চাঁদা তুলে শিহাবের লাশ হাসপাতালে পাঠায় বন্ধুরা - Dainikshiksha

চাঁদা তুলে শিহাবের লাশ হাসপাতালে পাঠায় বন্ধুরা

নিজস্ব প্রতিবেদক |

আদাবরের শেখেরটেক এলাকার প্রমিনেন্ট হাউজিং। এই হাউজিংয়ের ২৪টি ভবনে রয়েছে ২৪০টি ফ্ল্যাট। তার একটি ২৪নং ভবনের ৩ তলায় পরিবার নিয়ে বসবাস সাবেক বিদ্যুৎ কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলামের। গত শনিবার এই ফ্ল্যাটেরই একটি কক্ষ থেকে তার বড় ছেলে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিহাবুল ইসলাম খান শিহাবের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করা হয়। প্রতিবেশীদের মতে, ২৪০টি পরিবারের মধ্যে এই ফ্ল্যাটের বাসিন্দা একটু ব্যতিক্রম। প্রতিবেশীর সঙ্গে সুসম্পর্ক দূরে থাক যোগাযোগ পর্যন্ত নেই। একই ধরনের বক্তব্য হাউজিংয়ে কর্মরত কর্মচারীদেরও। তাদের দাবি, নিজের ছেলে খুন হয়ে যাওয়ার পরও তাদের মধ্যে তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়নি। এমনকি হাসপাতালে লাশ নিয়ে যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া দিতেও অস্বীকৃতি জানায় তারা। শেষমেশ শিহাবের বন্ধুরা চাঁদা তুলে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া মিটিয়েছে। এসব কারণে প্রথম থেকেই রহস্যেঘেরা এ পরিবারের লোকজনের ওপরই সন্দেহ হয় পুলিশের। আটক করা হয় শিহাবের ছোট ভাই কলেজছাত্র সিফাতকে। আটকের পর সিফাত নিজ হাতে ভাইকে হত্যার কথা স্বীকার করে। গতকাল সে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। আদাবর থানার পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। এদিকে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় রোববার রাত সাড়ে ৮টার দিকে শিহাবের পিতা সিরাজুল ইসলাম আদাবর থানায় একটি মামলা করেছেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।

পুলিশের জানায়, শিহাব মাদকাসক্ত ছিল। প্রায়ই সে তার মা-বাবাসহ পরিবারের সদস্যদের মারধর করতো, নানাভাবে নির্যাতন করতো। তার অত্যাচারে পরিবারের সবাই অতিষ্ঠ ছিল। এ কারণেই বড় ভাইকে হত্যা করে ছোট ভাই সিফাত। এ হত্যাকাণ্ডে মায়ের ইন্ধন রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আদাবরে শেখেরটেকে নিজেদের বাসায় গত ১০ই জানুয়ারি গভীর রাতে গলা কেটে ও কুপিয়ে শিহাবকে হত্যা করা হয়। ৩ নম্বর সড়কের প্রমিনেন্ট হাউজিংয়ের ২৪/৩ নম্বর বাড়ির ওই ফ্ল্যাটের একটি কক্ষ থেকে শনিবার সন্ধ্যায় তার অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ওই রাতেই সিফাতকে আদাবর থানায় নেয় পুলিশ।

রাতভর জিজ্ঞাসাবাদে সে ভাই হত্যার কথা স্বীকার করে। এরপর রোববার তাকে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। গতকাল আদালতে নেয়া হলে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয় ছোট ভাই সিফাত। শিহাব ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের (আইইউবি) বিবিএর ছাত্র ছিলেন। এদিকে মামলার এজাহারে শিহাবের পিতা সিরাজুল ইসলাম উল্লেখ করেছেন, গত ১১ই জানুয়ারি বড় ছেলে শিহাবুল ইসলাম খান (২৩)কে বাসায় রেখে স্ত্রী শাহিন সুলতানা (৩৯), ছোট ছেলে সিফাতুল ইসলাম খান (১৭), মেয়ে সুমনা  খান (২৫)কে নিয়ে শ্বশুরবাড়ী মাদারীপুরের শিবচরের বেড়াতে যান। শ্বশুরবাড়িতে অবস্থানকালে একাধিকবার বড় ছেলে শিহাবুল ইসলামকে ফোন দেন। কিন্তু রিং হলেও কেউ রিসিভ করেনি। এরপর ১৩ই জানুয়ারি ৯টার দিকে বাসায় ফেরেন। আবারো ছেলেকে ফোন দেন এবং শিহাবের থাকার ঘরে নক করেন। এতে কোনো সাড়াশব্দ পাননি তারা। সিরাজুল ইসলাম এজাহারে আরো উল্লেখ করেন, তার ছেলের রুমে সচরাচর কেউ যেতে পারতো না। পরদিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রুমের তালা ভেঙে ছেলের গলাকাটা লাশ দেখতে পান। শিহাবের হাতের বিভিন্ন জায়গায় কাটা ছিল। পরে চিৎকার দিলে হাউজিংয়ের অন্য লোকজন এগিয়ে আসে। খবর পেয়ে ছেলের বন্ধুরা ছুটে আসে।

