এমপিওভুক্তি বিকেন্দ্রকরণ ও অনলাইনকরণ নিয়ে অনেকটা প্রকাশ্যেই দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের দুই পক্ষ। এক পক্ষের দাবি, মাঠপর্যায়ে এমপিও নিয়ে ব্যাপক দুর্নীতি হওয়ায় অনলাইনে এমপিও রেখেই প্রক্রিয়ায় মাউশি অধিদপ্তরকে যুক্ত করা হোক। পর্যায়ক্রমে প্রয়োজন হলে তা বিকেন্দ্রকরণ করা হবে। অপর পক্ষ চাইছে, মাঠপর্যায়েই থাকুক এমপিও-সংক্রান্ত কার্যক্রম। কোনো অবস্থায়ই তা মাউশি অধিদপ্তরে আনা যাবে না।
এদিকে মাঠপর্যায়ে এমপিও-সংক্রান্ত কার্যক্রমের অবস্থা দেখে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে দুটি কমিটির ট্যুর অনুমোদন করেছে মাউশি অধিদপ্তর। শিগগিরই চার সদস্যের দুই কমিটি সরেজমিন দেখতে যাবে বলে জানা গেছে।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি শিক্ষক এমপিওর অনিয়মে অসন্তুষ্ট। যারা এসব অনিয়মে জড়িত তারা মাঠপর্যায়ের হোক বা শিক্ষা অধিদপ্তরের হোক, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। এভাবে অনিয়ম দুর্নীতি চলতে পারে না। ’
অধিদপ্তরের একাধিক সূত্রে জানা যায়, গত রবিবার মাউশি অধিদপ্তরের এক দিকনির্দেশনা সভায় অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. এস এম ওয়াহিদুজ্জামান শিক্ষামন্ত্রীকে বলেন, মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা একবার কাগজপত্র অস্পষ্ট দেখে এমপিওর আবেদন বাতিল করেন। আরেকবার ‘অণুবীক্ষণ যন্ত্র’ দিয়ে দেখে বাতিল করেন। শিক্ষকদের ভোগান্তি আগের চেয়ে বহুগুণ বেড়েছে। অধিদপ্তরের পরিচালক (মনিটরিং) ড. মো. সেলিম মিয়া অভিযোগ করে বলেন, অনলাইনে এমপিওতে মাঠপর্যায়ে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হচ্ছে। উপজেলা, জেলা ও উপপরিচালকের দপ্তরে দুর্নীতি হচ্ছে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের কাছে শিক্ষকরা গেলে আগে কেরানির সঙ্গে দেখা করতে বলেন। কেরানি ‘সিগন্যাল’ দিলেই ফাইল ছাড়েন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসাররা। একই অবস্থা উপপরিচালকের কার্যালয়েও। আসলে এমপিও বিকেন্দ্রীকরণে দুর্নীতি বহুগুণ বেড়েছে। তিনি এর একটা সমাধান দাবি করেন।
সূত্র মতে, মূলত শিক্ষক হয়রানি রোধ এবং দুর্নীতি দূর করতে ওই দুই কর্মকর্তাসহ কয়েকজন কর্মকর্তা এমপিও কার্যক্রম অনলাইনে রেখেই মাউশি অধিদপ্তরে ফিরিয়ে আনতে চান। অপরদিকে অধিদপ্তরের পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক মো. এলিয়াছ হোসেন, মাধ্যমিক শাখার উপপরিচালক এ কে মোস্তফা কামাল এবং একই দপ্তরের একজন সহকারী পরিচালকসহ অপর কয়েকজন কর্মকর্তা এমপিও-সংক্রান্ত কার্যক্রম মাঠপর্যায়েই রাখার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। ইএমআইএস সেলের দুইতিনজন প্রোগ্রামারও মাঠে রাখার পক্ষে।
এদিকে মাঠপর্যায়ে এমপিও কার্যক্রমের অবস্থা দেখে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে দুটি কমিটির ট্যুর অনুমোদন করেছে মাউশি অধিদপ্তর। এ ছাড়া আরো ১৮টি কমিটিতে ৩৬ জনের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এমপিও কার্যক্রমের অবস্থা দেখতে তাদেরও পর্যায়ক্রমে সরেজমিনে পাঠানো হবে।
বেশ কয়েকজন শিক্ষক বলেন, এভাবে ঘোষণা দিয়ে কখনো এমপিওর দুর্নীতি ধরা যাবে না। এতে দুর্নীতিবাজরা আরো সতর্ক হয়ে যাবে। এই কমিটি লোক দেখানো ছাড়া আর কিছু না। আর এই কমিটিতে থাকা কোনো কোনো কর্মকর্তাও দুর্নীতিবাজ হিসেবে পরিচিত। তাঁদের দিয়ে ভালো কিছু আশা করা যায় না।