কওমি শিক্ষা বোর্ডে আর্থিক অনিয়ম পেয়েছে তদন্ত কমিটি - Dainikshiksha

কওমি শিক্ষা বোর্ডে আর্থিক অনিয়ম পেয়েছে তদন্ত কমিটি

নিজস্ব প্রতিবেদক |

কওমি মাদ্রাসার সবচেয়ে বড় শিক্ষা বোর্ড বেফাকুল মাদারসিল আরাবিয়ায় (বেফাক) আর্থিক অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়মনীতি না মেনে ভবন নির্মাণে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়, মিডিয়া ও প্রশিক্ষণ খরচের নামে বেতন-ভাতা পরিশোধসহ নানা ধরনের অনিয়মের প্রমাণ মিলেছে। আটজন আলেমের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি চার পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

বেফাক সূত্রে জানা গেছে, হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ আহমদ শফীর নিয়ন্ত্রণাধীন এই শিক্ষাবোর্ড পরপর তিন অর্থবছরের আর্থিক হিসাবের অডিট করায়নি। গতবছর একসঙ্গে তিন বছরের হিসাব অডিট করায়। এতে সমালোচনার মুখে পড়ে প্রতিষ্ঠানটি। এসময় বোর্ডের কয়েকটি আর্থিক অনিয়ম ধরা পড়ে। আর এই অনিয়ম তদন্ত করতেই আট আলেমের সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির তদন্তেও অনিয়মের প্রমাণ মিলেছে। চার পৃষ্ঠার ওই তদন্ত প্রতিবেদনের একটি কপি সম্প্রতি কাছে এসেছে।

জানা গেছে, ২০১৬ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে ২০১৭ সালের ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত কমিটি প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক অনিয়ম তদন্ত করে। তদন্ত কমিটিতে ছিলেন, মাওলানা সাজেদুর রহমান, মাওলানা ছফিউল্লাহ, মুফতী ফয়জুল্লাহ, মাওলানা মাহজুফুল হক, মাওলানা নূরুল আমীন, মাওলানা মুনীরুজ্জামান, মাওলানা দিলাওয়ার হোসোইন এবং মাওলানা ইসহাক।

বেফাক সূত্রে আরও জানা গেছে, আহমদ শফী দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত কারণে স্বাভাবিক চলাফেরা ও প্রশাসনিক তদারকি করতে পারেন না। ফলে দাফতরিক কাজের জন্য তার ছোট ছেলে মাওলানা আনাস মাদানীর ওপর নির্ভর করতে হয়। এই সুযোগে বেফাকে নিজের প্রভাব বলয় বাড়াতে শুরু করেন তিনি।

অভিযোগ আছে, বোর্ডে কর্মরত মাওলানা আনাসের অনুসারীরা কোনও নিয়মনীতি মানছেন না। তারা আর্থিক অনিয়ম করেছেন। কিন্তু কেউ প্রতিবাদ করলে তাদের চাকরি হারাতে হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে তদন্ত কমিটির প্রধান ও বেফাকের মজলিসে আমেলার সদস্য মাওলানা সাজেদুর রহমান বলেন, ‘অডিটে অনিয়ম ধরা পড়ায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। আমরা তদন্ত করে যেসব অনিয়ম পেয়েছি সেটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছি। এ প্রতিবেদন দুই সপ্তাহ আগে মজলিসে আমেলার বৈঠকে জমা দেওয়া হয়েছে। আশা করছি তারা এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।’

আর এ বিষয়ে বেফাকের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা আবদুল কুদ্দুস বলেন, ‘বেফাকের অনিয়মের বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন আমরা হাতে পেয়েছি। এটা নিয়ে আরও কাজ চলছে। বিভিন্ন অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ভবন নির্মাণে অনিয়ম: ভবন নির্মাণের আগে বেফাক কোনও প্রকৌশলী বা পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করেনি বলে অভিযোগ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। এজন্য ভবন নির্মাণে পাঁচ লাখ টাকার বেশি খরচ হয়েছে। এছাড়াও ভবন নির্মাণের কার্যাদেশ দেওয়ার আগে নির্মাণ কমিটির বৈঠক করা হয়নি। সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠানকে কাজ না দিয়ে বেশি দরদাতাকে কাজ দেওয়া হয়, টিনসেড ঘর নির্মাণে মজলিসে আমেলার অনুমতি নেওয়া হয়নি এবং খরচের বিবরণীতে ঘরের দৈর্ঘ্য-প্রস্থ উল্লেখ করা হয়নি।

