষ্ঠানের পনের-কুড়ি বছর হয়ে গেছে , কিন্তু আজো এমপিও তাদের কাছে অধরা।

এমপিওভুক্ত না হওয়া পর্যন্ত কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তেমন একটা সরকারি সহায়তা বা অনুদান পায় না। ছাত্রবেতন তাদের একমাত্র সম্বল। মফস্বল তথা গ্রামাঞ্চলে বেশীর ভাগ শিক্ষার্থী থাকে দরিদ্র ঘরের। এদের অনেকেই বেতন দিয়ে পড়ালেখা করতে পারে না। বাকীরা ৫০-৬০ টাকার বেশী হলে বেতন দিতে অক্ষম। তাই গ্রাম তথা মফস্বলে ছাত্র বেতন ৫০ টাকার বেশী নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। ছাত্র বেতনে এসব প্রতিষ্ঠানের চক, ডাস্টার, রেজিস্টার খাতা ইত্যাদি কেনার খরচ চলে। কোন কোন প্রতিষ্ঠান এসব খরচ বাদে তাদের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনের নামে দু-চারশ’ দিতে পারে হয়তো, তবে বেশীর ভাগ প্রতিষ্ঠান তা পারে না। শ্রেণিকক্ষ নির্মাণ, আসবাবপত্র তৈরী ইত্যাদির জন্য চাঁদা তুলতে দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয় এসব প্রতিষ্ঠানের প্রধানসহ অন্যান্য শিক্ষকদের। কোথাও কোথাও শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিবর্গ প্রতিষ্ঠালগ্নে উদ্যমী হয়ে কিছু কাজ করেন বটে। কিন্তু, দু’এক বছর পর তাদের উৎসাহে ভাটা পড়ে। তারপর কেউ কেউ আর তা না করে এসএমসি বা জিবি’র পদ পেতে ব্যস্ত হয়ে ওঠেন। কিন্তু, শিক্ষকগণ? তাঁরা এক অজানা মোহ মায়ায় আটকা পড়েন। খেয়ে না খেয়ে শিক্ষার্থীদের মুখের দিকে চেয়ে বছরের পর বছর তাঁরা শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যান। তাঁরা পরিবার-পরিজনের কাছে অনাদৃত হন, সমাজের কাছে অবহেলিত থাকেন এবংরাষ্ট্রের কাছে বেহিসেবী, বেদরকারি ও বেসরকারি হিসেবে গণ্য হন। তাঁদের যেন পেট-পিঠ, সন্তান-সন্ততি কিংবা ঘর-সংসার এসব কিছু নেই!

সারা দেশে এখন দু’ধরণের নন এমপিও শিক্ষক। প্রায় ৮০০০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আজো এমপিওভুক্ত হতে পারেনি। তাদের প্রায় লক্ষাধিক শিক্ষক-কর্মচারী বছরের পর বছর এমপিও’র দিকে চেয়ে দিন গুজরান করেন। ২০০৪ সালে বিগত চার দলীয় জোট তাদের আমলের সর্বশেষ নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিও দেয়। এরপর নানা অজুহাত দেখিয়ে দীর্ঘদিন প্রায় এক রকম ঘোষণা দিয়েই এমপিওভুক্তি বন্ধ রাখা হয়। অবশেষে বর্তমান সরকার তাদের আগের মেয়াদে ২০১০ সালে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন আহ্বান করে। মাত্র ২১ দিনে আবেদন জমা পড়ে ৭৫৫৩ টি। এ গুলোর মধ্যে ৪০০০ প্রতিষ্ঠানকে যোগ্য বিবেচনা করা হলেও মাত্র ১৬২৫ টি এমপিওভুক্ত হয়। যোগ্য বিবেচিত হয়ে ও প্রায় ২৫০০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হতে পারেনি। বর্তমানে সারা দেশে নন এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪৬৯৩ টি রয়েছে, যাদের কোন স্তরই এমপিওভুক্ত নয়। এ ছাড়া বিগত প্রায় ৫/৬ বছরে সারা দেশে আরো প্রায় সহস্রাধিক স্কুল , কলেজ ও মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়। এ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও তাদের শিক্ষক-কর্মচারীগণ যে কী কষ্টের মধ্যে আছেন তা একমাত্র আল্লাহই জানেন!

