কিশোরী নারগিস আক্তার। প্রায় চার বছর আগে তাঁর বাবা নাসির উদ্দিন মারা যান। মা বিয়ে করে অন্যের সঙ্গে সংসার বাঁধেন। এ অবস্থায় ঘোর অন্ধকার নেমে আসে তাঁর জীবনে। ছোট দুই ভাইকে নিয়ে মহাবিপাকে পড়ে এই মেয়েটি। বাবা মারা যাওয়ার পর কিছু দিন এভাবেই চলে যায়। এরই মধ্যে সেই অন্ধকারে আলোর দিশারী হয়ে হাজির হন মাসুদ রানা নামে এক শিক্ষক। নারগিসকে তার বাসায় কাজের জন্য নিয়ে আসেন তিনি। বগুড়ার শেরপুর পৌরশহরের শান্তিনগর এলাকায় পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করেন এই শিক্ষক।
তিনি স্থানীয় ভীমজানি হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষক। দীর্ঘ সময় ধরে মেয়েটি বাসায় কাজ করে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মেয়েটির ওপর মাসুদ রানার লোলুপ দৃষ্টি পড়তে থাকে। প্রায় ৩মাস আগের ঘটনা। সেই থেকে জোরপূর্বক মেয়েটির ওপর যৌন নির্যাতন চালাতে থাকেন শিক্ষক মাসুদ রানা। রাজি না হলে তার ওপর শারীরিক নির্যাতনও চালাতেন তিনি।
সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার (০৮ডিসেম্বর) রাত অনুমান ১০টার ঘটনা। কাজের মেয়েকে যৌন নির্যাতন করা নিয়ে স্ত্রী শিল্পীর সঙ্গে স্বামী মাসুদ রানার মনমালিন্য চরম আকার ধারণ করে। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রচণ্ড-ঝগড়া বেঁধে যায়। বাসার দরজা-জানালা বন্ধ করে শিল্পী ও তার স্কুল পড়ুয়া মেয়ে মিলে নারগিসকে মারধর করতে থাকে। পরে তার চিৎকারে প্রতিবেশিরা এগিয়ে যান। পরে তারা বাসার দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন। মেয়েটিকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যান। সঙ্গে যৌন নির্যাতনকারী ওই শিক্ষককে আটক করে থানা পুলিশে সোপর্দ করেন।
শুক্রবার(০৯ ডিসেম্বর) এই প্রতিবেদকের কাছে কাজের মেয়ে নারর্গিস তার ওপর চলা শিক্ষক মাসুদ রানার দীর্ঘদিনের যৌন ও শারীরিক নির্যাতনের এসব বর্ণনা তুলে ধরেন। ভুক্তভোগী নারর্গিস আরও জানায়, শিক্ষক মাসুদ রানা সুযোগ পেলেই দিন-রাতের যে কোন সময় তার ওপর যৌন নির্যাতন চালাতেন। অস্বীকৃতি জানালে তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করতেন। এদিকে থানা হাজতখানায় আটক শিক্ষক মাসুদ রানা তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি ষড়যন্ত্রের শিকার। কাজের মেয়েটি অন্যের সঙ্গে প্রেম করে। তার এই কাজে বাঁধা দেয়ায় সে আমাকে ফাঁসাতে আমার বিরুদ্ধে যৌন ও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ তুলেছে বলে এই শিক্ষক দাবি করেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শেরপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) বুলবুল ইসলাম জানান, স্থানীয়দের সহায়তায় যৌন নির্যাতনকারী শিক্ষককে আটক করা হয়েছে। যৌন নির্যাতনের শিকার কাজের মেয়েটিকে উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া এই ঘটনায় থানায় মামলা নেয়া হবে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।