স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে অতিথি ও শিক্ষার্থীদের সম্মুখেই প্রধান শিক্ষককে মারধর করার খবর সংবাদপত্রে প্রকাশিত হইয়াছে। ঘটনাটি ঘটিয়াছে ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর উপজেলার সাতুরিয়া ইউনিয়নের এম এম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে। আর সদলবলে ন্যক্কারজনক এই কাজটি যিনি করিয়াছেন তিনি হইলেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। মাত্র একদিনের ব্যবধানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্র পিটুনির শিকার হইয়াছে ছাত্রলীগের মিছিলে গরহাজির থাকিবার অপরাধে। ভুক্তভোগী মাত্রই জানেন যে, এইসব কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা যেমন নহে, তেমনি ইহার দায় কোনো দলবিশেষের ঘাড়েও চাপানো যাইবে না ঢালাওভাবে। কারণ ইহা হইল ক্ষমতার দাপট। এখন যেমন যত্রতত্র কারণে-অকারণে এই দাপট প্রদর্শিত হইতেছে, ঠিক একইভাবে ইতোপূর্বে যাহারা ক্ষমতায় ছিলেন তাহাদের অনুসারীরাও দাপট দেখাইয়াছেন। প্রশাসন এখন যেমন তাহা দেখিয়াও না দেখিবার ভান করিতেছে, তখনও তাহাই করিয়াছে।
প্রশ্ন হইল, চালকের আসনে যাহারা আছেন তাহারা বিষয়টিকে কীভাবে দেখিতেছেন? ইহা সুবিদিত যে ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ পর্যায়ে যাহারা আছেন তাহারা একই সাথে সরকারেরও গুরুত্বপূর্ণ নীতিনির্ধারক। স্থানীয় পর্যায়ের বা সহযোগী কোনো সংগঠনের নেতাকর্মীদের জোর-জবরদস্তি ও বাড়াবাড়ির কারণে যে যুগপত্ দল ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়—ক্ষোভের সঞ্চার হয় জনমনে তাহা অবশ্যই তাহারা জানেন। ইহা লইয়া তাহাদের ক্ষোভ-হতাশার বহিঃপ্রকাশও ঘটিয়াছে বিভিন্ন সময়ে। খোদ দলীয় সভানেত্রী এবং প্রধানমন্ত্রীও কঠোর সতর্কবার্তা উচ্চারণ করিয়াছেন সীমা লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে। বলিয়াছেন দলকে আগাছামুক্ত করিবার কথাও। কিন্তু চোর কি কখনো নীতি বা ধর্মের কথা শোনে! তদুপরি, বাঁশের চাইতে যে কঞ্চি দড় হইয়া থাকে তাহাও কোনো নূতন কথা নহে।
নানা প্রতিবন্ধকতার পাহাড় ঠেলিয়া দেশ যে আগাইয়া যাইতেছে তাহা এখন সকলেই স্বীকার করেন। কিন্তু তাহা যে এমনি এমনি হইতেছে না সেই বিষয়টি অনেক সময় আমাদের বিবেচনায় থাকে না। দেশকে আগাইয়া লইয়া যাইবার জন্য প্রধানমন্ত্রী এবং তাহার সরকার যে অক্লান্ত পরিশ্রম করিতেছেন তাহা আন্তর্জাতিকভাবেও স্বীকৃত। কিন্তু গুটিকয় ব্যক্তির ঔদ্ধত্য কিংবা বাড়াবাড়ির কারণে অনেক ক্ষেত্রে সরকারের এই অর্জনও ম্রিয়মাণ হইয়া পড়িতেছে—যাহা কোনোভাবেই কাম্য হইতে পারে না। আমরা সরকারকে কঠোর হইতে বলিব। কয়েকদিন আগে ক্ষমতাসীন দলের গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা বলিয়াছেন যে, দলের মধ্যে ‘কাউয়া’ ঢুকিয়া পড়িয়াছে। ‘কাউয়া’ কিংবা ‘বসন্তের কোকিল’ যাহাই হউক না কেন, ইহারা যে দল বা সরকারের জন্য কখনোই কোনো মঙ্গল বহিয়া আনিতে পারে না তাহা প্রমাণিত। বরং দেখা গিয়াছে যে তাহাদের যাবতীয় অপকর্মের দায় দলকেই বহন করিতে হইয়াছে। দিতে হইয়াছে চরম মূল্য। ইহার পুনরাবৃত্তি যাহাতে না ঘটে সেই জন্য এখনই সতর্ক হইতে হইবে।
সুত্র: দৈনিক ইত্তেফাক