প্রতিমাসে বেতন পেতে হলে পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও প্রতিষ্ঠান প্রধানকে নির্ধারিত অংকের উৎকোচ দিতে হয় বলে অভিযোগ করেছেন উপজেলার বাদুড়তলা দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষিকা ও কর্মচারীরা। অভিযুক্তরা হলেন, প্রতিষ্ঠানের সুপার মো. সিরাজুল ইসলাম ও পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মো. বারেক হাওলাদার।
এর আগেও এমন অভিযোগ করে শিক্ষকরা হুমকি-ধমকির শিকার হয়েছেন তাই নাম প্রকাশ না করার শর্তে মাদ্রাসার শিক্ষকরা বলেন, প্রতি মাসে ছয় হাজার টাকা না দিলে শিক্ষকদের বেতনে স্বাক্ষর করে না পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি। এ ছাড়াও প্রতিষ্ঠান প্রধান (সুপার) প্রতিমাসেই বিভিন্ন অজুহাতে শিক্ষকদের কাছ থেকে আদায় করেন মোটা অংকের টাকা। প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি নবায়ন করার নামে এককালীন এক লাখ সাঁইত্রিশ হাজার টাকা নেয়া হয়েছে।
২০১৬ সালের জুলাই মাসে এই টাকা প্রত্যেক শিক্ষককে তাদের বেতন স্কেল অনুযায়ী দিতে হয়েছে সুপার ও সভাপতিকে। এ ছাড়া বিভিন্ন অজুহাতে গত বছর জানুয়ারিতে ১৭ হাজার ৭০০ ফেব্রুয়ারিতে ১৭ হাজার, এপ্রিলে ১৫ হাজারসহ প্রতিমাসেই শিক্ষকদের থেকে টাকা আদায় করছেন প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ও সুপার। এই টাকা নেয়ার বিষয়ে কেউ যেন কোনো অভিযোগ না করতে পারে সে জন্য শিক্ষকদের কাছ থেকে লিখিত নিয়ে স্বাক্ষর রাখা হয়।
জানা যায়, মাদ্রাসাটি ১৯৮৪ সালে বাদুরতলা গ্রামে বিশখালী নদীর পাড়ে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর কয়েক দফা নদীভাঙনের কবলে পড়ে ২০০৩ সালে একই ইউনিয়নের মানকি সুন্দর গ্রামে আবার প্রতিষ্ঠা করা হয়। সরেজমিন গিয়ে মাদ্রাসা সুপার সিরাজুল ইসলামকে পাওয়া যায়নি। তার কথা জানতে চাইলে শিক্ষকরা বলেন, সুপার মাসের মধ্যে দু-চার দিন আসেন হাজিরা খাতায় বকেয়া স্বাক্ষর করেন এবং দেনা-পাওনা নিয়ে চা খেয়ে চলে যান। তবে হাজিরা খাতায় দেখা যায় জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহের কর্মদিবসের প্রতিদিনই তার উপস্থিতি রয়েছে। কিন্তু এরপর ৮ জানুয়ারি থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পুরো একমাস তিনি মাদ্রাসায় আসেননি।
এ বিষয়ে সহকারী সুপার আবদুল হালিম বাড়তি টাকা নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, শিক্ষকদের কাছ থেকে যে টাকা নেয়া হয় তা অফিস খরচ বাবদ নেয়া হয়। এর বেশি কিছু আমার জানা নাই। শিক্ষকরা জানান, ঘূর্ণিঝড় সিডর পরবর্তী সময়ে এই প্রতিষ্ঠানটি সরকারি অনুদান হিসেবে পঞ্চাশ হাজার টাকা পেয়েছিল কিন্তু মাদ্রাসা উন্নয়নে কোনো খরচ না করে পুরো টাকাই আত্মসাৎ করেছে সভাপতি ও সুপার।
মাদ্রাসায় সুপার সিরাজুর ইসলামকে না পেয়ে মঙ্গলবার (১৪ই ফেব্রুয়ারি) দাখিল পরীক্ষা চলাকালীন রাজাপুর ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে তিনি আছেন এমন খবর পেয়ে তার সঙ্গে দেখা করতে গেলে তাকে পাওয়া যায়। কিন্তু সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে মোটরসাইকেলে দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন।
অপরদিকে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আবদুল বারেক মুঠোফোনে বলেন, আমি মাদ্রাসার জন্য জায়গা দিয়েছি। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের কিছু খরচ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানের যেহেতু কোনো ফান্ড নেই তাই যাবতীয় খরচ শিক্ষকদেরই বহন করতে হয়। তবে শিক্ষকদের বিলে স্বাক্ষর করতে আমি কোনো টাকা-পয়সা নেই না। উপজেলা মাধ্যমিক কর্মকর্তা ফারহানা ইয়াসমিন বলেন, মাদ্রাসা সুপারের ব্যাপারে মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখব।