কীভাবে ইন্টার্ন করব? - দৈনিকশিক্ষা

কীভাবে ইন্টার্ন করব?

নিজস্ব প্রতিবেদক |

স্নাতকের শেষ পর্যায়ে অনেক সময় শিক্ষার্থীদের কোনো না কোনো প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্ন বা শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করতে হয়। পুরোদমে পেশাজীবন শুরু করার আগে এটাই হলো নিজের দক্ষতা বা দুর্বলতাগুলো খুঁজে বের করার কিংবা নিজেকে প্রমাণের সুযোগ। কীভাবে শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করার জন্য আবেদন করবেন, কীভাবে কাজ করবেন, কীভাবে সুযোগগুলো কাজে লাগাবেন—এসব বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (আইবিএ) অধ্যাপক রিদওয়ানুল হক

১. সময় নিয়ে সিভি তৈরি করুন

বিশ্ববিদ্যালয়জীবনে অনেকে জীবনবৃত্তান্ত বা সিভি তৈরির কাজে তেমন গুরুত্ব দেন না। ইন্টার্নশিপ কিংবা চাকরি পেতে সিভি বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সময় নিয়ে সিভি তৈরি করতে হবে। সাজানো-গোছানো সিভি আপনাকে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে রাখবে। অন্য কারও সিভি হুবহু নকল কিংবা অনুসরণ করা যাবে না। ইউরোপ বা যুক্তরাষ্ট্রের সিভি তৈরির ধরনটা থেকে ধারণা নিতে পারেন। মিথ্যা, অতিরঞ্জিত কিংবা কাল্পনিক তথ্য সিভিতে ব্যবহার করবেন না। সিভি তৈরি হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কিংবা অভিজ্ঞ কাউকে দেখিয়ে নিতে পারেন। সিভির সঙ্গে ‘কভার লেটার’ও গুরুত্বপূর্ণ। আপনি কেন শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করতে চান, কী শিখতে চান, এসব নিজের ভাষায় লিখতে হবে কভার লেটারে।

২. প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানুন

আপনি যে প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্ন করতে চান, সে প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ভালোমতো জানুন। সেখানকার পরিবেশ, কাজের ধরন সম্পর্কে খোঁজ নিন। ধরুন, আপনি ফিন্যান্স বিভাগে ইন্টার্ন করতে চান কোনো প্রতিষ্ঠানে, তাহলে ফিন্যান্স বিষয়ের ক্ষেত্রে বর্তমান সময়ে কম্পিউটারে যেসব দক্ষতা জানা প্রয়োজন, তা ইন্টারনেট ঘেঁটে শিখে নিন। কোন প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশিপের পর চাকরির সুযোগ আছে, এসব খোঁজ খবর নিয়ে তারপর সিদ্ধান্ত নিন।

৩. ই-মেইল যোগাযোগ ও নেটওয়ার্ক তৈরি করুন

প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত ইন্টার্ন চেয়ে বিজ্ঞাপন দেয় না। এ ক্ষেত্রে আপনি যে প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্ন করতে চান, তার মানবসম্পদ বিভাগ বরাবর ই-মেইল করে জেনে নিতে পারেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ই-মেইলে কভার লেটারসহ সিভি পাঠিয়ে দিতে পারেন। প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট কিংবা ‘লিংকডইন’ থেকে যোগাযোগের ই-মেইল ঠিকানা সংগ্রহ করতে পারেন। চলতি শব্দে ই-মেইল লেখার কৌশল রপ্ত করুন। পেশাজীবীদের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি করুন। এখন যেহেতু ডাকযোগে সিভি পাঠানোর চল নেই, তাই ই-মেইল লেখার রীতিনীতি শিখুন।

৪. সাক্ষাৎকারকে গুরুত্ব দিন

ইন্টার্ন হিসেবে নিয়োগের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ একটি পর্ব হচ্ছে সাক্ষাৎকার। প্রচলিত চাকরির ক্ষেত্রে লিখিত পরীক্ষা, মৌখিক পরীক্ষাসহ বিভিন্ন ধাপ থাকলেও ইন্টার্নে সাধারণত একবারই সাক্ষাৎকার পর্বের মুখোমুখি হতে হয়। সাক্ষাৎকারে প্রচলিত কিছু প্রশ্ন করা হয়। এ ক্ষেত্রে উত্তর মুখস্থ না করে নিজের মতো করে সাজিয়ে বলার চেষ্টা করুন। নিজের সম্পর্কে বাড়িয়ে বলবেন না, মিথ্যা বলবেন না। বাড়িতে সাবলীলভাবে ইংরেজি বলার চর্চা করুন।