এ ছাড়া দেশের প্রায় ১২০০০ এমপিওভুক্ত স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় ১৫০০০ নন এমপিও শিক্ষক। ২০১১ সালের ১৩ নভেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় এক পরিপত্রের মাধ্যমে এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের সৃষ্ঠ পদসমূহে এমপিওভুক্তি বন্ধ করে দেয়। সবচেয়ে বিস্ময়ের ব্যাপার যে, ডিজিটাল বাংলাদেশে বিনির্মাণ করবেন যারা, সে সব আইসিটি শিক্ষকদের কাছে পর্যন্ত এমপিও আজ সোনার হরিণ। এ ছাড়া অতিরিক্ত শ্রেণি শাখা পদে, উৎপাদন ও বিপণন এবং ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর শিক্ষকদের এমপিও নেই। একই প্রতিষ্ঠানে কাজ করে কারো এমপিও আছে আবার কারো নেই-সে তো ভাবতেই অবাক লাগে।

স্বাধীনতা অর্জনের পর আমরা দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে এসেছি। বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের অর্জন নেহায়েত কম নয়। তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে এখন আমরা নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ । অতি দ্রুত আমরা মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে যাচ্ছি। আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে আমরা পদ্মা সেতু নির্মাণ শুরু করে দিয়েছি। ডিজিটাল বাংলাদেশ অনেকটাই আমরা গঠন করতে সক্ষম হয়েছি। আমরা ভিশন-২০২১’র পানে সাফল্যজনক ভাবে এগিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় যেন এক বিরাট হ-য-ব-র-ল অবস্থা। বিশেষ করে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা স্তরের দৈন্য দশা যেন কিছুতেই ঘুচতে চাচ্ছে না।

শিক্ষার সর্বস্তরে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ অবশ্যই প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। শিক্ষা ক্ষেত্রে সকল বৈষম্য উঠিয়ে দিতে হবে। আর এ জন্য শিক্ষা জাতীয়করণের কোন বিকল্প নেই। তাই অবিলম্বে এমপিও’র রুদ্ধ দ্বার খুলে দিয়ে যোগ্য সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিধি মোতাবেক নিয়োগ প্রাপ্ত সকল শিক্ষক-কর্মচারীর এমপিও দিয়ে শিক্ষা থেকে এমপিও বন্ধের কলংকটুকু মুছে দিন। শিক্ষায় বেসরকারি শব্দটি বড়ই বেমানান। আমাদের জাতির জনক স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে তাই প্রাথমিক শিক্ষাকে জাতীয়করণ করে যে পথটি দেখিয়ে গেছেন, সে পথে আর কেউ এগুচ্ছেন না কেন?

নন এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং এমপিওবিহীন শিক্ষক-কর্মচারী ও তাঁদের পরিবার পরিজনের দুঃখ-দুর্দশা দূর করতে শিক্ষা বান্ধব বর্তমান সরকার এমপিও’র দ্বার অবিলম্বে খুলে দিয়ে শীঘ্রই সব শিক্ষক-কর্মচারীর চাকুরি জাতীয়করণ করবেন-এ প্রত্যাশা সকলের। জাতীর জনকের কন্যা বলে একমাত্র শেখ হাসিনাই তা পারেন বলে সবাই এ বিশ্বাস করেন। এ আজ সময়ের দাবি, সমগ্র জাতি তা-ই চায়। অন্যথায়-শিক্ষা ক্ষেত্রে এ সরকারের অনন্য ও অসাধারণ কতকগুলো সাফল্য, যেমন-সৃজনশীল পরীক্ষা পদ্ধতি প্রবর্তন, ঝরে পড়া রোধ, ডিগ্রি স্তর পর্যন্ত উপবৃত্তি প্রদান, বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ, পিএসসি ও জেএসসি পরীক্ষা চালু করে এক-দেড় মাসে পরীক্ষার ফল প্রদান, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম নির্মাণ ও প্রজেক্টরের সাহায্যে পাঠদান, প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত বহুতল ভবন বিশিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ, জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন ইত্যাদি ম্লান হয়ে যাবে। মাটির নীচে চাপা পড়ে যাবে সরকারের এ সব গৌরবময় অর্জন।

লেখক: অধ্যক্ষ, চরিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, কানাইঘাট, সিলেট।

এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ - dainik shiksha এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ - dainik shiksha পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী - dainik shiksha ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ - dainik shiksha প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.007573127746582