‘কান ধরে উঠবস’ বন্ধের সমাধান শিক্ষকদের চাকুরী জাতীয়করণে! - Dainikshiksha

‘কান ধরে উঠবস’ বন্ধের সমাধান শিক্ষকদের চাকুরী জাতীয়করণে!

অধ্যক্ষ মুজম্মিল আলী |

বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের কতো লাঞ্ছনা ! তাঁদের দূর্গতির যেন শেষ নেই । তাঁরা পরিবার-পরিজন, স্ত্রী-সন্তান , আত্মীয়-স্বজন , দেশ , জাতি ও সমাজের কাছে অনেকটা অবহেলিত । কিছু একটা ঘটলে তাঁদের নিয়ে দু’চারদিন হৈ-চৈ হয় বটে । আবার যেই লাউ, সেই কদু । এ সবের কারণ একটা-ই । আর সেটি হচ্ছে , তাঁদের চাকুরী বেসরকারি ।

গত সপ্তাহে নারায়নগঞ্জের পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি বক্তকে নিয়ে যে লংকা কাণ্ড ঘটেছে , সেটি কোনো বিচ্ছিন্ন বা আচমকা ঘটনা নয় । দেশের বিভিন্ন জায়গায় বহুভাবে এ জাতীয় ঘটনা প্রায়শঃ ঘটেই চলেছে । অসংখ্য বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান কিংবা তাঁদের সহকারিরা বিভিন্নভাবে এ জাতীয় নির্যাতনের শিকার । মিডিয়ায় এ জাতীয় সব খবর আসতে পারে না । ভাগ্যিস , শ্যামল কান্তি বক্তের ঘটনাটি সকলে জানতে পেরেছিল । প্রতিনিয়ত ম্যানেজিং কমিটি ও গভার্ণিং বডির নিত্য যাঁতাকলে পিষ্ঠ কত শ্যামল কান্তি বক্ত’র আহাজারি নীরবে নিভৃতে কেঁদে কেঁদে ফেরে । কে রাখে ক’জনের খবর ? সেলিম ওসমানের মতো কতো দাম্ভিকের কাছে তুচ্ছ জ্ঞান হন শ্যামল কান্তি ভক্তের মত নিরীহ শিক্ষক । নারায়নগঞ্জের সেদিনের ঘটনা দেশের অগণিত ও অবিচ্ছিন্ন ঘটনা প্রবাহের একটি বাস্তব উদাহরণ মাত্র ।ম্যানেজিং কমিটি ও গভার্ণিংবডির অশিক্ষিত কিংবা অর্ধ-শিক্ষিত কোন সদস্য অথবা সভাপতির উদ্যত আচরণে কতভাবে কত শিক্ষক নাস্তানাবুদ ও নাজেহাল হন-তার সঠিক পরিসংখ্যান কারো জানা নেই।

আমাদের দেশ অনেক এগিয়েছে । ধ্যান-ধারণার ঘটেছে কতো ই না পরিবর্তন । কিন্তু ম্যানেজিংকমিটি ও গভার্ণিং বডির বিষয়ে আমাদের ধ্যান- ধারণা সেই উপনিবেশিক আমলেরই রয়ে গেছে । পরাধীন পাকিস্তানী আমলে ম্যানেজিংকমিটি ও গভার্ণিংবডির যে অবাধ ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব ছিল , আজো তা আছে । স্বাধীনতার ৪৫ বছর পেরিয়ে এসে ও আমাদের এ ক্ষেত্রে তেমন একটা সংস্কার হয়নি ।

আমাদের ম্যানেজিংকমিটি ও গভার্ণিং বডি যে অনিয়ন্ত্রিত ও অবাধ ক্ষমতা অনুশীলন করে , তা তাদেরকে স্বেচ্ছাচারী ও স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাবাপন্ন করে তোলে । বৃটেন বা আমেরিকার পার্লামেন্টের মতো অবাধ ক্ষমতা তাদের । বৃটেনের পার্লামেন্ট কেবল নারীকে পুরুষ আর পুরুষকে নারী করতে পারেনা । আমেরিকার পার্লামেন্ট দিনকে রাত আর রাতকে দিন করতে পারেনা । আর সবই তাদের ক্ষমতার মধ্যে । দেশ দু’টির পার্লামেন্টের ক্ষমতার সীমাহীন অবস্থা বুঝাতে প্রতীকি এসব উদাহরণের অবতারণা করা হয় । আমাদের দেশের বেসরকারি স্কুল , কলেজ ও মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটি ও গভার্ণিংবডির ক্ষেত্রে একই উদাহরণ প্রযোজ্য । প্রতিষ্ঠান পরিচালনা ও শিক্ষক-কর্মচারীদের বেলায় তারা বেপরোয়া ও অনিয়ন্ত্রিত ক্ষমতা ভোগ করে থাকেন ।

