এমপিও জালিয়াতি : প্রধান শিক্ষককে পুলিশে দেয়ার হুমকি দিলেন মহাপরিচালক - দৈনিকশিক্ষা

এমপিও জালিয়াতি : প্রধান শিক্ষককে পুলিশে দেয়ার হুমকি দিলেন মহাপরিচালক

নিজস্ব প্রতিবেদক |

নীতিমালা অনুসারে একটি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এমপিওভুক্ত হতে পারেন সর্বোচ্চ ৫ শিক্ষক ও ২ জন কর্মচারী। কিন্তু শিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের আশীর্বাদে মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার কাজীপুর মাথাভাঙ্গা নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে ১৩ জন এমপিওভুক্ত হয়েছেন। আরও চারজন এমপিওভুক্তির অপেক্ষায় আছেন। অতিরিক্ত শ্রেণী শাখার জাল কাগজ আর আঞ্চলিক শিক্ষা অফিস ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে অন্তত ৩০ লাখ টাকা ঘুষ প্রদানের মাধ্যমে এমপিওভুক্তির এ কাজ করা হয়েছিল বলে মনে করছেন অধিদফতরের কর্মকর্তারা।

অস্বাভাবিক এই এমপিওর বিষয়ে মঙ্গলবার মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর সংশ্লিষ্টদের নিয়ে শুনানির আয়োজন করে ১৬ আগস্ট। এতে অভিযুক্তরা মহাপরিচালকের সামনে কেউ সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেনি। তাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের আগ পর্যন্ত এমপিওভুক্ত সকল শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন-ভাতা স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মাউশি। জানা যায়, কোর্টের নির্দেশের প্রেক্ষিতে মাউশি অধিদফতর ছয়টি বিদ্যালয়কে এমপিওভুক্ত করে। এরমধ্যে মেহেরপুরের কাজীপুর মাথাভাঙ্গা নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় একটি। গত মার্চ মাসে এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীকে এমপিওভুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়। এর প্রেক্ষিতে ওই বিদ্যালয়ের ১৭ জন শিক্ষক-কর্মচারী এমপিওর জন্য আবেদন করেন। গত জুলাই মাসে খুলনার আঞ্চলিক শিক্ষা কার্যালয় ১৩ জনকে এমপিওভুক্তি করেন। পরে শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির এই তথ্য দেখে মাউশির কম্পিউটার সেকশনে তারা অবাক হয়ে যান। কারণ কোন জুনিয়র স্কুলেই ১৩ জনের এমপিওভুক্তি আইন নেই। গত ১০ আগস্ট আঞ্চলিক শিক্ষা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক, জেলা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে শুনানিতে কাগজপত্রসহ উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়।

শুনানিতে মাউশি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. এসএম ওয়াহিদুজ্জামান নানা চেষ্টায় এই অদ্ভুত জালিয়াতির তথ্য বের করতে না পেরে প্রধান শিক্ষককে পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দিতে ভয় দেখান। এতে প্রধান শিক্ষক মোঃ কামাল হোসেন ৫০ হাজার টাকার মাধ্যমে যশোর শিক্ষা বোর্ড থেকে অতিরিক্ত শ্রেণী শাখা খোলার জাল কাগজসহ অনুমতি এনেছেন বলে স্বীকার করেন।

তবে, এমপিওর দায়িত্বে থাকা মাধ্যমিক শাখার পরিচালক কথিত আইটি বোঝা অধ্যাপক এলিয়াছ মনে করেন, উপজেলা, জেলা শিক্ষা অফিসার থেকে শুরু করে সবাই সৎ এবং সফটওয়ারের মাধ্যমে এমপিওভুক্তি হওয়ায় জালিয়াতির কোনো সুযোগ নেই।

১৬ আগস্ট মাউশি অধিদপ্তরের শুনানিতে উপস্থিত থাকা একজন কর্মকর্তা বলেন, এই ১৩ জনের এমপিওভুক্তিতে ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। কারণ অতিরিক্ত শ্রেণী শাখা খোলার যে কাগজ দেখানো হয়েছে তা সব জাল। দেখানো হয়েছে ২০০২ সালে অতিরিক্ত শ্রেণী শাখা খোলার অনুমোদন দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়, এরপর ২০০৫ সালে দেয় যশোর বোর্ড। অথচ আগে দেয়ার কথা বোর্ডের এরপর মন্ত্রণালয়ের। প্রতিটি ক্লাসেই তিনটি সেকশন দেখানো হয়েছে। গ্রামের একটি বালিকা বিদ্যালয়ে এতো শিক্ষার্থী কোত্থেকে আসবে? আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছি একটি সেকশনের শিক্ষার্থীই তাদের নেই। আসলে আঞ্চলিক শিক্ষা অফিসের যোগসাজশেই এই অবৈধ এমপিও হয়েছে। কর্মকর্তারা বলছেন, যেহেতু পদ সৃষ্টির দায়িত্ব উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের। তিনি জেনেশুনেই একটি জুনিয়র স্কুলে এতো অধিকসংখ্যক শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করেছেন।

আর এরপর খুলনার উপ-পরিচালক টিএম জাকির হোসেনও জেনেশুনেই এই এমপিও দিয়েছেন। মাউশি অধিদফতরের উপ-পরিচালক এ কে মোস্তফা কামাল (মাধ্যমিক) বলেন, ‘টপ টু বটম দুর্নীতি না করলে একটি জুনিয়র স্কুলে এতো শিক্ষক-কর্মচারী এমপিও পেতে পারেন না।

খুলনা আঞ্চলিক শিক্ষা অফিসের উপ-পরিচালক টিএম জাকির হোসেন বলেন, আমাদের কাছে অতিরিক্ত শ্রেণী শাখা খোলার কাগজ দিয়েছে তাই আমরা এমপিও দিয়েছি। তবে এজন্য কোন টাকা-পয়সা নেয়া হয়নি। এখন যেহেতু অভিযোগ উঠেছে তাদের বেতন বন্ধ করা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের এমপিও বাতিল করে প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। একজন শিক্ষককে এমপিওভুক্তি হতে হলে তিনটি হাত ঘুরতে হয়। প্রথমে আবেদন যায় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের কাছে। তিনিই মূলত পদ আছে কীনা তা দেখেন। এরপর জেলা শিক্ষা অফিসার হয়ে তা চলে যায় আঞ্চলিক কার্যালয়ে। তারা যাচাই বাছাইয়ের পর এমপিও দেন।

কিন্তু একটি জুনিয়র স্কুলে এমপিও’র জন্য ১৭ জনের আবেদন আসলেও তা নিয়ে কেউ প্রশ্ন তোলেননি, এমনকি ১৩ জনকে এমপিওভুক্তিও করা হয়। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ কামাল হোসেন বলেন, আমাদের শিক্ষার্থী অনেক তাই শিক্ষকের সংখ্যা বেশি। কত টাকা লেনদেনের মাধ্যমে এই এমপিও পেয়েছেন তা জানতে চাইলে তিনি এ নিয়ে আর কথা বলবে না বলে চলে যান।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মীর হাবিবুল বাসার বলেন, আমরা কাগজপত্রের ভিত্তিতে এমপিওভুক্তি দিয়েছি। এখন যদি এটাকে দুর্নীতি বলা হয় তাহলে এর ভাগিদার এই কাজের সঙ্গে জড়িত সবাই। এমনকি শিক্ষা বোর্ডও।

FullSizeRender

নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.011595964431763