কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অবরুদ্ধ - দৈনিকশিক্ষা

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অবরুদ্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক |

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রভাষক এবং ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহবুবুল হক ভূঁইয়াকে এক মাসের বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে উপাচার্যকে (ভিসি) অবরুদ্ধ করে রেখেছে শিক্ষক সমিতি।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তারা ভিসির বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন।

এর আগে বিকালে জাতীয় শোক দিবসে ‘ক্লাস নেয়ার অভিযোগে’ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রভাষক এবং ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহবুবুল হক ভূঁইয়াকে এক মাসের বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানোর নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. মুজিবুর রহমান মজুমদার স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে একথা জানানো হয়।

শোক দিবসে ওই শিক্ষক ক্লাস নিয়েছেন বলে শোক দিবসের অবমাননা হয়েছে দাবি করে তার পদত্যাগ চেয়ে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। তাকে বহিষ্কারের দাবি করে উপাচার্যকে স্মারকলিপিও দেয় তারা।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার ডিনদের সঙ্গে বৈঠক করেন উপাচার্য। বৈঠকের একদিন পর বৃহস্পতিবার (১৭ই আগস্ট) তার বিরুদ্ধে এমন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিল প্রশাসন।

এ বিষয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আলী আশরাফ  বলেন, ছাত্রলীগের অভিযোগসহ ক্যাম্পাসে উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে তাকে এক মাসের ছুটি দেয়া হয়েছে। তবে ‘বাধ্যতামূলক’ শব্দটি ব্যবহারে আপত্তি জানান তিনি।

ওই শিক্ষককে ছুটিতে পাঠানো বিষয়ে কোনো মিটিং হয়েছে কিনা জানতে চাইলে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না, এ বিষয়ে কোনো মিটিং হয়নি। উপাচার্যের নির্বাহী ক্ষমতা বলে তাকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে।’

উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দিতে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম সচল রাখতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছেও বলে জানান তিনি।

এমন সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে অভিযুক্ত শিক্ষকের বক্তব্য নেয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে অধ্যাপক আলী আশরাফ বলেন, ‘না, তার বক্তব্য নেয়া হয়নি।’

অভিযুক্ত ব্যক্তির বক্তব্য না নিয়েই কারো বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া যায় কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তার (মাহবুবুল হক ভূঁইয়া) বিরুদ্ধে ছাত্রলীগের কয়েক শ’ নেতাকর্মী অভিযোগ করেছে। তাকে বহিষ্কারের জন্য দাবি করে বিশ্ববিদ্যালয় অস্থিতিশীল করে রেখেছিল। এই উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে তাকে এক মাসের ছুটি দেয়া হয়েছে। এছাড়া বিষয়টি তদন্ত করতে কমিটি করা হয়েছে। পরবর্তীতে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী চূড়ান্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে ক্লাস নেয়া যায় কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে পাল্টা প্রশ্নে উপাচার্য বলেন, ‘তাহলে তিনি শিক্ষার্থীদের নিয়ে ক্লাসরুমে কী করছিলেন? আপনারা কি আমার মুখ দিয়ে বলাতে চান- সেদিন ওই শিক্ষার্থীদের কাছে প্রশ্নফাঁস করার জন্য তিনি তাদের ডেকেছিলেন? পরীক্ষা কমিটির সদস্য হয়ে উনি পরীক্ষার আগের দিন ক্লাস নেন কীভাবে?’

তবে ক্লাস নেয়া হয়েছিল কিনা তা তদন্তে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদের স্বল্প সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে বলে জানান উপাচার্য।

যদি তিনি ক্লাস নিয়েও থাকে, তাহলে বিষয়টিকে আপনারা (বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন) অপরাধ হিসেবে দেখছেন কিনা? এমন প্রশ্ন এড়িয়ে যান তিনি।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান বলেন, একের পর এক এ বিশ্ববিদ্যালয়ে দুর্নীতি ও অনিয়ম হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণেও অনিয়ম করা হয়েছে, এটা সুস্পষ্ট। ২০ লাখ টাকার কাজে নয়-ছয় হয়েছে। বেদিতে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দেয়া হয়েছে। এসব দুর্নীতি ও অনিয়ম বিরুদ্ধে কথা বললে শিক্ষকদের হয়রানি করা হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সভাপতি মাহবুবুল হক ভূঁইয়াকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানোর একক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ভিসি।

শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, অভিযুক্ত শিক্ষকের কথা না শুনেই তিনি কীভাবে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারেন আ আমাদের বোধগম্য নয়।

ভিসি যে ‘উদ্ভূত পরিস্থিতির’ অজুহাত দেখিয়ে এ হীন কাজ করেছেন, তা তার (ভিসির) নিজেরই সৃষ্টি বলে দাবি করেন এ শিক্ষক নেতা।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ বলেন, ‘আমরা তাকে (মাহবুবুল হক ভূঁইয়া) ক্লাসে পেয়েছি। তিনি শোক দিবসে ক্লাস নিয়ে বঙ্গবন্ধুকে অবমাননা করেছেন। বিষয়টি আমরা স্মারকলিপি আকারে ভিসি স্যারকে দিয়েছি। তদন্ত করে যদি আমাদের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায় তাহলে আমরা তার বহিষ্কার দাবি করেছি। আর অভিযোগের সত্যতা পাওয়া না গেলে আমাদের কোনো বক্তব্য নেই।’

তিনি বলেন, ‘তিনি (মাহবুবুল হক ভূঁইয়া) দাবি করেছেন- শোক দিবসের অনুষ্ঠানে তিনি ছিলেন। কিন্তু এর কোনো প্রমাণ নেই। সেখানে বিভিন্ন মিডিয়া, আমাদের নেতাকর্মী ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদেরসহ প্রায় একশ’ ক্যামেরা ছিল। আমার কাছে ওই অনুষ্ঠানের কমপক্ষে ১০ হাজার ছবি আছে। একটি ছবিতেও তাকে দেখা যায়নি।’

কুবি ছাত্রলীগ সভাপতি চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আরও বলেন, ‘এই শিক্ষক যদি অনুষ্ঠানে থাকার কোনো প্রমাণ দিতে পারে, একটি ছবিও যদি দেখাতে পারেন- তাহলে আমি (ছাত্রলীগের) পদ ছেড়ে দেব।’

ছাত্রলীগের অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক মাহবুবুল হক ভূঁইয়া জানান, যাদের ক্লাস নেয়ার অভিযোগ তোলা হয়েছে, সে ব্যাচের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা চলছে। ইতিমধ্যে একটি পরীক্ষা অনুষ্ঠিতও হয়েছে, সুতরাং এখন তাদের ক্লাস নেয়ার কোনো সুযোগ নেই।

শোক দিবসের অনুষ্ঠানে না থাকার অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে তিনি বলেন, আমরা ‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের ব্যানারে’ বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যে শ্রদ্ধা জানিয়েছি। সেখানে অনেক সিনিয়র শিক্ষক ছিলেন। আমি তাদের ঠেলে সামনে যেতে চাইনি। এ কারণে আমার ছবি নাও থাকতে পারে। তবে বিভাগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো ছবি আমার কাছে আছে।

ঘটনার ব্যাখ্যায় মাহবুবুল হক ভূঁইয়া তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, “আমি ১৫ আগস্ট সকালে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ক্যাম্পাসে আসি। এরপর যথারীতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্যে ফুল প্রদান শেষে ওইখানেই দাঁড়িয়েছিলাম। এর মধ্যে কিছু স্টুডেন্ট এসে বলে, তারা কিছু বিষয় বুঝছে না, একটু সময় দিতে। আমি তাদেরকে ডিপার্টমেন্টে আমার রুমের সামনে গিয়ে দাঁড়াতে বলি। এর কিছুক্ষণ পর ডিপার্টমেন্টে গিয়ে দেখি ওরা সংখ্যায় প্রায় ১০-১২ জন। আর এর মধ্যেই আমার আরেকজন সহকর্মী অন্য ডিপার্টমেন্টের আরও দুজন সহকর্মীসহ রুমে আসেন। এ অবস্থায় তাদের সঙ্গে ওই রুমে বসে কথা বলা সম্ভব ছিল না, কারণে রুমে এত মানুষের বসার জায়গা ছিল না।”

মাহবুবুল হক ভূঁইয়া আরও লেখেন, “আমি স্টুডেন্টদেরকে পাশের একটি রুমে বসতে বলি এবং নিজেও একটু পরে সেখানে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করি। এর পরিপ্রেক্ষিতেই ক্লাস নেয়ার অভিযোগ তোলা হচ্ছে। আদতে ওই ব্যাচের ক্লাস অনেক আগেই শেষ। সেমিস্টার ক্যালেন্ডার এবং ইতিমধ্যে শুরু হওয়া সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষার রুটিন সে প্রমাণই বহন করছে। সুতরাং ক্লাস নেয়ার অভিযোগ একেবারেই সঠিক নয়। এখানে একটি ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে।’’

বৃহস্পতিবার সকালের ভিত্তিহীন অভিযোগে ওই শিক্ষককে ‘হেনস্থা’ করা হচ্ছে দাবি করে তার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধন করেছে তার সহপাঠী ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা।

অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে আয়োজিত এ মানববন্ধনে বক্তারা একজন শিক্ষক যখন শোক দিবসের কর্মসূচি  পালন শেষে নিজের দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে ছুটির দিনেও শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনে তাদের সঙ্গে একাডেমিক বিষয়ে আলোচনা করেন তাতে অবমাননা হয় কীভাবে? তার এ দায়িত্বশীলতাই বরং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা।

উপাচার্যের ভাস্কর্য বিষয়ক দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব থাকায় ওই শিক্ষককে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ফাঁসানো হচ্ছে বলেও দাবি করেন বক্তারা।

মানববন্ধনে বক্তব্য দেন স্টেট ইউনিভার্সিটির প্রভাষক কাজী আনিছ, যমুনা টিভির সিনিয়র রিপোর্টার নাজমুল হোসেন, স্টাফ রিপোর্টার মনিরুল ইসলাম, সময় টিভির সহকারী নিউজ এডিটর মানোয়ার হোসেন, আরটিভির রিপোর্টার খান আল আমিন প্রমুখ।

‘ভিত্তিহীন’ অভিযোগে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হলে আরও কঠোর কর্মসূচিতে যাওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন বক্তারা।

স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.006587028503418