ম্যানেজিংকমিটি কিংবা গভার্ণিং বডির সদস্যদের শিক্ষাগত যোগ্যতার বালাই নেই । বি-এ , এম-এ পাস করা শিক্ষকদের যারা দেখভাল করবে , তাদের কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রয়োজন নেই । বড়ই বেমানান !

আমাদের শিক্ষায় নানা রকম বৈষম্য। সরকারি-বেসরকারি বৈষম্যে আমাদের শিক্ষা নানাভাবে জর্জরিত । আমাদের সরকার আর্থিক দায় দেনা বৃদ্ধির আশংকায় বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকুরী জাতীয়করণ করার সাহস করেন না । কিন্তু, জাতীয়করণের সাথে কেবল অর্থের প্রশ্ন জড়িত নহে । তাতে শিক্ষকদের চাকুরীর নিরাপত্তা ও মর্যাদার প্রশ্ন সম্পৃক্ত । এছাড়া , অশিক্ষিত ও অর্ধ- শিক্ষিত লোকের তত্বাবধানে শিক্ষার মান বৃদ্ধি পেতে পারে না । একমাত্র চাকুরী জাতীয়করণ না হবার কারণে অনেকেই শিক্ষকদের খুব দূর্বল মনে করে এবংতাঁদের নিয়ে পুতুল খেলা খেলে । কেবলমাত্র বেসরকারি শিক্ষকের সাথে সেলিম ওসমানরা বেয়াদবি করার সাহস করে থাকে । ম্যানেজিং কমিটি কিংবা গভার্ণিং বডির সদস্যরা যাচ্ছে তাই ব্যবহার করে । একজন প্রধান শিক্ষককে কান ধরিয়ে উঠবস করাতে তাদের এতটুকু ভয় করে না । তাদের বিবেকে ও বাঁধে না এতটুকু ।

২০০২ সাল থেকে শ্যামল কান্তি ভক্ত তাঁর প্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষক । এর আগে তিনি হয় এখানে নয়তো অন্য কোথাও ন্যূনতম ১৫ বছর শিক্ষকতা করেছেন । প্রতিষ্ঠানটি তিনিই দাঁড় করিয়েছেন । নিশ্চয় ততোদিনে তাঁর অনেক ছাত্র । এরপর ও তারা তাঁকে এতটুকু খাতির করেনি । কোনো সাধারণ শিক্ষক হলে তাঁরা বোধ হয় তাঁকে চিবিয়েই খেয়ে ফেলতো !

এ সব অনাচার ও অনিয়ম থেকে পরিত্রাণের পথ একটা-ই । আর সেই সহজ পথটি হচ্ছে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকুরী জাতীয়করণ । আমাদের শিক্ষা থেকে সকল বৈষম্য দূর করা , শিক্ষাকে বিশ্ব মানে উন্নীত করা , শিক্ষক নির্যাতন বন্ধ করে শিক্ষকের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা ও চাকুরীর নিরাপত্তা বিধান করা , মেধাবীদের শিক্ষকতা পেশায় আকৃষ্ট করা এবং সর্বোপরি ম্যানেজিংকমিটি তথা গভার্ণিং বডি ও দাম্ভিক সেলিম ওসমানদের দৌরাত্ম্য বন্ধে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকুরী অবিলম্বে জাতীয়করণ করা অপরিহার্য । অন্যথায় বরাবরই এসব দাম্ভিক অত্যাচারীর কারণে বেসরকারি শিক্ষকদের কেবলি কান ধরে উঠবস করতে হবে ।

লেখক – অধ্যক্ষ , চরিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, কানাইঘাট, সিলেট ।

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0033571720123291