কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করার সিদ্ধান্ত শেষ পর্যন্ত যেন বাতিল না হয় - দৈনিকশিক্ষা

কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করার সিদ্ধান্ত শেষ পর্যন্ত যেন বাতিল না হয়

দৈনিক শিক্ষা ডেস্ক |

সাড়ে ছয় বছরে নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে অবশেষে কোচিং, প্রাইভেট ও সব ধরনের নোট-গাইড, অনুশীলন বা সহায়ক বই নিষিদ্ধ করে শিক্ষা আইনের খসড়া চূড়ান্ত করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এত সহায়ক বা অনুশীলন বই প্রকাশের সুযোগ রাখা হয়নি। এসব অপরাধে কেউ জড়িত হলে জেল-জরিমানা বা চাকরিচ্যুত (শিক্ষক হলে) করা হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

এটা ঠিক যে, দীর্ঘদিন থেকেই প্রাইভেট টিউশনি ও কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে এবং কীভাবে করতে হবে তা নিয়ে অনেক আলাপ-আলোচনা-সমালোচনা চলছে। বর্তমানে আমাদের শিক্ষা যে একটি কোচিং রাজ্যে বসবাস করছে তা নতুন করে বলে দিতে হয় না, অলিতে গলিতে নানা ধরনের কোচিং সেন্টারের উপস্থিতিই তার জানান দেয়। নিয়ন্ত্রণহীনভাবে গড়ে ওঠা এই বিপুলসংখ্যক কোচিং সেন্টার ও প্রাইভেট পড়ানোর স্থানগুলো আমাদের ছাত্রছাত্রীদের যে জিম্মি করে ফেলছে তা সুস্পষ্ট।

এ কথা বারবার বলা হয়েছে, শ্রেণীকক্ষে শিক্ষকরা যদি পাঠ্যপুস্তক অনুযায়ী বিশ্লেষণ ও বোঝানোর মাধ্যমে যথাযথভাবে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করতেন, তবে শিক্ষার্থীদের আলাদাভাবে গাইড বই পড়া ও কোচিং করার কোন প্রয়োজন হতো না। পড়া বোঝার জন্য শিক্ষার্থীরা নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিত হতে অনেক বেশি আগ্রহী হয়ে উঠত। দুঃখের বিষয়, একশ্রেণীর শিক্ষক এ কাজটি সঠিকভাবে করছেন না। তারা শ্রেণীকক্ষে নামমাত্র উপস্থিত হয়ে সঠিক পাঠদানের পরিবর্তে তাদের কাছে প্রাইভেট পড়ার জন্য প্রচ্ছন্নভাবে শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দিয়ে থাকেন। কোন কোন স্কুলের শিক্ষকরা তো শিক্ষার্থীদের এমন ধারণা দিয়ে থাকেন, তাদের কাছে প্রাইভেট না পড়লে ভালো ফল করা কোনভাবেই সম্ভব নয়। এসব শিক্ষকরা নিজেদের কাছে শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়তে তো উৎসাহী করে তোলেনই, তার ওপর নির্দিষ্ট প্রকাশনীর গাইড বই অনুসরণ করার কথাও বলেন। এর ফলে বাধ্য হয়ে শিক্ষার্থীদের কোচিং ও গাইড বই অনুসরণ করতে হয়। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর নিজস্ব বোধবুদ্ধি ও মননের চর্চা বলতে কিছু হয় না। তাদের জ্ঞান নির্দিষ্ট ছক ও মুখস্থ বিদ্যার মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে।

কোচিং বন্ধে নীতিমালা হয়েছে, সতর্কতামূলক নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। বড় বড় কোচিংসেন্টারে দুর্নীতি দমন কমিশনের অভিযানও পরিচালিত হয়েছে। কিন্তু কোনভাবেই তা বন্ধ করা যায়নি, বরং অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কক্ষ ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করে কোচিং বাণিজ্যের লাইসেন্স পেয়েছে সংশ্লিষ্টরা। সারাদেশে যখন কোচিং বন্ধের তোড়জোড় শুরু হয়, তখন ভাড়া বাসায় কোচিং বন্ধ করার উদ্যোগ গ্রহণ করলে প্রকারান্তরে সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কক্ষ ও সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করে রমরমা কোচিং বাণিজ্য শুরু হয়েছিল, যা এখন আরও ব্যাপকতা পেয়েছে। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে দেখা গেছে, ক্ষমতাসীন দলের অনুসারীরাও প্রভাব খাটিয়ে নিজ নিজ এলাকায় কোচিং সেন্টারের নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। প্রচলিত নীতিমালা ও নির্দেশনার দুর্বলতা কিংবা তা বাস্তবায়নে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদাসীনতার কারণেই আজ পর্যন্ত কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করা যায়নি।

শিক্ষা আইনে কোচিং ও নোট বইয়ের বাণিজ্য বন্ধের বিষয়টি ইতিবাচক। আমরা অবশ্যই একে স্বাগত জানাই। তবে উল্লিখিত বিধান কিংবা ধারা সংবলিত আইনকে আমরা কোচিং বন্ধের অন্যতম পদক্ষেপ হিসেবে ধরে নিলেও তা বাস্তবায়নের শঙ্কা থেকে আমরা এখনও মুক্ত হতে পারছি না। কারণ দেশের বিভিন্ন আইনে ভালো ভালো নির্দেশনা কিংবা কঠোর শাস্তির বিধান থাকলেও অনেক সময় তা কার্যকারিতা সংকটে পড়ে। বাংলাদেশে এ রকম বহু আইন আছে যেগুলোর কার্যকারিতা তো দূরের কথা, আইন লঙ্ঘনের ঘটনা নাকের ডগায় এসে ঘুরলেও তার প্রতিকার কিংবা প্রতিরোধ কোনটি পাওয়া যায় না।

আমরা কখনই চাই না, কোচিং বন্ধের নতুন বিধানটিও প্রচলিত অন্যান্য আইনের মতো অকার্যকর হয়ে উঠুক। আইনের প্রয়োগে সরকারকে অবশ্যই কঠোর হতে হবে। এক্ষেত্রে কোন পক্ষকেই ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই। কোচিং বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত শিক্ষকদের সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা হবে। তারা শিক্ষার্থীদের পাঠদানে অবহেলা করছেন কি-না, প্রতিদিন স্কুল বা কলেজে হাজির হন কি-না, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোচিং-সংক্রান্ত নীতিমালা লঙ্ঘন করা হচ্ছে কি-না দালিলিক প্রমাণসহ এসব তথ্য সংগ্রহ করা উচিত। শিক্ষার মান বাড়াতে হলে প্রথমে শিক্ষকদের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা দিয়ে তাদের ক্লাসের প্রতি মনোযোগী করতে হবে। সেই সঙ্গে কোচিংয়ের প্রতি তাদের নিরুৎসাহিত করতে হবে।

সৌজন্যে: সংবাদ

জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ - dainik shiksha পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা - dainik shiksha হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে - dainik shiksha সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0039000511169434