প্রাথমিকের শিক্ষকদের জন্য কতদিন ধরে বলে আসছি ক্যাডার তৈরি করতে হবে। কিন্তু এটি হচ্ছে না। আরে এখনতো গরু-ছাগলেরও ক্যাডার আছে। তাহলে প্রাথমিকের সাড়ে ৪ লাখ শিক্ষকের জন্য ক্যাডার হবে না কেন?
বুধবার দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত ‘মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা’ শীর্ষক জাতীয় সম্মেলনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. মোতাহার হোসেন এমপি এসব কথা বলেন। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় দিনব্যাপী এই জাতীয় সম্মেলনের আয়োজন করে।
উল্লেখ্য, প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এই আলোচনার আয়োজন করে। সম্মেলনে সারাদিনে ৫টি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এতে শিক্ষাবিদ, সরকারি কর্মকর্তা, শিক্ষা বিশেষজ্ঞ, সারাদেশ থেকে আসা শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা অংশ নেন।
মোতাহার হোসেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সমালোচনা করে বলেন, ২০১০ সালে জাতীয় শিক্ষানীতি পাস হইছে। কথা ছিল ২০১১ সালেই অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার সব কার্যক্রম প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বুঝিয়ে দেবে। কিন্তু দেয়নি। ২০১৬ সালে এসে বলছে প্রস্তুতি নেই। তবু দেবে বলেছে। শেষ পর্যন্ত দেয় কি না সেটি দেখতে হবে। ক্ষয়িষ্ণু জমিদারি এত সহজে ছাড়বে না।
প্রাথমিক শিক্ষার বিষয়ে তিনি কথা বলেন। তিনি বলেন, এখানে অমার বোন রাশেদা কে চৌধুরী বসে আছেন, যখন প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী শুরু করেছিলাম তখন আমি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ছিলাম। ২০০৯ সালে প্রাথমিকে সমাপনী পরীক্ষা শুরুর জন্য আমাদেরকে বড় একটা থ্যাংকস লেটার দিয়েছিলেন রাশেদা কে চৌধুরী। এখন কেন যে তিনি পরীক্ষাটি বন্ধ করতে বলছেন তা বুঝতে পারছি না। গ্রামাঞ্চলে ১৫/২০ জন অভিভাবককে জিজ্ঞেস করুন তারা সবাই বলবে, পরীক্ষাটি চালু থাকুক।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং শিক্ষা কর্মকর্তাদের দুর্নীতির বিষয়ে বলতে গিয়ে তিনি জানান, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছোটখাটো মেরামতের জন্য স্লিপের নাম করে সরকার থেকে বছরে প্রতি স্কুলে ৪০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। কিন্তু এ টাকায় কোনো মেরামত হয় না। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, প্রধান শিক্ষক এবং বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি এই তিনজন মিলে টাকাগুলো মেরে দেন।
যোগ্যতাপূর্ণ শিক্ষকের বিষয়ে সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী বলেন, অনেকে বলে প্রাথমিকে ক্লাসরুম নাই। যোগ্যতাপূর্ণ শিক্ষক নাই। এটা ভুল কথা। প্রাথমিকে বর্তমানে ৬০ শতাংশ শিক্ষক রয়েছেন যাদের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি রয়েছে। বরং জুনিয়র স্কুলে যোগ্যতাপূর্ণ শিক্ষক নেই। কোথাও চাকরি না পেয়ে এরা একটি ঘর খুলে বসে। নাম দেয় জুনিয়র স্কুল।
মানসম্মত শিক্ষার বিষয়ে মোতাহার হোসেন বলেন, শিক্ষক-অভিভাবক-ছাত্র এই ত্রয়ীকে এক করতে না পারলে কোনো লাভ হবে না। আর এদের সাথে শিক্ষা কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ত করতে হবে। তাহলেই মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত। প্রাথমিক শিক্ষা একটি পর্যায়ে এসেছে। এখন শিক্ষকদের আন্তরিক হতে হবে। শিক্ষা কর্মকর্তাদের মনিটরিং করতে হবে জোরেশোরে।
প্রাথমিকের শিক্ষক থেকে শিক্ষার্থী সবাই বলছে ল্যাপটপ, ইন্টারনেট না হলে ভালো শিক্ষাদান সম্ভব নয়। কিন্তু নিজের থেকে কিছু করবে না। শুধু বলবে এটা নেই, ওটা নেই। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের জন্য কোরিয়া থেকে এনে পিয়ানো দেয়া হয়েছিল। এখন সেই পিয়ানোগুলোর কোনো হদিস নেই। জিজ্ঞেস করলে বলে-এগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। অর্থাৎ কেউ রুটিন ওয়ার্ক ছাড়া কোনো কাজ করবে না। কোনো সৃষ্টিশীলতা নেই।
তিনি প্রাথমিকের শিক্ষক এবং পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের জাতি গঠনের ভূমিকা রাখতে অনুরোধ করেন। তার মতে, বঙ্গবন্ধুর ডাকে আমরা মুক্তিযুদ্ধে গেছি, বীরের বেশে ফিরেছি। ওই সময় বঙ্গবন্ধ বলতেন, যার যা কিছু আছে তা নিয়েই ঝাঁপায়া পড়। আর আমি বলছি, নিজ নিজ স্কুলের উন্নয়নে, যার যা কিছু আছে তা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। এই পরিবর্তনে ঠাকা পয়সা লাগবে না, শুধু দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করলেই হবে। আর আমরা যদি এ পরিবর্তন করতে না পারি তাহলে মুক্তিযুদ্ধে নিহত শহীদের আত্মা কষ্ট পাবে। তার যদি জিজ্ঞেস করে, আমরা জীবন দিয়ে তোমাদেরকে দেশ দিলাম, জাতি দিলাম, তোমরা কী করলে ?