কুমিল্লায় আধিপত্য বিস্তার, অভ্যন্তরীণ দলাদলি ও সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্বের জের ধরে শাহজাদা ইসলাম (২০) নামে এক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও ছাত্রলীগ কর্মী খুন হয়েছে। এছাড়া জমি সংক্রান্ত বিরোধ ও পূর্বশত্রুতার জের ধরে চাচার হাতে জিয়াউর রহমান সানি (২৬) নামের এক ছাত্রদল কর্মী খুন হয়েছে। শনিবার রাতে নগরীর নজরুল এভিনিউ ও চর্থা তালতলা এলাকায় এ পৃথক খুনের ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, নিহত শাহজাদা নগরীর সুজানগর এলাকার ব্যবসায়ী সহিদ মিয়ার ছেলে ও কুমিল্লা নগরীর পদুয়ার বাজার এলাকার ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ প্রথম বর্ষের ছাত্র। এই হত্যাকাণ্ডে ‘কিশোর অপরাধী’ সাফায়েতসহ তার ৭ সহযোগী অংশ নেয় বলে পুলিশ প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছে। রবিবার বিকাল পর্যন্ত এই দুই খুনের ঘটনায় পুলিশ কাউকে আটক করতে পারেনি।
পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহতের পারিবারিকসূত্রে জানা যায়, শনিবার রাতে কিশোর সাফায়েত উল্লাহ সৈকতের নেতৃত্বে তার ৬/৭ জন সহযোগী শাহজাদাকে নগরীর নজরুল এভিনিউ এলাকায় নৃশংসভাবে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ (কুমেক) হাসপাতাল এবং পরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়ার পর ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহত শাহজাদার বন্ধু রুমান বলেন, শনিবার বিকালে শাহজাদা মোটর সাইকেলযোগে দুই বন্ধু নিয়ে নগরীর নজরুল এভিনিউ এলাকায় আড্ডা দিতে আসে। সেখানে পরিকল্পিতভাবে সাফায়াতসহ ৬/৭ জন মিলে শাহজাদাকে এলোপাতাড়ি কোপায়। রুমান জানান এসময় তাকেও কোপানোর চেষ্টা করলে তিনি দৌড়ে পালিয়ে যান। গতকাল ঢামেকে ময়না তদন্তের পর শাহজাদার মরদেহ বাড়িতে নিয়ে আসা হলে শোকাবহ পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এই হত্যাকাণ্ড নগর জুড়ে আলোচিত হচ্ছে। এ ঘটনায় পুলিশ অভিযুক্ত সাফায়াতের মা ছাড়াও আরো কয়েকজন বন্ধুকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। তাদের গ্রেফতারে পুলিশের কয়েকটি টিম অভিযান শুরু করেছে। কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সালাহ উদ্দিন জানান, পূর্ব বিরোধ ও আধিপত্য বিস্তারের জের ধরে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
কে এই কিশোর সাফায়েত: শাহাজাদা ইসলাম খুনের মূলহোতা স্কুলছাত্র সাফায়েত উল্লাহ সৈকত জেলার লাকসাম পৌরসভা এলাকার উত্তর-পশ্চিম গাঁ গ্রামের অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী আবু মুছা সেলিমের একমাত্র ছেলে। তার মা সাজেদা চৌধুরী কুমিল্লার একটি বেসরকারি হাসপাতালে দীর্ঘদিন যাবত্ সেবিকার চাকরি করে আসছিলেন। গত ৩ মাস আগে তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। সাফায়েত তার মায়ের সঙ্গে কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডের পেছনের গলিতে একটি ভবনের নিচতলায় ভাড়া বাসায় বসবাস করে। সাফায়েত বর্তমানে কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ড মডেল কলেজের স্কুল শাখার ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী। বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের কারণে তাকে গত বছর ইস্পাহানী স্কুল এ্যান্ড কলেজ থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। পরে সে চলতি বছর লাকসাম আইডিয়াল স্কুল এ্যান্ড কলেজ থেকে সপ্তম শ্রেণি পাস সার্টিফিকেট এনে কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ড মডেল কলেজে পুনরায় ৮ম শ্রেণিতে ভর্তি হয়। ১৬ বছর বয়সী সাফায়েত ইতোমধ্যে নগরীর নজরুল এডিনিউ ও মডার্ণ স্কুল এলাকা, পূর্ব ঠাকুরপাড়া, শিক্ষাবোর্ড এলাকা, মনোহরপুর, রামঘাট এলাকাসহ নগরীর বিভিন্ন স্কুলে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে ১০-১২ জনের একটি গ্রুপ গড়ে তুলেছে। প্রায় প্রতিদিন বিকাল ও সন্ধ্যায় ওই গ্রুপকে ওইসব এলাকায় মহড়া ও আড্ডা দিতে দেখা যেত। তাদের উত্পাতে স্থানীয় ব্যবসায়ীসহ সাধারণ লোকজন অতিষ্ঠ ছিল বলে এলাকাবাসী জানিয়েছে।
ছাত্রদল কর্মী খুন:এদিকে জমি সংক্রান্ত বিরোধ ও পূর্বশত্রুতার জের ধরে চাচার হাতে জিয়াউর রহমান সানি (২৬) নামের এক ছাত্রদল কর্মী খুন হয়েছে। শনিবার গভীর রাতে নগরীর চর্থা এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। নিহত সানি চর্থা তালতলা এলাকার আনিসুর রহমান জালালের পুত্র। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, জমি সংক্রান্ত বিরোধ ও পূর্বশত্রুতার জের ধরে শনিবার গভীর রাতে সানিকে তার দুই চাচা ও চাচাত ভাইয়েরা মিলে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। এ সময় আশপাশের লোকজন তাকে উদ্ধার করে রাত ২টার দিকে কুমিল্লা সদর হাসপাতালে ভর্তি করলে সেখানে তার মৃত্যু হয়। সানির স্ত্রী ফারহানা হক লিমার অভিযোগ, পারিবারিক সম্পত্তি আত্মসাতের উদ্দেশ্যে পূর্বপরিকল্পিতভাবে সানির চাচারা এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছেন।