কাজে গতি নেই, কর্মকর্তাদের দ্বন্দ্ব চরমে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে - Dainikshiksha

কাজে গতি নেই, কর্মকর্তাদের দ্বন্দ্ব চরমে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে

শরীফুল আলম সুমন |

মন্ত্রণালয় সাধারণত নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কাজ করে থাকে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সেই কাজের ব্যাপ্তি আরো বেশি। শিক্ষা খাতের নানা অসংগতি দূর করা, নতুন নতুন বাস্তবসম্মত পদ্ধতি চালু করা, নীতিমালা তৈরিসহ বিভিন্ন কাজ করার কথা কর্মকর্তাদের। তবে এসব কাজ ঝুলে আছে দীর্ঘদিন ধরে। উল্টো নানা বিষয়ে কর্মকর্তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব বেড়েছে। এই সুযোগে শিক্ষাব্যবস্থায় নানা ফাঁকফোকর তৈরি হচ্ছে। পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসসহ বিভিন্ন সমস্যায় ঘুরপাক খাচ্ছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

জানা যায়, অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের অধীন অধিদপ্তরগুলো থেকেই সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কর্মকর্তাদের বদলি হয়ে থাকে। তবে সব মন্ত্রণালয়ই বড় পদগুলো, বিশেষ করে সংস্থার প্রধান বা বিভাগীয় প্রধানের বদলিগুলো করে থাকে। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয় এর ব্যতিক্রম। তারা বড় পদগুলোর পাশাপাশি এন্ট্রি ও মাঝারি পদগুলোর বদলির দায়িত্বও নিয়ে নিয়েছে। ফলে শিক্ষক বদলির জন্য মন্ত্রণালয়ের কলেজ শাখার কাজ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাণিজ্যের সুযোগও কয়েক গুণ বেড়েছে। এতে অন্য বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ওই বিভাগের দ্বন্দ্বও সৃষ্টি হয়েছে।

গত তিন মাসের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাজ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, কলেজ শিক্ষকদের বদলিতে কয়েক শ অর্ডার জারি করা হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন জাতীয় ও আঞ্চলিক প্রগ্রাম সম্পন্ন করা হয়েছে। মাউশি (মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা) অধিদপ্তর ও শিক্ষা বোর্ডগুলো সহজেই করতে পারত, এমন কিছু কাজ মন্ত্রণালয় থেকে করা হয়েছে। অথচ ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের নীতিমালা ও নিবন্ধন, শিক্ষা কর্ম কমিশন, উচ্চশিক্ষা কমিশন, শিক্ষা আইন, জাতীয় শিক্ষানীতির বাস্তবায়নসহ একাধিক নীতিনির্ধারণী কাজ দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে আছে।

জানা যায়, গত ৩০ নভেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে দুই ভাগ করা হয়েছে। শিক্ষাসচিব মো. সোহরাব হোসাইনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের। আর মো. আলমগীর পেয়েছেন কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিবের দায়িত্ব। কিন্তু মন্ত্রীর দপ্তরে দুই সচিবেরই বসার কথা থাকলেও মো. আলমগীরকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে সচিবালয়ের বাইরে পরিবহন পুল ভবনে। অথচ একই বিভাগের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার বিশ্বাসকে রেখে দেওয়া হয়েছে সচিবালয়ের মন্ত্রীর দপ্তরেই। অশোক কুমার বিশ্বাস একই সঙ্গে দুই বছর ধরে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের দায়িত্বও পালন করছেন। একই সঙ্গে বড় দুটি পদ আঁকড়ে রাখা এই কর্মকর্তার সঙ্গে নানা কাজে যুক্ত হয়েছেন কারিগরি বিভাগে অন্য ক্যাডার থেকে আসা একজন কর্মকর্তা। দুজনে মিলেই পুরো কারিগরি বিভাগ নিয়ন্ত্রণ করছেন। এ বিভাগের জন্য একজন সচিব থাকলেও তাঁর তেমন কোনো মর্যাদাও নেই, ক্ষমতাও নেই। আর সচিবালয়ের বাইরে ভবনে সচিবের অফিস হওয়ায় কাজকর্মেও পুরোপুরি বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছে।

