কোথায় চলেছে শিক্ষা, কোথায় যাচ্ছে ভবিষ্যত্ - দৈনিকশিক্ষা

কোথায় চলেছে শিক্ষা, কোথায় যাচ্ছে ভবিষ্যত্

অজয় দাশগুপ্ত |

কয়েকদিন পরপর খুন হত্যা ধর্ষণের মত বিষয়গুলো আমাদের সামনে চলে আসবে, আমরা কিছুদিন হইচই করে একসময় ভুলে যাবো, যতদিন না আর একটা নতুন বিপদ এসে হানা না দিচ্ছে। এদিকে নতুন প্রজন্ম বা ভাবীকালের সন্তানদের নিয়ে চলছে তেলেসমাতির খেল। খবরে দেখলাম দুই শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কেউ পাস না করায় এবং ভর্তি না হওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে বা বন্ধ করা হচ্ছে। ভাবুন একবার। যেসব ছেলে-মেয়ে সেখানে পড়তো বা পড়ে তাদের কি হবে? এটাতো সবাই জানি এগুলো সরকারি বা দাতব্য কি্ছু ছিল না। যারা সেখানে পড়তো তাদের অভিভাবকরা বাংলাদেশের অভিজাত ও ধনী শ্রেণির মানুষ।

এরা সন্তানদের কোথায় পাঠায়, কেন পাঠায় সেটা তারা ভালোই জানেন। এমন না যে টাকার অভাবে যেখানে খুশি সেখানে পাঠিয়েছিল তারা। এই প্রেরণের পেছনে ছিল নানা ধরনের কারণ। একদিকে সন্তানদের কথিত ভালো পড়াশুনা আরেকদিকে সামাজিক প্রেস্টিজ। বড়লোক নামে পরিচিত এসব ধনীদের ছেলে-মেয়েরা পাড়ার স্কুলে যায় না। মতিঝিল হাই স্কুল, আইডিয়াল স্কুল কিংবা মিউনিসিপ্যাল স্কুল নাম শুনলে এদের গা জ্বালা করে। সেসব স্কুলে যায় আমজনতার ছেলে-মেয়েরা। কারো বাবা হয়তো কেরাণী কারো মা শ্রমজীবী। এদের সন্তানদের সাথে তাদের ছেলে-মেয়েরা পড়াশুনা করবে এটা মানাই যেন কঠিন। সামাজিক শ্রেণি বিন্যাসের দেশ আমাদের। শ্রেণি বিভক্ত সমাজে মানুষ নিজের কান কেটে হলেও পরের যাত্রা ভঙ করে। অথচ এরা একবারও ভাবে না এর জন্য তাকে কি পরিমাণ মূল্য চুকাতে হয়। এটাতো গেল সামাজিক দিক। রাষ্ট্র নিজেকে যতই ডিজিটাল মনে করুক না কেন তার শরীরে এখনো অনেক জঞ্জাল। আমাদের মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী নাহিদ সাহেব যেকোনো মন্ত্রীর চাইতে সচেতন। তার অতীত  রাজনীতি বা বর্তমান জায়গাটা কোনোভাবেই গড়পরতা কিছু নয়।

