বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) ৬টি অনুষদের অধীনে ১৮টি বিভাগে শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজার। ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত এ বিশ্ববিদ্যালয়ের এখনও কোনো আবাসিক হল নির্মিত হয়নি। ফলে সব শিক্ষার্থীকেই শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করতে হয়। কিন্তু শিক্ষার্থীদের পরিবহনের জন্য রয়েছে মাত্র ৬টি বাস। এ বাসগুলো দুটি রুটে যাতায়াত করে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় শিক্ষার্থীদের। এক্ষেত্রে ছাত্রীদের ভোগান্তি কয়েকগুণ বেশি।
শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় পরিবহন পুলের ৬টি বাসের মধ্যে নিজস্ব ৪টি (২টি মিনিবাস) এবং দুটি ভাড়ায়। এছাড়া শিক্ষকদের জন্য রয়েছে একটি বাস ও দুটি মাইক্রোবাস। কম খরচে ক্যাম্পাসে যাতায়াতে শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসের ওপর নির্ভর করতে হয়। কিন্তু বাস সংকটের কারণে ভোগান্তির শেষ নেই। বেশিরভাগ শিক্ষার্থীকে প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে পাবলিক বাসে যাতায়াত করতে হয়।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, যাতায়াতের এ ভোগান্তির অন্যতম কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের শুরুতে দক্ষিণে দপদপিয়া বা আবদুর রব সেরনিয়াবাত সেতু। এ সেতুতে বাস ছাড়া রিকশা বা অটো চলাচল না করায় বাধ্য হয়ে ভোগান্তি জেনেও লোকাল বাসে যাতায়াত করতে হয় শিক্ষার্থীদের। এক্ষেত্রে ছাত্রীদের নাজেহাল হওয়াসহ ভাড়া নিয়ে বাসের চালক-কর্মচারীদের সঙ্গে প্রায়ই অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। যা নিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতে পড়তে হয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকেও।
সাধারণ শিক্ষার্থীরা জানান, পরিবহন সমস্যা এখন তাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। দীর্ঘদিনের এ সমস্যা যেন দেখার কেউ নেই। নগরীর নতুল্লাবাদ ও রুপাতলী বাস স্ট্যান্ড থেকে ছেড়ে আসা বাসগুলোতে জায়গা থাকে না। তাছাড়া বাসগুলো ছোট হওয়াতে দাঁড়িয়ে গাদাগাদি করে যেতে হয়।
মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী সমির বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণ শিক্ষার্থী গাদাগাদি করে যান। অনেকে ঝুলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করেন। তাই অনেক শিক্ষার্থী বাধ্য হয়ে পাবলিক বাসে যাতায়াত করেন। কিন্তু এতেও শান্তি নেই। ভাড়া নিয়ে চালক ও কর্মচারীদের সঙ্গে বচসা হয়। এছাড়া বাস কর্মচারীদের কটূক্তি ও তাদের হাতে নাজেহাল হতে হয় শিক্ষার্থীদের। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার বাস শ্রমিকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষও হয়েছে। ডাকা হয়েছিল ধর্মঘট পর্যন্ত।
আরেক শিক্ষার্থী সুজন বলেন, শুরু থেকেই আমরা পরিবহন সংকটে ভুগছি। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে আমরা একাধিকবার চিঠি দিয়েছি। কোনো লাভ হয়নি। বরং দিন দিন শিক্ষার্থী সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায়ও পরিবহন সংকট আরও বেড়েছে। এ থেকে রক্ষা পেতে গিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন লোকাল বাসে যাতায়াত করতে হয়। প্রায়ই বাসচালক এবং হেলপারদের সঙ্গে বসচা ও সংঘর্ষ হচ্ছে। ঘটেছে হতাহতের একাধিক ঘটনা।
ইংরেজি বিভাগের একাধিক ছাত্রী জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে দাঁড়ানোর জায়গাটুকু পর্যন্ত থাকে না। ছাত্রীদের অধিকাংশ সময় লোকাল বাসে যাতায়াত করতে হয়। বিভিন্ন সময় সাধারণ লোকজনের কটূক্তি ও হয়রানির শিকার হতে হয়। এছাড়া লোকাল বাসেও ছাত্রীদের দাঁড়িয়ে যেতে হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় পরিবহন পুলের এক কর্মকর্তা বলেন, শিক্ষার্থীদের জন্য আরও কয়েকটি বাস প্রয়োজন। তাছাড়া প্রতিবছর নতুন প্রায় দেড় হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি হচ্ছে। বাসের সংখ্যা না বাড়ালে পরিবহন সমস্যা আরও তীব্র আকার ধারণ করবে। বর্তমানে যে বাস রয়েছে তা চাহিদার তুলনায় অর্ধেকেরও কম।
বাস সংকটের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এসএম ইমামুল হক বলেন, আমরা নতুন বাসের জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরে ইতিমধ্যে চিঠি দিয়েছি। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো এখনও চালু করা সম্ভব হয়নি। আবাসিক হলগুলো চালু হলে পরিবহন সংকট অনেকটা কমে যাবে। শিগগিরই আবাসিক হলগুলো চালু করা হবে বলে জানান তিনি। পাশাপাশি গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধির চেষ্টাও চলছে বলে তিনি জানান।