এমপি সেলিম ওসমান কর্তৃক লাঞ্ছনার শিকার নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত ঘুষ গ্রহণের মামলায় বিচারিক আদালত থেকে স্থায়ী জামিন পেয়েছেন। পরে আদালত আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর মামলার শুনানির পরবর্তী তারিখ ধার্য করেন।
বুধবার (১৬ই আগস্ট) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আক্তারুজ্জামানের আদালতে হাজির হয়ে শ্যামল কান্তি ভক্ত জামিনের আবেদন করলে শুনানি শেষে তা মঞ্জুর করেন বিচারক।
গত বছর বন্দর উপজেলার পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের এক শিক্ষিকাকে এমপিওভুক্ত (বেতন বাবদ সরকারি অনুদান পাওয়া) করে দেয়ার আশ্বাসে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে মামলায় দায়ের হয়েছিল।
শ্যামল কান্তি ভক্তের আইনজীবী নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এর আগে ১৩ জুলাই মামলাটি বিচারিক আদালতে প্রেরণ করা হয়। বুধবার মামলার নির্ধারিত তারিখে শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত আদালতে হাজির হয়ে স্থায়ী জামিন আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন। পরে আদালত আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর মামলার পরবর্তী তারিখ ঘোষণা করেন।
তিনি আরও বলেন, আমরা সুবিচারের আশায় আছি। শ্যামল কান্তি ভক্ত একজন শিক্ষক মানুষ। তিনি নিরাপরাধ। পূর্বপরিকল্পিতভাবে স্কুল থেকে তাড়ানোর জন্যই এ মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। আশা করছি তিনি এর সুষ্ঠু বিচার পাবেন।
শিক্ষক শ্যামল কান্তির ভক্তের স্ত্রী সবিতা রাণী হালদার বলেন, তিনি (শ্যামল কান্তি) আগের চেয়ে এখন ভালো আছেন। তবে রাতে দুশ্চিন্তায় ঘুমান না।
প্রসঙ্গত, ধর্ম অবমাননার কথিত অভিযোগে গত বছরের ১৩ মে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে কান ধরে ওঠবস করানো হয়। এ ঘটনার দুই মাসের মাথায় ওই বছরের ১৪ জুলাই এমপিওভুক্ত করে দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে স্কুলের ইংরেজি শিক্ষক মোর্শেদা বেগমের কাছ থেকে এক লাখ ৩৫ হাজার টাকা ঘুষ নেয়ার অভিযোগে শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের বিরুদ্ধে মামলা হয়। দীর্ঘ তদন্তের পর পুলিশ ৪ জনকে সাক্ষী দেখিয়ে গত (২০১৭ সালের) ১৭ এপ্রিল আদালতে এ মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০১৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর এমপিওভুক্ত করে দেয়ার জন্য শ্যামল কান্তি ভক্তকে ৩৫ হাজার টাকা ঘুষ দেন ইংরেজি শিক্ষক মোর্শেদা বেগম। এরপর আরও এক লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। পরে আরও এক লাখ টাকা দেয়া হয়। কিন্তু তিনি শিক্ষক মোর্শেদা বেগমের এমপিওভুক্তের দরখাস্ত কোনো স্থানেই প্রেরণ করেননি। পরবর্তীতে এমপিওভুক্ত না হওয়ায় এক লাখ ৩৫ হাজার টাকা ফেরত চাইলে তিনি ২০১৬ সালের ১২ মে টাকা নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন। এ বিষয়ে মোর্শেদা বেগমের অভিযোগের ভিত্তিতে বন্দর সহকারী কমিশনার (ভূমি) তদন্তও করেছেন।
গত ২৪ মে শ্যামল কান্তি ভক্তের বিরুদ্ধে ওই মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। সেদিন শ্যামল কান্তি আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তাকে কারাগারে পাঠান আদালত। পরে গত ৩১ মে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে শুনানি শেষে আদালত তাকে জামিন দেন। গত ২০ জুলাই নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ হোসনে আরা বেগমের আদালত শ্যামল কান্তি ভক্তকে অভিযোগ গঠনের আগ পর্যন্ত জামিন দেন।