৫. নিজেই প্রস্তাব দিন

অনেক প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্ন হিসেবে আবেদন ও সাক্ষাৎকারের পর হয়তো আপনার নিয়োগ না-ও হতে পারে। এ ক্ষেত্রে সেই প্রতিষ্ঠানের মানবসম্পদ বিভাগের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করুন। ই-মেইলের মাধ্যমে কাজের সুযোগ আছে কি না, তা নিয়মিত জানার চেষ্টা করতে পারেন। কোনো প্রতিষ্ঠানে যদি ইন্টার্নের সুযোগ না-ও থাকে, ই-মেইলের মাধ্যমে আপনি নিজে থেকে প্রস্তাব দিতে পারেন। আপনি যে বিভাগে কাজ করতে আগ্রহী, যে বিষয়ে কাজ করতে চান, আপনার কাজের মাধ্যমে কীভাবে প্রতিষ্ঠান উপকৃত হতে পারে তা লিখে মানবসম্পদ বিভাগ ও প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাছে ই-মেইল করুন।

৬. যতটা সম্ভব নিজের সেরাটা দিন

সাধারণত ইন্টার্নে সময় থাকে ৩ থেকে ৬ মাস। এই সময়ের মধ্যেই কাজ শেখার চেষ্টা করুন। নিয়োগদাতা কিংবা তত্ত্বাবধায়ককে আপনার আগ্রহের কথা বলুন। এমনভাবে কাজ শেখা ও জানার চেষ্টা করুন, যা আপনাকে পেশাজীবনে সহযোগিতা করবে। অনেকেই ইন্টার্নের সময় অফিসের আলোচনা সভা, কর্মশালা, প্রশিক্ষণ পর্ব ইত্যাদি এড়িয়ে যান, এমন করবেন না। প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা যেভাবে কাজ শেখেন, সেভাবেই নিজেকে গড়ে তোলার সুযোগ নিন। প্রতিষ্ঠান যেন আপনার প্রয়োজন অনুভব করে, সেভাবে নিজেকে গড়ে তুলুন।

৭. বড় পরিসরে ভাবুন

‘ছয় মাস পেরোলেই তো ইন্টার্ন শেষ’, এমন ভাববেন না। আপনি যে পেশায় ক্যারিয়ার গড়তে চান, সেখানে কী কী দক্ষতা প্রয়োজন, কী কী কারিগরি বিষয় সম্পর্কে ধারণা থাকা উচিত, তা ইন্টার্নের সময়ই জানার চেষ্টা করুন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পুঁথিগত শিক্ষাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়, পেশাগত বিভিন্ন দিক সম্পর্কে তেমন জানার সুযোগ থাকে না। ইন্টার্নের সুযোগকে পেশাজীবন ও বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার সংযোগ সেতু হিসেবে ব্যবহার করুন।

৮. প্রশ্ন করতে শিখুন

ইন্টার্ন শুরু করলেই যে শেখার সুযোগ পাবেন, তা কিন্তু নয়। শেখার দায়িত্ব আপনার। যাঁদের সঙ্গে কাজের সুযোগ পাবেন, তাঁদের কাজ সম্পর্কে প্রশ্ন করে জানার চেষ্টা করুন। আপনি যেহেতু নবীন, তাই আপনার সেভাবে কাজ না জানাটাই স্বাভাবিক। তাই সংকোচ না করে আগ্রহ নিয়ে প্রশ্ন করুন। ভুল থেকে শেখার মনোভাব গড়ে তুলুন।

৯. শিক্ষকদের সহায়তা নিন

বিশ্ববিদ্যালয়জীবনে সাধারণত শেষ বর্ষে এসে ইন্টার্ন করতে হয়। কিন্তু আপনি আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করুন। শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়মিত এ ব্যাপারে আলোচনা করুন, তাঁদের পরামর্শমতো নিজেকে তৈরি করুন।

১০. চাকরির সুযোগ তৈরি করুন

বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানেই ইন্টার্ন থেকে স্থায়ী কাজের সুযোগ মেলে। এ ক্ষেত্রে প্রথম দিন থেকেই নিজেকে উৎসাহী ও কাজের প্রতি আগ্রহী হিসেবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করুন। সবাইকে সব কাজ জানতে হবে, এমন নিয়ম কোনো প্রতিষ্ঠানে নেই। কিন্তু সব কাজে আগ্রহী ব্যক্তিদের সুযোগ থাকে বেশি। তাই নিজের মধ্যে আগ্রহ তৈরি করুন। চাকরিটা স্থায়ী করার জন্য প্রতিষ্ঠানের করপোরেট রীতিনীতি বুঝে নিন। সময়ের কাজ সময়ে শেষ করুন।

দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0039510726928711