পটুয়াখালীর কলাপাড়ার মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দাখিল ও এবতেদায়ী মাদ্রাসায় নতুন বই বিতরণ ও ভর্তি হওয়ার সময় বিদ্যুত, টেলিফোন, পানির বিল চক ও ডাষ্টার ক্রয় স্কুলে আপ্যায়ন ও শিক্ষকদের বিভিন্ন দিবস ও বই পরিবহনে যাতায়ত খরচ বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠান ক্রিড়া অনুষ্ঠানের চাঁদা এবং সেশন চার্জের নামে টাকা আদায় করা হচ্ছে। বই বিতরনে টাকা আদায়ে সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ছাত্র-ছাত্রীদের সেশন চার্জের নামে এ টাকা দিতে বাধ্য করা হচ্ছে। তবে শহরে গলাকাটা সেশন চার্জ আদায় হলেও গ্রামের স্কুলে আদায় হচ্ছে অনেক কম।
কলাপাড়া উপজেলায় ৩৩ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ২৭ টি মাদ্রাসায় নতুন বই বিতরন ও ভর্তির সময় এ টাকা আদায় হলেও উপজেলা শিক্ষা অফিস কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। উল্টো স্কুল-মাদরাসায় নতুন বই পাঠানোর নামে শিক্ষা অফিসের এক শ্রেণির কর্মচারী স্কুল শিক্ষকদের কাছ থেকে আদায় করছে “চা খরচের” টাকা।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানাযায়, মাধ্যমিক স্তুরে এবছর ২ লাখ ৬ হাজার ৩৮০, দাখিল মাদ্রাসায় ৯৩ হাজার ৩৮০ ও এবতেদায়িতে ৩০ হাজার ৪৪০ টি বইয়ের চাহিদা রয়েছে।
মুসুল্লীয়াবাদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনোরঞ্জন চন্দ্র জানান, ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে (বুধবার পর্যন্ত) ১০৯ জন, ৭ম শ্রেণিতে ১০৬ জন, ৮ম শ্রেণিতে ৮৫ জন ও নবম শ্রেণিতে ৮৬ জন ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হয়েছে। এ বিদ্যালয়ে নতুন বই নিতে সেশন চার্জ নির্ধারন করা হয়েছে তিনশ টাকা। তাদের হিসেবে ৩৮৬ জন ভর্তি হওয়া ছাত্রÑছাত্রীর কাছ থেকে শুধু সেশন চার্জ বাবদ আদায় হয়েছে এক লাখ ১৫ হাজার আটশ টাকা। পাখিমারা প্রফুল্ল ভৌমিক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে ৫৯ জন। সাড়ে তিনশ টাকা করে সেশন চার্জ আদায় হয়েছে ২০ হাজার ৬৫০ টাকা। বেতমোর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেনিতে ভর্তি হয়েছে ৭৮ জন। এ বিদ্যালয়ে সেশন চার্জ আদায় করা হয়েছে ৪৫০ টাকা। সে হিসেবে আদায় হয়েছে ৩৫ হাজার একশ টাকা। ধানখালী আশরাফ একাডেমীতে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে ১৪০ ও ৭ম শ্রেণিতে ১৩৫ জন। এই দুই শ্রেণিতে ৩৯০ টাকা করে সেশন চার্জ আদায় হয়েছে এক লাখ সাত হাজার ২৫০ টাকা। নুর মোহাম্মদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ৪০ জন ভর্তি হয়েছে। এ বিদ্যালয়ে সেশন চার্জ আদায় হয়েছে ২৫০। কুয়াকাটা বঙ্গবন্ধু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে ১৫০ জন। ৪৫০ টাকা করে সেশন চার্জ আদায় হয়েছে ৬৭ হাজার পাঁচশ টাকা। কলাপাড়া মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও খেপুপাড়া বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আদায় হচ্ছে সাতশ টাকা সেশন চার্জ। এই দুই বিদ্যালয়ে শুধু ৬ষ্ঠ শ্রেণিতেই আড়াই শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হয়েছে। একই ভাবে উপজেলার প্রতিটি স্কুলে ৩’শ টাকা থেকে ৭’শ টাকা সেশন চার্জ আদায় হয়েছে বই বিতরনের সময়।
কলাপাড়ার পৌর শহরের একাধিক অভিভাবক নাম প্রকাশ না করার শর্তে অভিযোগ করেন, খেপুপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অধিকাংশ শ্রেনিকক্ষে ফ্যান নেই। কিন্তু নেয়া হচ্ছে বিদ্যুত বিল। কেউ টেলিফোন না করলেও তার বিল দিতে হচ্ছে। এছাড়া পানিসহ অন্য বিলতো আছেই। এই বিল কেন ছাত্র-ছাত্রীরা বহন করবেন। তাছাড়া রাতে শিক্ষকরা স্কুলে কোচিং করায় লাইট জ্বালিয়ে। সেই জন্য তারা কোচিং ফি দেন। তাহলে আবার কারেন্ট বিল দিতে হবে কেন ? একই অভিযোগ পাখিমারা, বঙ্গবন্ধু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে।
খেপুপাড়া বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আনোয়ার হোসেন জানান, বুধবার পর্যন্ত ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে ১৬৫ জন। শহরে স্কুলে অনেক খরচ। বিদ্যুত, পানি, ল্যাব, কম্পিউটার খরচ অনেক। তাছাড়া বিভিন্ন সভা-সমাবেসেও অনেক খরচ।
কুয়াকাটা বঙ্গবন্ধু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. খলিলুর রহমান জানান, পর্যটন এলাকায় স্কুল হওয়ায় মেইনটেনেন্স খরচ তাদের অনেক বেশি। এছাড়া বছরের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের চাঁদাও একসাথে আদায় করা হয় এই সেশন চার্জের মধ্যে।
মুসুল্লীয়াবাদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সাইদুর রহমান সাঈদ জানান, বই পরিবহন থেকে স্কুলের বিভিন্ন উৎসব, ক্রীড়ানুষ্ঠান ও সভা-সমাবেশের খরচ স্কুলকেই বহন করতে হয়। তাই ভর্তি হওয়ায় সময় তারা মাত্র তিনশ টাকা সেশনচার্জ নিয়েছেন। গ্রামের স্কুল,এই টাকা না নিলেও চলবে কিভাবে বলে জানান।
এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কাজী রুহুল আমিন জানান, অভিভাবকরা কেউ অতিরিক্ত টাকা নেয়ার ব্যাপারে তাদের কাছে অভিযোগ করেন নি। তবে সরকারিভাবে এই টাকা নেয়া বাধ্যতামূলক কিনা তা জানাতে পারেননি।