চট্টগ্রামে এমপিওভুক্তির হয়রানি পদে পদে - Dainikshiksha

চট্টগ্রামে এমপিওভুক্তির হয়রানি পদে পদে

শৈবাল আচার্য্য |

চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার ফাতেমা জিন্নাহ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ওসমানসহ চারজন গত বছর এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন করেছিলেন। তাদের মধ্যে তিনজনের এমপিও হলেও প্রধান শিক্ষকেরটি আটকে যায়। পরে তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালকের কাছে এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন করেন। তারপরও খোলেনি তার জট। সর্বশেষ গত সপ্তাহে তিনি আবেদনটি পুনর্বিবেচনার আবেদন নিয়ে যান উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তবে তিনি এই শিক্ষকের আবেদনটি গ্রহণই করেননি। শুধু চন্দনাইশেই নয়, মহানগরীর কোতোয়ালি শিক্ষা অফিসসহ জেলার সাতকানিয়া, রাঙ্গুনিয়া, আনোয়ারাসহ প্রায় সব উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এমপিওভুক্তি নিয়ে এমন নানা অনিয়ম ও হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেছে। উঠেছে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগও। এদিকে অভিযোগ পেয়ে গত দেড় বছরে প্রায় দু’ডজন শিক্ষা

কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চট্টগ্রাম অফিস।

সম্প্রতি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের একজন প্রোগ্রাম অফিসারের বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্যে লিপ্ত থাকার প্রমাণ পেয়েছে দুদক টিম। এদিকে অর্থ লেনদেনসহ নানা অনিয়মে জড়িত থাকায় একজন মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে গত দেড় বছরে তিনবার বদলি করা হয়েছে।

শিক্ষকের এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম হয়রানির সম্মুখিন হতে হয় উপজেলা শিক্ষা অফিসে। শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তারা নানা কাগজপত্র দেওয়া হয়নি এমন কথা বলে আবেদন গ্রহণ করেন না। তবে উৎকোচ দিলে দ্রুত আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পাশাপাশি ফাইল স্বাক্ষরও হয়ে যায়। এ ছাড়া দেখা গেছে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে আবেদন করা পাঁচজন শিক্ষকের মধ্যে তিনজনকে এমপিওভুক্ত করলেও বাকি দু’জনকে আর্থিক সুবিধা লাভের জন্য নানা অজুহাতে আটকে দেওয়া হয়। পরে কথামতো টাকা দিলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। উপজেলা শিক্ষা অফিস ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের সঙ্গে আঞ্চলিক অফিসের কর্মকর্তাদের আর্থিক লেনদেনে চুক্তি থাকে। আবার মাউশির আঞ্চলিক অফিসের অসাধু কর্মকর্তাদের সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর টাকার বিনিময়ে এমপিও পাইয়ে দেওয়ারও চুক্তি থাকে।

সরকারি সব নিয়ম মেনে ২০১৬ সালে এমপিওভুক্তির আবেদন করেও সাতকানিয়া উপজেলায় বাদপড়া শিক্ষক লোকমান হোসেন (ছদ্মনাম) বলেন, ‘কাগজপত্র সব ঠিক থাকলেও কর্মকর্তাদের ঘুষ দিতে না পারায় আমার ফাইলটি আটকে রাখে তারা। আমার তিন বন্ধুর এমপিও হয়ে গেলেও আমারটা হয়নি। দু’জন কর্মকর্তা ঘুষ হিসেবে আমার কাছে ৩০ হাজার টাকা দাবি করেছিল। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে আমি তা দিতে পারিনি।’ রাঙামাটির বাঘাইছড়ির এক শিক্ষক বলেন, নিয়ম মেনেই তিনি অনলাইনে আবেদন ফরম পূরণ করেছেন। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোনো সাড়া না পেয়ে নানা জনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। শিক্ষা অফিসে যোগাযোগ করলে নানা ত্রুটির কথা বলেন তারা। পরে দু’জন কর্মকর্তাকে টাকা দিলে তারা ফাইলটি ঠিক করে দেন। চন্দনাইশের কয়েকজন শিক্ষক জানান, তিনজন কর্মকর্তার সঙ্গে দেনদরবার করে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে এমপিওভুক্ত হয়েছেন তারা। চাকরির স্বার্থে নাম প্রকাশ করতে অনীহা প্রকাশ করেন তারা।

এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপ-পরিচালক আজিজ উদ্দিন বলেন, ‘শিক্ষক এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি শিক্ষা অফিসের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও টাকা আদায়ের অভিযোগ পেয়েছি। আমাদের অফিসের একজন প্রোগ্রাম অফিসারের বিরুদ্ধেও টাকা আদায়ের অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি ঢাকায় জানানোর পর তদন্ত টিম এসে রিপোর্ট নিয়ে গেছে। তার বিরুদ্ধে কাজ করে দেওয়া বাবদ টাকা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গিয়েছিল। এর আগেও এই কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছিল। দুদক গত দেড় বছরে প্রায় ২০ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এমপিওর ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগ পেয়েছে। চট্টগ্রাম আঞ্চলিক অফিসের কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রমাণসহ অভিযোগ পেলে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি চট্টগ্রাম শাখার উপদেষ্টা সুনীল চক্রবর্তী বলেন, ‘বিভিন্ন স্থান থেকে এমপিওভুক্তির জন্য শিক্ষকদের নানা হয়রানি ও টাকা আদায়ের অভিযোগ আমরা শুনেছি। তবে শিক্ষকরা বিষয়টি আমাদের না জানিয়ে টাকা লেনদেন করেন।’

ফাতেমা জিন্না বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ওসমান বলেন, ‘তৎকালীন প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে একটি মামলা ছিল। যার সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আমার সব কাগজপত্র ঠিক থাকলেও মামলাসহ নানা অজুহাতে আমার এমপিওর আবেদনটি শিক্ষা অফিসার গ্রহণ করছেন না। এমপিও হয়ে যাওয়া কয়েকজন বন্ধু দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের ঘুষ দিতে বললেও টাকার অভাবে আমি তা পারিনি।’ এ বিষয়ে কথা বলতে শিক্ষা কর্মকর্তা আবু কাউসারের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

এমপিওভুক্ত হওয়া চট্টগ্রাম বিভাগের প্রায় দেড় ডজন শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে মাউশি অফিস পর্যন্ত কর্মকর্তারা নানাভাবে তাদের হয়রানি করেছেন। কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারী ঘুষ না দিলে ফাইল আটকে রাখারও হুমকি দিয়েছেন। যার কাছ থেকে যেমন পেরেছে তেমনভাবেই টাকা আদায় করা হয়েছে। এমপিওভুক্ত হওয়ার সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া শেষ করতে ২০ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়েছে বলে জানান তারা।

জানা গেছে, এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রে শিক্ষকদের হয়রানি ও ঘুষ নেওয়ায় হাটহাজারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বে থাকা শফিউল আজমকে গত দেড় বছরে তিনবার বদলি করা হয়েছে। এর আগে তিনি আনোয়ারা ও পটিয়ায় দায়িত্বে ছিলেন। বিষয়টি অস্বীকার করে শফিউল আজম বলেন, ‘কারও সঙ্গে আমি অনিয়ম বা ঘুষ আদায় করিনি। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আমাকে বদলি করা হয়েছে।’ দুদক তার বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার প্রমাণ পেয়েছে কি-না, জানতে চাইলে তিনি ফোন কেটে দিয়ে মোবাইল অফ করে দেন।

সৌজন্যে: সমকাল

প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের - dainik shiksha পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার - dainik shiksha ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার - dainik shiksha প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি - dainik shiksha ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় - dainik shiksha শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে - dainik shiksha ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0030040740966797