কাগজ ক্রয়ে অনিয়ম: পরীক্ষা বিভাগে কাগজ ক্রয়ে অনিয়মের অভিযোগ আছে। নিম্নমানের কাগজ কিনে বেশি দাম দেখানো হয়েছে। প্রয়োজনে ক্রয় কমিটির মাধ্যমে কাগজ কেনার সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি।

মিডিয়ার খরচের নামে অনিয়ম: জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ২০১৬ সালে ১ সেপ্টেম্বর মানববন্ধন এবং ১৭ অক্টোবর বেফাক সভাপতি আহমদ শফীর উপস্থিতিতে রাজধানীর মিরপুরের আরজাবাদ মাদ্রাসায় উলামা মাশায়েখ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে মানববন্ধনে মিডিয়া খরচ বাবদ ৫৬ হাজার ৯৮০ টাকা এবং সম্মেলনে মিডিয়া খরচ বাবদ এক লাখ ৩১ হাজার ৬৭০ টাকা দেখানো হয়েছে। এছাড়াও মহাসমাবেশের যাতায়াত বাবাদ খরচ দেখানো হয়েছে দুই লাখ ১৩ হাজার টাকা। যেটাকে অগ্রহণযোগ্য বলে মনে করছে তদন্ত কমিটি।

বেতন-ভাতা পরিশোধে অনিয়ম: বেফাকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওভার টাইম, ভাতা পরিশোধের ক্ষেত্রেও অনিয়ম করা হয়েছে। কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী অগ্রিম বেতন ও ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ করেননি। এসব ক্ষেত্রে মজলিসে আমেলার সিদ্ধান্ত অগ্রাহ্য করা হয়েছে। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, বেফাকের সাতজন কর্মকর্তা নিয়মিত ছুটি না নিয়ে অফিসে কাজ করেছেন এবং ছুটির ভাতা নিয়েছেন। তবে তাদের কাজ করার বিষয়ে কোনও কমিটির অনুমোদন নেওয়া হয়নি।

ঋণে অনিয়ম: বেফাকের অনেক কর্মকর্তা ঋণ নিয়ে তা সময় মতো পরিশোধ করেননি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে হাফেজ ইলিয়াস ৭২ হাজার ৮১ টাকা ঋণ নিয়ে মাত্র ১০ হাজার টাকা পরিশোধ করেছেন। আর মাওলানা ফয়জুর রহমান ৩২ হাজার ৪১০ টাকা ঋণ নেন। তবে তিনি মারা যাওয়ায় পরিবারের পক্ষ থেকে দায়মুক্তির আবেদন করা হয়েছে। এছাড়া সাবেক হিসাবরক্ষক আব্দুল মতিন ৯০ হাজার ৬৬৭ টাকা ঋণ নিলেও তা পরিশোধ করেননি।
প্রশিক্ষণ বাবদ খরচে অনিয়ম: মক্তব প্রশিক্ষক মাওলানা আব্দুর রহিমের সব কাজ অগোছালো ও অনিয়মে ভরা। তার কাজের কোনও রেজিস্টার রাখা হয়নি। প্রশিক্ষণ বাবদ খরচ দেখানো হলেও তিনি প্রতিষ্ঠানের কোনও আয় দেখাতে পারেননি। তিনি নিজের ইচ্ছা মতো সহকারী নিয়োগ দিতেন। তাদের বেতনও নিজে রেখে দিতেন। এক পর্যায়ে তদন্ত কমিটি হিসাব চাইলে তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন। এছাড়া তার কাছে বেফাকের সর্বশেষ ৩টি প্রশিক্ষণের আয়ের টাকা বকেয়া আছে।

সুপারিশ: অনিয়ম রোধে তদন্ত প্রতিবেদনে বেশ কিছু সুপারিশ করেছে কমিটি। সেখানে বলা হয়েছে, প্রতি তিন মাস অন্তর অভ্যন্তরীণ অডিট করানো, দৈনিক ক্যাশ মেলানো এবং প্রতি মাসের হিসাবের ব্যালেন্সশিট তৈরি করে পরবর্তী মাসের ১০ তারিখের মধ্যে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা।

ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি - dainik shiksha ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে - dainik shiksha ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে মাকে ভরণপোষণ না দেয়ায় শিক্ষক গ্রেফতার - dainik shiksha মাকে ভরণপোষণ না দেয়ায় শিক্ষক গ্রেফতার ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0038189888000488