সূত্র জানায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রায় এক ডজন কর্মকর্তা রয়েছেন, যাঁরা উপসচিব পদে এই মন্ত্রণালয়ে ঢুকে দীর্ঘদিন ধরে অবস্থান করছেন। প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নির্দিষ্ট সময় পর পর বদলির বিধান থাকলেও তাঁরা একই মন্ত্রণালয়ে রয়েছেন। সম্প্রতি একজন অতিরিক্ত সচিব অবসরে গেছেন। তিনি সচিবালয়ে ঢোকার প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত একই মন্ত্রণালয়ে পার করেছেন। বর্তমানে আরো তিনজন অতিরিক্ত সচিব রয়েছেন, যাঁরা উপসচিব পদে ঢুকে একই মন্ত্রণালয়ে রয়েছেন। আরো সাত-আটজন কর্মকর্তা রয়েছেন, যাঁরা সচিবালয়ে চাকরির শুরু থেকে এখন পর্যন্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে রয়েছেন, যাঁদের অনেকেই এখন যুগ্ম সচিব। একই কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে একই মন্ত্রণালয়ে থাকায় কাজেকর্মে স্থবিরতা নেমে এসেছে। অভিযোগ রয়েছে, নীতিনির্ধারণী কাজে তাঁদের খুব একটা মন নেই। নিজেদের পদ টিকিয়ে রাখতেই তাঁরা ব্যস্ত রয়েছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের একটি বিভাগে সাধারণত একজন অতিরিক্ত সচিব থাকেন। আগেও তাই ছিল। কিন্তু মন্ত্রণালয় দুই ভাগ হওয়ার পর কাজের গতি বাড়েনি, কেবল কিছু কর্মকর্তার পদোন্নতি ও পদায়নের ব্যবস্থা হয়েছে। কারণ এখন মাধ্যমিক বিভাগেই তিনজন অতিরিক্ত সচিব রয়েছেন, যেখানে আগে ছিলেন একজন। আগে একজন যে পরিমাণ কাজ করতেন, এখন তা তিনজনকে দিয়ে করানো হচ্ছে। তা সত্ত্বেও নীতিনির্ধারণী কাজে তেমন অগ্রগতি নেই। ’

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, মন্ত্রণালয়ে প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে অন্য ক্যাডার থেকে আসা কর্মকর্তাদের দ্বন্দ্ব চরমে। তথ্য ক্যাডার থেকে প্রশাসন ক্যাডারে আসা একজন কর্মকর্তা এবং শিক্ষা ক্যাডার থেকে প্রশাসনে আসা একাধিক কর্মকর্তা রয়েছেন মন্ত্রণালয়ে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনেক ক্ষেত্রেই শিক্ষা ক্যাডার থেকে আসা কর্মকর্তারা নানা কাজে অগ্রাধিকার পাচ্ছেন। এতে নাখোশ প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। এমনকি তথ্য ক্যাডার থেকে আসা ওই কর্মকর্তা শিক্ষামন্ত্রীর পিএস হতে চাওয়ায় প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে দ্বন্দ্ব চরমে উঠেছে।

সূত্র জানায়, এত দিন সারা বছরই বদলির আবেদন জমা দিতে পারতেন সরকারি কলেজের শিক্ষকরা। বদলির দায়িত্ব মাউশি অধিদপ্তরের হলেও এতে ভাগ বসিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সর্বশেষ মাউশি অধিদপ্তর থেকে ঢাকা বাদে সারা দেশের প্রভাষক ও সহকারী অধ্যাপকদের বদলি করা হতো। আর মন্ত্রণালয় ঢাকা শহরের সব পদসহ সারা দেশের সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপকদের বদলি করত। গত ১৫ জানুয়ারি নতুন বদলি নীতিমালা-২০১৭ জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এতে বছরে দুইবার শিক্ষকদের বদলি আবেদনের সুযোগ রাখা হয়েছে। এই বদলির পুরো ক্ষমতাই এখন মন্ত্রণালয়ের হাতে।

বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সভাপতি অধ্যাপক আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তাদের বদলি নীতিমালা তো আগে থেকেই আছে। তাই কলেজ শিক্ষকদের জন্য নতুন করে নীতিমালার কী দরকার? এখন একজন জুনিয়র মেধাবী কর্মকর্তা যে দীর্ঘদিন ধরে রিমোট এরিয়ায় আছে, যার তদবিরের কেউ নেই, সে যদি ভালো জায়গায় না আসতে পারে তাহলে এই নতুন বদলি নীতিমালা দিয়ে কী হবে? মন্ত্রণালয় সব সময় বলে তারা তদবিরের চাপে অস্থির থাকে। এখন এই বদলির পুরো দায়িত্ব যদি মন্ত্রণালয়ের হাতে চলে যায় তাহলে মৌলিক বা নীতিনির্ধারণী কাজগুলোও ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ’

সৌজন্যে: কালের কণ্ঠ

স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.013528108596802