গতকাল নিহত শিহাবদের বাসায় গেলে পরিবারের কেউ কথা বলতে রাজি হননি। মধ্যবয়সী এক নারী জানিয়ে দেন তারা কারো সঙ্গে কথা বলতে চান না। এদিকে হাউজিংয়ের বাসিন্দাদের অনেকেই তাদের ব্যাপারে কথা বলতে আগ্রহ দেখাননি। তবে কেউ কেউ বলেন, তারা নিজেরাই একঘরে হয়ে থাকতো। পরিবারের কেউই  অন্য কারো সঙ্গে কথা বলতো না। হাউজিংয়ের নিরাপত্তাকর্মী বলেন, নিহত শিহাবকে চিনলেও তার সঙ্গে কখনো কথা হয়নি। নিজ থেকে কথা বলতে গেলেও এড়িয়ে চলতো। তবে মাঝেমধ্যে তার অনেক বন্ধু আসতো। তাদের চালচলনও সুবিধার ছিল না। হাউজিংয়ের এক বাসিন্দা জানান, তারা কারো বাসায় যেত না। কেউ তাদের বাসায় যাক এটাও চাইতো না। অসামাজিক আচরণের কারণে সবাই তাদের এড়িয়ে চলতো। ওই বাসিন্দা আরো জানান, পুলিশ তাদের ছেলের লাশ উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স আনতে বললে তারা ভাড়া দিতে অস্বীকৃতি জানান। বলেন, পুলিশের গাড়িতে করেই লাশ নিয়ে যেতে। পরে শিহাবের বন্ধুরা চাঁদা তুলে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার ব্যবস্থা করে। এছাড়া লাশ উদ্ধারের পর প্রথমদিকে পুলিশের সঙ্গেও তারা কথা বলতে চাননি। ওই ভবনের দোতলার একটি ফ্ল্যাটের কর্মচারী আবদুল খলিল জানান, এলাকার বাজে ছেলেদের সঙ্গে শিহাব মিশতো। মাদকাসক্ত হওয়ায় পরিবারের লোকজনও হতাশ ছিল।

তাদের নিজেদের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়াঝাটি হতো। হাউজিংয়ের আরেক বাসিন্দা মাসুদ হোসেন বলেন, পরিবারটি প্রায় ১০-১২ বছর ধরে এখানে বাস করে। কিন্তু কারো সঙ্গে তাদের সখ্য গড়ে ওঠেনি। তিনি বলেন, এখানে ২৪০টি পরিবার বাস করে। সবাই নিজেদের একই পরিবারের সদস্য মনে করে। তবে এই পরিবারটি ছিল ভিন্ন। তাদের এই নিঃসঙ্গ আচরণের কারণে অন্যরাও তাদের এড়িয়ে চলে। ফলে তারা কে কখন কী করে সেটা জানা মুশকিল। এছাড়া কারো সঙ্গে ন্যূনতম সৌজন্যবোধও দেখায় না। তবে তিনি বলেন, শিহাবের পিতা সিরাজুল ইসলাম খানকে ভালো মানুষ বলেই তিনি মনে করেন। মাঝেমধ্যে দেখা হলে তার সঙ্গে কথাও হয়। তিনি ছেলেমেয়েদের নিয়ে খুব হতাশ বলেও জানাতেন।

নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0067319869995117