তার ভেতর একধরনের আন্তরিকতা দেখি আমরা। কিন্তু সেটাই যথেষ্ট না। মাঝে মাঝে এটা প্রমাণ হয়ে যায় গত্বাধা এক নিয়তিই যেন আমাদের মেধাকে গিলে খাবার জন্য তৈরি। এই যে প্রতিষ্ঠানগুলো এতদিন ধরে লেখাপড়া চালানোর নামে অনিয়ম করে আসছিল বা তাদের প্রতিষ্ঠান থেকে একজনও পাস করতে পারলো না—এর দায় নেবে কে? এমন কি সম্ভব যে একজন ছাত্রছাত্রীও পাশ করার মতো ছিল না? দীর্ঘসময় ধরে রাজনীতি ও সমাজের জঞ্জাল এসবদিকে নজর দিতে দেয় না। একটা ঘটনা শেষ না হতেই আরেকটা তার জায়গা নিয়ে স্বাভাবিকতাকে পিছু হটিয়ে দেয়। পেছনে পড়ে থাকে লেখাপড়ার মতো গভীর বিষয়। সমাজের কোনো ভালো দিকে দৃষ্টি দেবার সময় নেই কারো। শিশু সংগঠন থেকে দলবাজি সর্বত্র এখন খালি খাই খাই ভাব। ফলে যারা স্কুল কলেজ ইউনিভার্সিটি খুলে বসেছে তারা বাদ যাবে কোন দুঃখে? এটা তাদের আয়-উপার্জনের উত্স। একথা সরকার জানে, সমাজ জানে, দেশ জানে, সবাই জানে। কিন্তু কেউ ঠেকাতে আসে না। বিদেশের কিছু আম শ্বেতাঙ্গ যাদের নাম জন মাইকেল, ক্যারি পিটার বা মেরি, তাদের ধরে নিয়ে গিয়ে টিচার প্রিন্সিপাল ইত্যাদি বানালেই কি প্রতিষ্ঠানটি জাতে উঠে যায়? আসল জায়গায় ঠনঠনে। অথচ এগুলো দেখার কেউ নেই। দেখবেন বড় বড় শহরের গালভরা নাম দিয়েছি আমরা। কসমোপলিটন মেট্রোপলিটন এসব নামের শহরেই কিন্তু এরা ব্যবসা করে যাচ্ছে।

আপনি গ্রামের এমন একটি স্কুল-কলেজ পাবেন না যেখান থেকে একজনও পাস না করার রেকর্ড আছে। বা স্কুল-কলেজ উঠে যাচ্ছে। বরং সেখানে আরো বিস্তৃত করা প্রয়োজন নেটওয়ার্ক। অন্যদিকে যাদের আমরা দেশের ক্রিম বিবেচনা করি সে সব প্রিভিলাইজড ছেলে-মেয়েরাই এখন ঘোর বিপদে। সরকার প্রায়ই ঘোষণা দিয়ে এদের সহজ জীবনে স্বাভাবিকতায় ফেরার তাগিদ দেয়। জনগণেরও সে আশা। কিন্তু মূল জায়গায় হাত না দিলে তা কি কখনো সম্ভব হবে? কারা এসব প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত? তা বের করে আনা কঠিন কিছু না। কিন্তু কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে সাপ বের হবার ভয়ে তা করবো না আমরা। দেখা যাবে গড ফাদারদের হাত অনেক দীর্ঘ। এবং যারা তা করতে যাবে তারাই পড়বে ঘোর বিপদে। এই চক্রের হাতে পড়ে আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যত্ যেন শেষ না হয়। এতবড় একটা উদ্বেগের খবর কিন্তু খুব গৌণভাবে এসেছে মিডিয়ায়। কারণ লেখাপড়া বিষয়টি এখন তালিকার অনেক পেছনে। সামনে আছে সন্ত্রাস মারামারি আর অনাচার। অথচ এ এক ঘোর পাপ। যারা  বুঝে না বুঝে সন্তানদের ভবিষ্যত্ নিয়ে এমন খেলাধুলা করে তারা যেমন অভিভাবকরাও সমান দায়ী। তাই এখনই সময়। আজেবাজে গালভারী নামের স্কুল কলেজ ইউনিভার্সিটির জন্য আবেগপ্রবণ হয়ে ওঠা বন্ধ করতে হবে। সরকারকে কঠোর হতে হবে এ বিষয়ে। সামাজিক সচেতনতা না থাকলে এর সমাধান অসম্ভব। আমরা এমন এক স্বার্থপর জাতি হয়ে উঠেছি নিজের ছেলে-মেয়ে ছাড়া আর কারো খবর রাখি না। তারা পড়লো না মরলো তাতেও কিছু যায় আসে না আমাদের। এই ভয়াবহ বাস্তবতা থেকে বেরুবার উপায় বাতলে দিন সুধিজন। না হলে দেশ সমাজ মানুষ কিছুই টিকবে না। বিদ্যা ও মেধার বিষয়ে রাজনীতির উদাসীনতা আমাদের দেশে কোনোদিন নেতৃত্ব তৈরি করতে পারবে বলে মনে হয় না। কবে আমরা আসলে এসব বিষয়ে আবার আগের মত সচেতন হয়ে উঠতে পারবো?

সুত্র: দৈনিক ইত্তেফাকে উপ-সম্পাদকীয়

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0063290596008301