এমপিও শিক্ষকদের বিপন্ন রোজা ও পীড়িত ঈদ উৎসব - Dainikshiksha

এমপিও শিক্ষকদের বিপন্ন রোজা ও পীড়িত ঈদ উৎসব

অধ্যক্ষ মুজম্মিল আলী |
mujjam sir
অধ্যক্ষ মুজম্মিল আলী

রমজান ও ঈদ বলে কথা। তারপর ও যারা এমপিও শিক্ষকদের বেতন-বোনাস ছাড় দেয়, এদের এতটুকু দরদ নেই। এমপিও শিক্ষকরা দেশ ও জাতির বোঝা বুঝি! তা না হলে তাঁদের বেতন ও ঈদ বোনাস নিয়ে এতো টালবাহানা কেন?

দেশের কয়েক লক্ষ এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীর প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রির অদম্য এক ভালবাসা। শিক্ষা ও শিক্ষকদের প্রতি তাঁর ভালবাসা অকৃত্রিম। একমাত্র তাঁর কারণেই দেশের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীগণ অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেলের মুখ দেখতে পেয়েছেন। তা না হলে তাঁরা নতুন স্কেলের নাম গন্ধ ও পেতেন না। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রিই এ দেশের হতভাগ্য লক্ষ লক্ষ এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীর একমাত্র ভরসার জায়গা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রি কোনো ভাবে জানতে পারলে শিক্ষক-কর্মচারীদের রমজান ও ঈদের দূর্ভোগ আগেই লাঘব হতো।

যারা বেতন-ভাতা ছাড় দেয়, ইচ্ছে করলে এরা মে মাসের বেতন রমজান শুরুর দু’-চারটে দিন আগে দিতে পারত । শিক্ষক-কর্মচারীগণ সারা রোজা মাসের সদাইপাতিটা অগ্রীম করে নিতে পারতেন। স্বাচ্ছন্দ্যে ইফতার ও সেহরি সেরে নিতে পারতেন তাঁরা।

ভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষেরা ও রমজানে মুসলমানদের আলাদা সম্মানের দৃষ্টিতে দেখে। জনৈক হিন্দু দোকানদার প্রতি বছর রমজান মাসে তার মুসলিম ক্রেতাদের কাছে কম মূল্যে সদাইপাতি বিক্রি করে। তাঁর কথা , ‘এগারো মাস লাভ করি, এক মাস লাভের দরকার নেই।’ ভারতের উত্তর প্রদেশের এক হিন্দু ভদ্রলোক সারা রমজান মাস রাতভর জেগে থেকে সেহরির সময় গ্রামের মুসলমানদের ডেকে ডেকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলে। তাঁর বাবা ও নাকি তা-ই করত। এখন তার ছেলে ও বাবার সাথে থেকে তাই করে। এটা অনেকটা তাঁদের পারিবারিক রেওয়াজ হতে চলেছে। সারা গ্রামের মানুষ দিব্যি ঘুম যায়। সময় হলে এরা টিকই জাগিয়ে দেয়। সত্যি এরা মুসলমানের প্রতি কতই না উদার ও সহমর্মি!

দেশে শতকরা ৯৫ জন এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী মুসলমান। প্রত্যেক মুসলমান চায়, রমজান শুরুর আগেই পুরো রমজান মাসের খরচ পাতি এক সাথে সেরে নিতে। কিন্তু, এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীগণ প্রায় ফি বছরের ন্যায় এবার ও তা করতে পারেন নাই। রমজানের প্রায় মাঝামাঝি সময়ে তাঁরা বেতন পেয়েছেন। বেতন পেয়েই ধার দেনা পরিশোধে বেতনটা সাবাড় হয়েছে। প্রায় প্রতিবারের মতো এবারের রমজান ও কষ্টে পোহাতে হচ্ছে তাঁদের।

দুঃখে কষ্টে রমজান শেষ হবার পথে। রমজান শেষে খুশীর ঈদ। কিন্তু, এবার ও এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের ঈদে আনন্দ করার কোন আলামত নেই। সিকি আনা ঈদ বোনাস তাঁরা মাত্র আজ ক’বছর থেকে পেয়ে আসছেন। আসলে তা এতো নগন্য যে, পাওয়ার চেয়ে না পাওয়াটা ও মন্দ হয় না।

যারা এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের নতুন স্কেল দিতে চায়নি, এখন আবার তারা নানা ভাবে তাঁদের নাজেহাল করতে তৎপর। তাদের কাজ যেন একটাই- যে কোনো ভাবে হউক এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত রাখা। কোন্ অজুহাত দেখিয়ে তারা বৈশাখি ভাতা আটকে দিয়েছে, কে জানে? নতুন স্কেলের বকেয়া দিতে তারা কেরামতি কম করেনি। তারাই শিক্ষক-কর্মচারীদের মে মাসের বেতন টেনে টুনে রমজানের মাঝামাঝি দিয়েছে, যাতে জুন মাসের বেতন আর ঈদ বোনাস নিয়ে তেলেসমাতি করা যায়।

হ্যাঁ, তাদের তেলাসমাতি তারা শুরু করে দিয়েছে। শিক্ষক-কর্মচারীদের নিয়ে এরা আর কতো জুয়োচুরি খেলবে? সারা দেশে যখন শিক্ষক-কর্মচারীদের পূর্ণাঙ্গ ঈদ বোনাস দেবার দাবী উঠেছে, তখনি সে দাবীটিকে ধামাচাপা দিতে নতুন স্কেল-পুরান স্কেল, অধিদফতর- মন্ত্রণালয় চিঠি চালাচালি খেলা শুরু হয়েছে। তাদের কতো খেলা দেখেছেন শিক্ষক-কর্মচারীগণ। সার্ভার বিকল হওয়া, কারো বিদেশ যাওয়া-আরো কত কী? জাতীয় স্কেলের অন্তর্ভুক্ত সরকারি কর্মকর্তাদের ন্যায় এমপিও শিক্ষকরা ও নতুন স্কেলে ঈদ বোনাস পাবেন-তা নিয়ে নতুন স্কেল-পুরান স্কেল প্রশ্ন কেন? কারো কাছ থেকে জানবার হলে তা তো আগেভাগে জানা যেত। এ অন্তিম সময়ে নাটক সাজানো হলো কেন?

জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে ঈদ। তাই জুনের বেতনটা ঈদের আগে দিতে সমস্যা কী? যারা বেতন-ভাতা ছাড় দেয়, তাদের মধ্যে নিঃসন্দেহে ৯৫% মুসলমান। মুসলমান হয়ে মুসলমানের কষ্ট না বুঝলে আর কে বুঝবে? এমন মুসলমানের মুসলমানি নিয়ে প্রশ্ন তোলা স্বাভাবিক।

সামনে আর মাত্র ৪/৫ দিন কর্ম দিবস। তারপর দীর্ঘ ঈদের ছুটি। দেশের আপামর এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী ও তাঁদের পরিবার পরিজন তীর্থের কাকের মতো বেতন ও বোনাসের দিকে চেয়ে আছেন। প্রয়োজনে শুক্র-শনি খোলা রেখে জুনের বেতন ও ঈদের পূর্ণ বোনাসটা ঈদের আগেই দিন। এ কারো অনুগ্রহ কিংবা অনুকম্পা নয়। শিক্ষক-কর্মচারীদের ঘাম ঝরা শ্রমের বিনিময়টা দিতে এতোটুকু কার্পণ্য কেন? কেউ তো কারো বাবার সম্পদ থেকে দেবে না।

লেখক: অধ্যক্ষ , চরিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ , কানাইঘাট, সিলেট।

স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0072319507598877