শিক্ষিত হয়েও চাকরি-বেতনের দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছে এমপিও বঞ্চিত শত শত আইসিটি শিক্ষকরা। রোববার (১৫ মে) থেকে রোদ, বৃষ্টি উপেক্ষা করে রাত-দিন আত্মীয় পরিজন ছেড়ে ধর্মঘট পালন করছেন তাঁরা। মঙ্গলবার (১৭ মে) শেষ রাতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গিয়ে শিক্ষকদের খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাতে দেখা যায়।
এদিকে প্রিয়জনদের ফেলে রেখে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে প্যারামেডিকেল শিক্ষার্বোডে’র পরিবর্তে ‘বাংলাদেশ ডিপ্লোমা মেডিক্যাল এডুকেশন বোড গঠন ’আইন দ্রুত বাস্তবায়নের দাবিতে আমরণ অনশন পালন করছেন শতশত শিক্ষার্থীরা। এ যেন দেশের ছিন্নমূল কিংবা বস্তির মানুষ। যাদের ঘর বাড়ি কিছু নেই। নেই কোনো জগৎ সংসার।
সোমবার (১৬ মে) থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আমরণ অনশন করছেন শিক্ষার্থীরা। অনশনে যোগ দেওয়া মহাখালীর প্যরামেডিক্যালের শিক্ষার্থী আসাদুজ্জামান অমিত জানান, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক পরিচালিত অবৈধ ডিপ্লোমা মেডিক্যাল টেকনোলজি ও ফার্মেসি কোর্স পরিচালনা অবিলম্বে বন্ধ করে প্রস্বাবিত ‘প্যারামেডিকেল শিক্ষার্বোডে’র পরিবর্তে ‘বাংলাদেশ ডিপ্লোমা মেডিক্যাল এডুকেশন বোর্ড গঠন ’ আইন দ্রুত বাস্তবায়ন করাসহ ১০ দফা দাবিতে আমরণ অনশণ পালন করছি।
গত দুইদিনে অনন্ত ১০জন সদস্য অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তিনি বলেন, আমাদের দাবি না আদায় হওয়া পর্যন্ত ঘরের ফিরে যাবো না। অপরদিকে প্রেসক্লাবের ঠিক সামনের দিকের ফুটপাতের উপর অবস্থান নিয়ে এমপিওভুক্তির দাবিতে রোববার ১৫ মে থেকে অবস্থান ধর্মঘট পালন করছেন আইসিটি শিক্ষকরা।
এবিষয়ে জানতে চাইলে রাজবাড়ীর শিক্ষক আব্দুল আওয়াল বলেন, ইসলামের ইতহাসে অনার্স ও মাস্টাস ডিগ্রি অর্জনের তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ে বিশেষ শিক্ষা নিয়ে ৫ বছর ধরে এমপিওভুক্ত স্কুলে শিক্ষকতা করছেন তিনি।
জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, বাসায় তার স্ত্রী ও সন্তান রয়েছে। সবার মায়া ছেড়ে মাথায় কাফনের কাপড় পড়ে ধর্মঘট পালন করছেন তিনি। তার মতই শতাধিক শিক্ষক একইভাবে দিন কাটাচ্ছেন এভাবে। একটাই আশা তাদের এমপিওভুক্তির জন্য।
মো.আশিকুজ্জামান নামের শিক্ষক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে মাধ্যমিক পর্যায়ে কম্পিউটার শিক্ষা চালু করেন। তারই ধারাবাহিকতায় প্রতিটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে একজন করে কম্পিউটার শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু ২০১১ সালের ১৩ নভেম্বর এক পরিপত্রের মাধ্যমে অনুমোদনপ্রাপ্ত বিষয় আইসিটি শিক্ষকদের এমপিও স্থগিত করা হয়।২০১২ সালে মাধ্যমিক পর্যায়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়টি ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত আবশ্যিক বিষয় হিসেবে পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। প্রতিটি বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের মাধমে আমরা পাঠদান করছি। দুঃখের বিষয় আমরা শিক্ষক হওয়া সত্ত্বেও কোনো ধরনের পারিশ্রমিক ও বেতনভাতা পাচ্ছি না। তাই অবিলম্বে আইসিটি শিক্ষকদের এমপিওভুক্তকরণের দাবি জানাই।
এদিকে, একই দবিতে দুই বছর এমপিও না দেয়ার শর্তে অতিরিক্ত শ্রেণি শাখায় নিয়োগপ্রাপ্ত মাধ্যমিকের শিক্ষকদের লাগাতার অবস্থান ধর্মঘট চালিয়ে যাচ্ছে। তাঁরাও গত রোববার (১৫ মে) থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এই অবস্থান ধর্মঘট শুরু করেছেন।
এবিষয়ে জানতে চাইলে সৃষ্টপদে নিয়োগ প্রাপ্ত নন এমপিও একজন শিক্ষক বলেন, আমাদের সামনে আর কোন রাস্তা নেই। আমরা আর কত দিন এভাবে বেতন বাদে শিক্ষকতা করে যাবো। বিনা বেতনে পরিবার নিয়ে আমরা অনেক কষ্টে দিন কাটাচ্ছি।সরকার যদি আমাদের দাবি মেনে না নেয় তাহলে আমাদের মৃত্যু ছাড়া আর কোন পথ খোলা নেই।
উল্লেখ্য চারদিন যাবত আইসিটি বিভাগের শিক্ষকরা এমপিও ভুক্তির দাবিতে প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে।